• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০১৯, ০৮:৩২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৩১, ২০১৯, ০৮:৩৫ পিএম

আবারও নতুন নির্বাচনের দাবি মির্জা ফখরুলের

আবারও নতুন নির্বাচনের দাবি মির্জা ফখরুলের
স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -ছবি : জাগরণ

● জনগণের সংসদ ছাড়া রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান সম্ভব নয়

● জনগণের সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্কই নেই

● এক যুগের মধ্যেই ভারত খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যাবে

● বিচারব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছে সরকার

● সঙ্কট নিরসনে ১৯ দল এবং ঐক্যফ্রন্টকে একত্রিত হতে হবে

........................................................................,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেছেন, এই নির্বাচন দেশের মানুষ মানে না। নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অবিলম্বে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের সংসদ ছাড়া বর্তমান সরকার কোনোদিন রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান করতে পারবে না।

শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর আহমেদ হলে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলেছি এ ব্যাপারে (রোহিঙ্গা ইস্যু) একটা জাতীয় কনভেনশন ডাকা হোক। সবদলগুলোকে এক করে বাংলাদেশ যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একমত সেটাকে প্রকাশ করা হোক। না এটা তাদের ভাল লাগে না। তারা কখনও জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে একাই সব করতে পারবে। ১৯৭৫ সালেও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করেছে। আবারও তারা ওইদিকেই যেতে চায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এই সময় কাজী জাফর আহমেদের রাজনীতিবিদের খুব দরকার ছিল। তিনি রাজনীতি খুব ভাল বুঝতেন। সৃজনশীলতার মধ্যে তিনি অনেক নতুন কিছু চিন্তা করতে পারতেন। কৌশল, কর্মসূচি, সংগঠনের দিক থেকে তার মধ্যে সৃজনশীলতা ছিল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে আজকে সঙ্কটময় মুহূর্ত চলছে। দেশের ইতিহাসে এতো বড় সঙ্কট আর কখনও এসেছিল বলে আমার মনে হয় না। ৭১ সালে যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে যেসব অর্জন করেছিলাম তা সব ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এখন ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্রের যে কথা বলেন, একেবারেই মিথ্যা কথা বলেন। জনগণের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্কই নেই। একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

তিনি বলেন, শেয়ার মার্কেট ধ্বংস হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানেনই না ডেঙ্গুতে কত লোক মারা গেছে। মফস্বল শহরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে মনে হয়ে না এই দেশে সত্যিকার অর্থে কোনও সরকার আছে। ব্যাঙের ছাতার মতো মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড কি আমরা সবাই দেখি। এই সব লোকরা এখন আমাদের শিক্ষার গুরু হয়েছে। কথা শুনলে মনে হয় না, কোনও রকমের শিক্ষা সংস্কৃতি তাদের মধ্যে রয়েছে। প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একেবারে দলীয়করণ। বিচার ব্যবস্থাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রতিমুহূর্তে চেষ্টা করছে। এখন বাংলাদেশ একটা অকার্যকর রাষ্ট্রের দিকে চলে গেছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন এসেছে আমরা কি করবো? আমরা মানুষের মধ্যে আছি। আমরা কখনও পরাজিত হই না। দেশের মানুষের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির রাজনীতিও কখনও পরাজিত হয়নি। তবে হ্যা খারাপ সময় এসেছে। আমরা নিচের দিকে গেছি। সেখান থেকে আবার ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছি। আমরা আমাদের রাজনীতিকে সঠিক পথে যদি নিতে পারি। সমস্ত দেশপ্রেমিক দলগুলোকে যদি এক করতে পারি তাহলে বিজয় অবশ্যই আসবে।

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনাদের মধ্যে কোনও হতাশার ছাপ  দেখতে চাই নাই। আমরা হতাশ নই। আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাব। মাথানত করতে রাজি না। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে একতাবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ১৯ দল এবং ঐক্যফ্রন্টকে একত্রিত হতে হবে। আজকে সময় এসেছে, জামায়াত সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার। আর দেরি করাটা ভুল কাজ হবে। এটা জামায়াতের জন্যও ক্ষতিকর, দেশের রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর। এর একমাত্র বেনিফিশিয়ারি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল। এই জাতীয় দল যতদিন টিকে থাকবে ততদিন রাজনীতির গতিশীলতা আসবে না।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, কাজী জাফর নাই বলে বাংলাদেশের রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে? কাজী জাফরের শূন্যস্থানটা আমরা দিতে পারি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে। এই অবস্থায় মির্জা ফখরুলই সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি। বাংলাদেশে যে ভুয়া গণতন্ত্রের আড়ালে সামরিক সরকারের মতো যে স্বৈরাচারী সরকার আছে তাকে সরানো যাবে না। তবে মির্জা ফখরুলের করণীয় কয়েকটা কাজ আছে। তার হাতকে শক্তিশালী করা যেমন বিএনপির সকল নেতা-কর্মীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য, তেমনি তাকেও জিয়াউর রহমানের আদলে বলতে হবে ‘আই টেক কমাণ্ড’। আজকে তাকে পরিষ্কারভাবে বলতে হবে, ছাত্রদলে ২৫ বছরের ঊর্ধে কোনও নেতা থাকবে না। প্রেমিক থাকতে পারে, স্ত্রী থাকলে এসব দায়িত্বের মধ্যে তাকে যাওয়া চলবে না।

ডা. জাফরুল্লাহ আরও বলেন, ভারতকে পরিষ্কার করে বলে দেয়া দরকার। কাশ্মীর ও আসামে যা হচ্ছে সেটা অমানবিক আচরণ। অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে তুমি খালাস পাবে না। এক যুগের মধ্যেই ভারত খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যাবে। তাদেরকে সাবধান করে দেয়া দরকার, আমরা তোমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হাত লাগাতে চাই না। কিন্তু তুমি অমানবিক ব্যবহার করবা সেটা হতে পারে না। আমাদের সংবিধানে নৈতিক দায়িত্ব আছে, যে কোনও জাতি, যে কোনও অঞ্চল আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, ন্যায়ের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করবে তাকে সর্বত্রভাবে সমর্থন দেয়া।

স্মরণসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি (জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সভাপতি রিটা রহমান, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দীপুসহ আরও অনেকে। 

টিএস/এসএমএম

আরও পড়ুন