• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০১৯, ০১:১৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৪, ২০১৯, ০১:২৯ পিএম

বিএনপি অফিসের ভেতরে-বাইরে মুখোমুখি ছাত্রদলের দুই গ্রুপ

বিএনপি অফিসের ভেতরে-বাইরে মুখোমুখি ছাত্রদলের দুই গ্রুপ


বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

সোমবার বেলা পৌনে ১২ টার পর থেকে কমিটির পক্ষের নেতাকর্মী ও বিলুপ্ত কমিটির বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিতে থাকে। এক পর্যায়ে নতুন কমিটির পক্ষের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর থেকে কার্যালয়ের মূল গেটের সামনে ও বাইরে অবস্থান জোরালো করে বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা। তারা কাউকে কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।

সরেজমিন দেখা যায়, নতুন কমিটির পক্ষের প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নিয়েছে। আর বাইরে বিদ্রোহীদের সংখ্যাও কয়েকশ’ হবে। তারা কাউকে বিএনপি কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।

বিদ্রোহীরা এ সময় ‘ফিরিয়ে দে অধিকার নইলে করো বহিষ্কার, দালালদের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও, জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো‘ এ রকম বিভিন্ন স্লোগানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুখরিত করে করে তোলে।

বয়সসীমা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলো সম্প্রতি মেয়াদ উত্তীর্ণ বিলুপ্ত কমিটির নেতাকর্মীরা। আন্দোলনের অংশে হিসেবে তারা গত কয়েকদিন ধরে বিএনপি কার্যালয়ের মূল গেটে তালা লাগানো, অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলো। এছাড়া ছাত্রদলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিএনপি কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থানরত দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব (দপ্তরের দায়িত্ব পালনকারী) রিজভী আহমেদকে কার্যালয় থেকে চলে যাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলো তারা।

শনিবার দুপুরে রিজভী আহমেদ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী পরিষদের বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দিতে চাইলে ছাত্রদলের বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা তাকে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা রিজভী আহমেদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ফলে আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে শনিবার রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১২ নেতাকে সংগঠনের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পদ থেকে বহিষ্কার করেন।

এরপর গতকাল রবিবার ছাত্রদলের বিগত কমিটিগুলোর সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকরা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনের নতুন কমিটি গঠনে কাউন্সিলের ঘোষণা দেন। আগামী ১৫ জুলাই ছাত্রদলের কাউন্সিল ও নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে বলে জানান ছাত্রদলের এক সময়ের সভাপতি বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। এ সময় তিনি ঘোষণা করেন অছাত্র ও বিবাহিতরা ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসতে পারবে না। তারা ভোটার ও কাউন্সিলের সদস্যও হতে পারবে না।

এ ঘোষণা ও বহিষ্কারের বিরুদ্ধে আজ সোমবার বিদ্রোহী গ্রুপ নয়াপল্টনে ফের অবস্থান নিয়েছে। তাদের এ অবস্থানের কারণে যেকোনো সময় দুই ভাগে বিভক্ত ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

এদিকে সরেজমিন আরও দেখা যায়, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ বয়সসীমা তুলে দিয়ে নিয়মিত কমিটির দাবিতে আন্দোলন করা বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাকর্মীরা শ্লোগান দিচ্ছে। প্রথমে হাজার খানেক নেতাকর্মী একটি মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসে। তারা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। এ সময় কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট তারা বন্ধ করে দেয়।

অন্যদিকে কার্যালয়ের ভেতরে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহানগর বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী অবস্থান করছেন। কার্যালয়ের আশপাশেও ছাত্রদল ও বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু করলে প্রতিহত করবে তারা। 

এদিকে, আন্দোলনকারীরা কার্যালয়ের গেট আটকানোর সময় দু'পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ভেতরে অবস্থানরত ও বাইরের আন্দোলনকারী ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে টানাহেঁচড়ার ঘটনা ঘটে।

পরে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তাকে বাধা দেন। এক পর্যায়ে মিলনের পাঞ্জাবী ধরে টান দেন তারা।

প্রসঙ্গত: আন্দোলনরতদের মধ্যে থেকে ১২ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তারা হলেন, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন,  ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, সাবেক সহ-সভাপতি ইকতিয়ার কবির, সাবেক সহ-সভাপতি জয়দেব জয়, সাবেক সহ-সভাপতি মামুন বিল্লাহ, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক বায়েজিদ আরেফিন, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক দবির উদ্দিন তুষার, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মালেক, সাবেক সদস্য আজীম পাটোয়ারী। 

টিএস/আরআই