• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০১৯, ০৯:০০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৫, ২০১৯, ০৯:০০ এএম

জামায়াত, অলি ও ইব্রাহিম ছাড়াই ২০ দলীয় জোট বৈঠক

জামায়াত, অলি ও ইব্রাহিম ছাড়াই ২০ দলীয় জোট বৈঠক


জোট শরিক জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি ছাড়াই বৈঠক করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এছাড়া বিশদলীয় জোটের অন্যতম নেতা এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমও জোটের এ বৈঠকে যোগ দেননি।

সোমবার সন্ধ্যার পর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। চলে প্রায় রাত ৯ টার পর পর্যন্ত। 

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের কোনো সদস্য বৈঠকে অংশ নেননি। এছাড়া জোটের অন্য সব দলেরই প্রতিনিধি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে জানতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল হালিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপি যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সে বিষয়ে জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগরীতে বিএনপির কর্মসূচিতে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া বাজেটে যেসব ক্ষেত্রে ভ্যাট ও ট্যাক্স বৃদ্ধি করা (দ্বৈত কর) হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিলের দাবি করা হয়েছে বৈঠকে। একই সঙ্গে কুলাউড়া উপজেলায় রেল দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য শোক ও আহতদের জন্য সমবেদনা জানিয়ে সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয়েছে।

বিশদলীয় জোটের অন্যতম শরিক কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, জোটের রুটিন বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কিভাবে এসব কর্মসূচি সফল করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

আমিনুর বলেন, আমরা বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিশদলে ছিলাম, আছি, থাকব। বিএনপি জোটের প্রধান হিসেবে যে কর্মসূচি দেবে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তার পাশে থাকব।

জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা দৈনিক জাগরণকে বলেন, বৈঠকে জোট নেত্রীর (খালেদা জিয়া) মুক্তি আন্দোলনকে কিভাবে বেগবান করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় পর্যায়ে জোট নেত্রীর মুক্তি আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার জন্য শিগগিরিই কর্মসূচি নেয়া হবে। দ্রুততম সময়ে জোটের আগামী বৈঠকে এসব কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। 

এহসানুল হুদা আরও বলেন, বৈঠকে এবারের বাজেট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাজেটে সাধারণ জনগণের উপর ভ্যাট, ট্যাক্স বিশেষ করে দ্বৈত করের যে বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এসব দ্বৈত কর বাজেট থেকে বাদ দেয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।

বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে বিশদলীয় জোটের সমন্বয়কারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, জোট নেতা খালেদা জিয়ার দ্রুত মুক্তির লক্ষ্যে আগামী জুলাই মাসে ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগরে কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০ দলীয় জোট। এ বিষয়ে দ্রুততম সময়ে আগামী সভায় সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।   

নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনের নামে প্রহসন করে দেশের জনগণকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে যে সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাকে অনৈতিক অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে ২০ দল। জোটের বৈঠকে জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে। 

তিনি বলেন, সভায় সদ্য পেশকৃত জাতীয় বাজেটে জনগণের স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে তাদের ওপর আরও করের বোঝা চাপানোর তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এই বাজেটকে গরীবকে আরও গরীব এবং ধনীকে আরও ধনী বানানোর বাজেট বলে চিহ্নিত করে অবিলম্বে গণমানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাজেটের এমন সব প্রস্তাব বাতিল করার জোর দাবি জানানো হয়। 

এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতার আসার কথা ছিল। তবে যেকোনো কারণে হয়তো আসতে পারেনি। হয়তো কোনো কারণে তারা ব্যস্ত থাকতে পারে। 

কর্নেল অলি আহমদের সংবাদ সম্মেলন ও নতুন জোট গঠনের গুজবের বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, এলডিপির মহাসচিব গ্রামের বাড়িতে থাকায় আসতে পারেননি, তবে যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম উপস্থিত ছিলেন। আমাদের জোটের কোনো একটি দল তাদের পক্ষ থেকে জনগণকে কিছু বলতে চাইলে বলতে পারে। কি বলবেন, সেটা না শোনা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। 

এসময় এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম বলেন, এলডিপি ২০ দলীয় জোটে আছে, ছিল এবং থাকবে। এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।    

ঐক্যফ্রন্টের পরিসর বাড়ানো হলে সেখানে ২০ দলীয় জোটের কোনো দলকে নেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ঐক্যফ্রন্টের পরিসর বাড়ানো কমানোর বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। 

সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নব নির্বাচিত মহাসচিব জাফর উল্লাহ খান চৌধুরীকে স্বাগত জানানো হয় এবং কুলাউড়ায় রেল দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানান নজরুল ইসলাম।  

বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ওই আসনে বিএনপির জয়লাভ না করার কোনো কারণ নাই। ওখানে সব সময় বিএনপিই জয়ী হয়, এবারও জয়ী হয়েছে, এটাই ঠিক আছে। জয়ী না হলেই বরং অবাক করার ব্যাপার ছিল। 

এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে জোটের বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশ) আবদুর রকিব, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব জাফর উল্লাহ খান চৌধুরী লাহোরী, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাপের (একাংশ) চেয়ারম্যান এমএন শাওন সাদেকী, জাগপার মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম, পিপলস লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ন্যাপের (ভাসানী, একাংশ) আজহারুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (একাংশ) মহাসচিব নূর হোসাইন কাশেমী, অপর অংশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব  মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মনি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, এনডিপির কারী আবু তাহের, সাম্যবাদী দলের ডা. নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

টিএস/আরআই