• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০১৯, ০৮:৫৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৩, ২০১৯, ০৯:৪৬ পিএম

চলে গেলেন কমরেড মোজাফফর আহমদ

চলে গেলেন কমরেড মোজাফফর আহমদ

মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) সভাপতি, এদেশের বাম আন্দোলন ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আর নেই। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টা ৪৯ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। তিনি স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দেশের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, দেশের প্রগতিশীল রাজনীতিতে তার অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের পরিবারের শোকাহত সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান ও বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। 

অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের জানাজার ব্যাপারে একমাত্র কন্যা আইভী আহমদ দৈনিক জাগরণকে জানান, শনিবার সকালে পরিবার ও দলের নেতারা বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ অনেকেই এখনও তার মৃত্যু সংবাদ পাননি। তাই  কখন কোথায় কী হবে তা শনিবার (২৪ আগস্ট) জানানো হবে। 

মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। 

ন্যাপ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন দৈনিক জাগরণকে জানান, গত ১৪ আগস্ট অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়।

অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯২২ সালে ১৪ এপ্রিল কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। মোজাফফর আহমদের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ১৯৩৭ সালে। ছাত্রাবস্থায় ব্রিটিশবিরোধী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৫২ সালে আজিমপুর সরকারি কলোনির একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি। তার এই ফ্ল্যাটটিই হয়ে উঠেছিল ভাষা আন্দোলনের হেডকোয়ার্টার। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ছেড়ে তিনি পুরোপুরিভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে দেবিদ্বার আসনে মুসলিম লীগের জাঁদরেল প্রার্থী মফিজউদ্দিনকে বিপুল ভোটে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৫৭ সালের এপ্রিলে পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। দলীয় নেতৃত্বের বিরোধিতা করে শেখ মুজিবুর রহমান মোজফফর আহমদের প্রস্তাবের পক্ষে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন এবং প্রস্তাবটি পাস হয়েছিল। 

১৯৫৭ সালের ২৭ জুলাই মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ গঠন প্রক্রিয়ায়ও একজন ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। ১৯৫৮ সালে আইয়ুবের সামরিক শাসন মোজাফফর আহমদের বিরুদ্ধে হুলিয়া, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। তিনি আত্মগোপনে থেকে আন্দোলনকে সংগঠিত করেন। ৮ বছর আত্মগোপনে থেকে ১৯৬৬ সালে আবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাপেরর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তাজউদ্দিন আহমেদ ৬ জন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদকে নিয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। যেখানে মাওলানা ভাসানী, মণি সিং, মনোরঞ্জন ধরের মতো রাজনীতিবিদরা ছিলেন। তাদের অন্যতম কমরেড মোজাফফর আহমেদ। স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। এসময় তিনি জাতিসংঘেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠনে তার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। এর নেতৃত্বও দিয়েছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। 

সরকার ২০১৫ সালে অন্যদের সাথে তাকেও স্বাধীনতা পদক দেয়ার ঘোষণা করলে তিনি তা সবিনয়ে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। তিনি নিজেকে কুঁড়েঘরের মোজাফফর বলে পরিচয় দিতে ভালবাসেন। তিনি জীবনে শেষদিনগুলোয় তিনি রাজধানীর বারিধারায় মেয়ের বাসায় জীবন-যাপন করতেন।

টিএস/ একেএস/ এফসি

আরও পড়ুন