• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০১৯, ০৬:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৪, ২০১৯, ০৭:০৩ পিএম

‘আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তি মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ’

‘আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তি মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ’
আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ছবি : পিএমও

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। কাজেই জনগণের অধিকার যারা কেড়ে নেয় তাদের প্রথম দৃষ্টি থাকে আওয়ামী লীগের ওপর। যে যখন ক্ষমতায় এসেছে, সবার আগে আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত হেনেছে। তিনি আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তি দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ। দায়িত্ববোধ রয়েছে বলেই বার বার আঘাত আসা সত্যেও এই দলটি টিকে আছে। বঞ্চনা থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করেছে। 

আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সোমবার (২৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত শুধু পাকিস্তান আমলে ছিল না, স্বাধীনতা পরও দলের ওপর আঘাত এসেছে। স্বাধীনতার পর ’৭৫-এ জাতির পিতার হত্যা থেকে শুরু করে যে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। আওয়ামী লীগের ইতিহাস যদি দেখি, অনেক নেতাকর্মীর আত্মত্যাগ রয়েছে। এ ছাড়া ভাঙা-গড়ার খেলা তো আছেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল যতবারই এই দল ষড়যন্ত্র করে ভেঙেছে, দল তত উজ্জ্বল হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের ওপর অতীতে নির্যাতন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, যে যখন ক্ষমতায় এসেছে, সবার আগে আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত হেনেছে। বেশি দূরে যেতে হবে না, ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলো, ক্ষমতায় তো তখন ছিল বিএনপি। সাধারণত আমরা দেখি যখন এমন মার্শাল ল’ আসে, ইমার্জেন্সি হয়, যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের দিকেই প্রথমে আঘাত আসার কথা। কিন্তু সবার আগে আঘাত এলো আওয়ামী লীগের ওপর। আমাকে প্রথমে দেশে আসতে দেবে না, আমি যখন জোর করে এলাম, তখন আমাকে আগে গ্রেফতার করা হলো। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। কাজেই জনগণের অধিকার যারা কেড়ে নেয়, একটা দৃষ্টি থাকে আওয়ামী লীগের ওপর। আর আওয়ামী লীগকে যত ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে, এই দলটা ততই শক্তিশালী হয়েছে। 

তিনি বলেন, বিএনপির দুঃশাসনে মানুষ অতিষ্ট ছিল বলেই ২০০৮ সালে তারা ক্ষমতা হারিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়, এ কথা প্রমাণিত সত্য। 

‘মুজিব আদর্শে আদর্শবান কর্মী হতে হবে’ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এমন নির্দেশনা দিয়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও এটাই মনে রাখতে হবে যে তাদের উত্তরসূরি যারা, অনেক আত্ন ত্যাগ করে গেছে। প্রত্যেকটা নেতাকর্মীদের জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। আমরা ছোটবেলায় শিখেছি, ‘সিম্পল লিভিং- হাই থিংকিং’। অর্থাৎ উচ্চমানের চিন্তা করবে, সাধারণ জীবন-যাপন করবে। 
   
আওয়ামী লীগকে বার বার নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের উপর বার বার আঘাত এসেছে। কারণ আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের মানুষের কথা বলেছে, জনগণের কথা বলেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বার বার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই শুরু হয় আওয়ামী লীগের ওপর নির্যাতন। আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, তাকে গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। দিনের পর দিন কারাগারের নির্যাতন তিনি সহ্য করতে পারেননি। জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ যদি আপনারা ভালো করে পড়েন তবে সেখানে দেখতে পাবেন কীভাবে শামসুল হক সাহেব মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি এসেছিলেন আমাদের বাসায়। এরপর একসময় তিনি চলে গেলেন, বহু বছর তার কোনো খবর পাইনি। পরে আমরা বের করেছিলাম তিনি নিজের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন। আমি দেখেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাকে কত ভালবাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন, বড় ভাইয়ের মতো সংগ্রাম করতেন। মাওলানা ভাসানী দল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সত্য, কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক সম্মান করতেন, সাথে সাথে চিঠি লিখতেন। চলে গেছেন ঠিকই কিন্তু তিনি তো ইতিহাসের একটা অংশ। 

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি সংগঠন, সেই সংগঠনটিকে সুসংগঠিত করার জন্য আজীবন কাজ করে গিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যখন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫৭ সালে কাগমারী কনফারেন্সের পর আওয়ামী লীগ ছেড়ে চলে গিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি নামে দল করলেন, এর পরপরই দেশে মার্শাল ল’ এলো। ’৫৭ সালে তিনি যখন দল ভেঙে চলে গেলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তখন মন্ত্রী ছিলেন, তিনি মন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে সারা বাংলাদেশে এই সংগঠনকে গড়ে তুললেন।’
        
তিনি বলেন, ’৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রথম ক্যাবিনেট মিটিং করেন তখন থেকে যতগুলো মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেগুলো সব আমি সংগ্রহ করে রেখেছি। আর যতগুলো আইন করা থেকে শুরু করে... একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য যে যে প্রতিষ্ঠান দরকার... সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, তৎকালীন ইপিআর থেকে বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) এবং প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো। কারণ পাকিস্তান আমলে কোনো বাঙালি উচ্চপদ পেত না।
  
শেখ হাসিনা তারা বক্তব্যের শুরুতে আওয়ামী লীগের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, জননেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকসহ দলের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের সকল নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।  

আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সাথে বাঙালি জাতির ইতিহাস অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাওলানা ভাসানী ও শামসুল হকের নেতৃত্বে যে সংগঠনটির শুরু হয়েছিল জেলখানায় বসে সেই সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। বাংলার মানুষ যারা একবেলা খেতেও পেত না, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত সেই মানুষগুলোকে একটা সুন্দর জীবন দিতে চেয়েছিলেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন- এটাই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য সামনে নিয়েই তিনি তার সংগ্রাম শুরু করেন। আর সেই সংগ্রাম আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষা করার। বাঙালি জাতি হিসেবে একটি স্বতন্ত্র জাতিস্বত্তা গোড়ে তোলার। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে।
       
সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুসতাসির মামুন, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্যাহ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত প্রমুখ।  
 
এর আগে বিকাল ৩টায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভা শুরু হয়।  সভার শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।  

সভার শুরুতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমি সবাইকে একুট চুপ থাকার অনুরোধ করছি। আজকে বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা আছে মনে আছে?  আমরা বিকাল ৫টার মধ্যে সভা শেষ করতে চাই। আর বক্তাদের বলব, বক্তব্য একটু সংক্ষিপ্ত করতে।   

এএইচএস/ এফসি