• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০১৯, ০৯:১৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১০, ২০১৯, ০৯:১৯ পিএম

যেভাবে ঘাটাইলে ঘাঁটি গাড়েন রানা

যেভাবে ঘাটাইলে ঘাঁটি গাড়েন রানা
আমানুর রহমান খান রানা - ফাইল ছবি

শেষ পর্যন্ত টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ ও যুবলীগের দুই নেতা হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য।

আওয়ামী লীগ আমলেই দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে মুক্তি লাভের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে আবার সামনে এসেছে রানার সংসদ সদস্য হয়ে ওঠার সেই প্রেক্ষাপট। আলোচনায় আসছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হয়েও একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার সঙ্গে তার জড়িয়ে পড়া বা নিজ দলেরই স্থানীয় আরও দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে হত্যার সঙ্গে তার জড়িয়ে পড়ার প্রসঙ্গটি।

জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘাটাইলে নতুন মুখের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে শামসুর রহমান খানকে ডিঙিয়ে নৌকার টিকিট দেয়া হয় মতিউর রহমানকে। তখন সংসদ সদস্য নির্বাচিতও হন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল তাতে কমেনি, বরং বেড়েছে।

সংসদ সদস্যের মেয়াদ অর্ধেক পেরিয়ে যখন পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে তখন কোন্দল-বিরোধের তীব্রতাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগেই ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এমপি মতিউর রহমান মারা যান, যার ফলে প্রয়োজন হয়ে পড়ে উপনির্বাচনের।

তখনই সেখানে সদ্যপ্রয়াত সংসদ সদস্যের অনুসারীদের কাঁধে ভর করে ঘাটাইলের রাজনীতিতে ঘাঁটি গাড়েন রানা। ওই উপনির্বাচনে প্রয়াত এমপির পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা রানার পক্ষে অবস্থান নেন। তারা রানাকে নৌকার টিকিট পাইয়ে দেয়ার জন্য কেন্দ্রে নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে শেষ পর্যন্ত নৌকার মাঝি হন শহিদুল ইসলাম লেবু। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন রানা। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রানা আনারস প্রতীক নিয়ে নৌকাকে হারিয়ে বিজয়ী হন। তাতেই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ঘাটাইলের কোন্দল কতখানি, তা টের পায়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নৌকার টিকিট পেয়ে বিনা ভোটে এমপি হন রানা। এবার তিনি বিদ্রোহী এমপি নন, দলেরই এমপি। সুতরাং শুরু হয় প্রতিশোধের পালা।

যদিও বিদ্রোহী এমপি থাকাকালীন দুই হত্যা মামলায় সরকারদলীয় এমপি হওয়ার পরও কারাগারে থাকতে হয়েছে তাকে। মামলা দুটির একটি হচ্ছে- মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা, আর অন্যটি হচ্ছে দুই যুবলীগ নেতা হত্যা।

মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা : 
রানা বিদ্রোহী এমপি থাকাকালে ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটি টাঙ্গাইল মডেল থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ এ মামলা তদন্ত করে। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সরকারদলীয় এমপি রানা ও তার ৩ ভাইসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ২২ মাস পলাতক থাকার পর আওয়ামী লীগের তৎকালীন এমপি রানা গত ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এই আদালতেই আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন।

দুই যুবলীগ নেতা হত্যা : 
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা শামীম ও মামুন ২০১২ সালের ১৬ জুলাই বাড়ি থেকে টাঙ্গাইল শহরে এসে নিখোঁজ হন। ঘটনার পরদিন শামীমের মা আছিয়া খাতুন এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ২০১৩ সালের ৯ জুলাই নিখোঁজ মামুনের বাবা টাঙ্গাইল আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে তদন্ত করে পুলিশ ওই বছর ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটি তালিকাভুক্ত করে। এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া খন্দকার জাহিদ, শাহাদত হোসেন এবং হিরণ মিয়া আদালতে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে তারা বলেন, এমপি রানার নির্দেশে যুবলীগ নেতা শামীম ও মামুনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) জামিনে মুক্ত হয়েছেন রানা। সকাল ৯টার দিকে তিনি টাঙ্গাইল কারাগার থেকে মুক্তি পান।
এর আগে হাইকোর্ট যুবলীগের দুই নেতা হত্যা মামলায় সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি রানাকে স্থায়ী জামিন দেন। ১৯ জুন বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। মামলায় সাবেক এমপি রানাকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন ১ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি। পরবর্তী সময়ে এমপি রানাকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে সোমবার (৮ জুলাই) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে  আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায়ও হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন।

এমএ/ এফসি