• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০১৯, ০৯:২৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৭, ২০১৯, ০৯:২৯ পিএম

ডেঙ্গু ইস্যুতে লিফলেট ও বক্তব্য ব্রিফিংয়েই দায় সারছে বিএনপি!

ডেঙ্গু ইস্যুতে লিফলেট ও বক্তব্য ব্রিফিংয়েই দায় সারছে বিএনপি!

দেশে এডিস মশার কামড়ে সৃষ্ট ডেঙ্গু জ্বর ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্নস্থানে এ জ্বরে আক্রান্তদের মৃত্যু ঘটছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ও আতঙ্কিত রোগী নিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে হাসপাতালগুলোকে প্রচণ্ড চাপ সামলাতে হচ্ছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রাণঘাতী ইস্যুতে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে দাবি করা বিএনপি শুধু জনগণকে সচেতন করতে দলীয় কার্যালয়ে ব্রিফিং, প্রচারপত্র বিলি ও বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য দিয়েই দায় সারছে !

সমালোচকরা বলছেন, প্রত্যেকের নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব আছে। কিছু ক্রাইসিস আছে সরকার ইচ্ছা করলেই নিজেরা সব সমাধান করতে পারে না। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে  বিএনপির অনেক দায়িত্ব আছে। সারাদেশে তাদের লাখ লাখ কর্মী-সমর্থক। সরকার সারাদেশে স্কুল-কলেজগুলো পরিষ্কারের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের বলে দিয়েছে সব জায়গায় পরিষ্কার করতে। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী তারা কাজ করছে। তেমনি বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিতে পারত- তোমরা নিজ নিজ এলাকার হাট-বাজারকে টার্গেট করে কাজ করো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করো। তোমাদের নিজ নিজ বাড়ি পরিষ্কার করো। এতে কিন্তু দেশ যেমন ডেঙ্গুমুক্ত হত, তেমনি রাজনৈতিক দল হিসেবেও বিএনপি জনগণের আরও কাছে পৌঁছতে পারত। বিষয়টি একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির জন্য খুব কঠিন কাজ নয়। প্রয়োজন শুধু সদ্দিচ্ছার।

টিআইবির ড. ইফতেখারুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক দলেরই প্রধান কাজ হচ্ছে জনগণের পাশে দাঁড়ানো। বিএনপি তা করতে পেরেছে কি না তা এখন তাদেরই উপলব্ধি করতে হবে।

দেশে প্রায় মাসখানেক সময় ধরে ডেঙ্গু ইস্যু শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি এ বিষয়ে সরব হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও অন্য সিনিয়র নেতারাও ডেঙ্গু ইস্যুতে বক্তব্য রেখে চলেছেন। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও ডেঙ্গু ও বন্যা দুর্গতদের সহযোগিতায় কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ডেঙ্গু ইস্যুতে কথা বলে আসছেন। 

জানা যায়, রাজধানীতে ডেঙ্গু ইস্যুতে জনগণকে সচেতন করতে মহানগর বিএনপি জনসাধারণের মধ্যে প্রচারপত্র বিলি ও র‌্যালির কর্মসূচি পালন করছে। বুধবার (৭ আগস্ট) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ডেঙ্গু আক্রান্তদের পরামর্শ দিতে হট লাইন চালু করেছে বিএনপি। যে কেউ ০১৩০৬৮৫৯৬৬৪ নম্বরে কল করলে ডেঙ্গু বিষয়ে পরামর্শ জানতে পারবেন।

ডেঙ্গু ইস্যুতে বিএনপি ব্রিফিং, বক্তব্য ও প্রচারপত্র বিলি করে দায় সারছে- এমন সমালোচনার বিষয়ে দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান দৈনিক জাগরণকে বলেন, ডেঙ্গু ইস্যুতে আমাদের সকল কর্মকাণ্ড মোটিভেশনাল। আমরা তো সরকারে নেই। আমাদের যে কার্যক্রমে জনগণকে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বিষয়ে সচেতন করাই মূল লক্ষ্য। যেখানে যেখানে ডেঙ্গুর শঙ্কা আছে সেখানেই আমাদের কার্যক্রম চলছে। আমরা মনে করি এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ থেকে কীভাবে জনগণকে রক্ষা করা যায় এর জন্য সরকারকেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারি।

সামাজিক আন্দোলনের নেতা ‘মানবিক বাংলাদেশের আন্দোলন’ এর প্রধান সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম পথিক দৈনিক জাগরণকে বলেন, ডেঙ্গু ইস্যুতে বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল কার্যত জনগণের কাছে পৌঁছতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বিএনপি বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছে। ব্রিফিং করে এ বিষয়ে কথা বলছে। কিন্তু দলীয়ভাবে কোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি দেয়নি। দলটির নেতাদের সদিচ্ছা থাকলে তার এ ধরনের জনহিতকর কাজ নিয়ে জনগণের দোড়গোড়ায় যেতে পারত। এতে আখেরে বিএনপিরই লাভ হত। 

তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বলেন, ডেঙ্গু ইস্যুতে বিএনপি যথাযথভাবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। শুধু ডেঙ্গু নয় দেশ ও জনগণের পাশে সবসময় বিএনপি ছিল, আছে এবং থাকবে। আমরা প্রথমে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এরপর বন্যার ভয়াবহতার মধ্যেই দেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিএনপি ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্যও কাজ করে চলেছে। আমরা ঢাকা দুই সিটিতে ডেঙ্গু সচেতনতায় কাজ করছি। যদিও আমাদের এ কর্মকাণ্ডে সরকার বাধা সৃষ্টি করছে। তারপরও বাধা উপেক্ষা করে জনগণের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আমি নিজেও মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় নেতাকর্মীদের নিয়ে ডেঙ্গু সচেতনতায় জনসাধারণের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে প্রচারপত্র বিলি করেছি।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল দাবি করেন, নানা প্রতিবন্ধকতা ও সরকারের বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে ডেঙ্গু ইস্যুতে বিএনপি দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজের যথাযথ ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মানুষের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। সরকার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীরা সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তদের পাশে যেমন ছুটে যাচ্ছেন একইভাবে বন্যাকবলিত মানুষের পাশেও ছুটে যাচ্ছেন। আমরা বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা, ওয়ার্ডে বিশেষ করে মসজিদ ও স্কুলগুলোয় লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় আমরা রক্ত সংগ্রহ করছি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে অনলাইনে পরামর্শের ব্যবস্থা করেছি।  

ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী দৈনিক জাগরণকে বলেন, ডেঙ্গুর মতো ভয়াবহ আতংকের এ সময়ে বিএনপি হয়ত যতটা প্রয়োজন ততটা সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। বিএনপির তো কিছু ভুল আছেই। এটা স্বীকার করতে হবে। যে ভুলের খেসারত দলটিকে দিতে হচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে বিএনপি কিছুটা বেকায়দায়ও আছে। তারা কিছু বললেই সরকার প্রপাগান্ডা চালায় যে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র করছে। 
     
প্রবীণ এ শিক্ষাবিদ আরও বলেন, এ ধরনের ইস্যুতে বিরোধী দলের ভূমিকা রাখার সুযোগ খুব কম। সরকারের ভূমিকাই আসল। তারা সব কাজে যেমন ক্রেডিট নিতে চায়, তেমনি ডেঙ্গু ইস্যুতে এ ভয়াবহ ব্যর্থতার দায়ও সরকারকেই বহন করতে হবে। কারণ দেশের বর্তমান যে শাসন ব্যবস্থা এখানে কার্যত বিরোধীদলের এ ধরনের সামাজিক বা জনহিতকর কাজে ভূমিকা রাখা খুব সহজ নয়, এ কথাটিও মনে রাখতে হবে।  

টিএস/ এফসি

আরও পড়ুন