• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৯, ১০:৩৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৯, ১০:৩৮ এএম

অন্তঃকলহ দ্বিধা-বিভক্তে স্বকীয়তা হারাচ্ছে জাতীয় পার্টি  

অন্তঃকলহ দ্বিধা-বিভক্তে স্বকীয়তা হারাচ্ছে জাতীয় পার্টি  

এরশাদের জীবদ্দশায় ৫ বার দলটি ভাঙনের শিকার হয় এবং শেষ মুহূর্তেও চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে যান দলটির ভবিষ্যৎ। এরশাদের মৃত্যুর পর জাপার ভিতরে অন্তঃকলহ বেড়েছে। সবশেষে বৃস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) চেয়ারম্যান পদ নিয়ে আবারো দ্বিধা-বিভক্ত হয়েছে জাপা। আর এভাবে অন্তঃকলহে বার বার দ্বিধা বিভক্ত হয়ে দলের স্বকীয়তা হারাচ্ছে জাপা।

এরশাদের স্ত্রী ও জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান মানতে নারাজ। আবারো ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি। এরশাদের মৃত্যুর দেড় মাসের মধ্যে ৬ষ্ঠ বারের মতো ভাঙনের সুর বাজছে দলটির মধ্যে। অন্যদিকে, জিএম কাদের গঠনতন্ত্র অনুসারেই চেয়ারম্যান হয়েছেন বলে মনে করছেন তার অনুসারীরা।

পার্টির অবস্থাদৃষ্টে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যাওয়ায় তার ভাই জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা হলেও এবার এ পদে রওশন এরশাদের নাম ঘোষণা করেছেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। 

অভিযোগ রয়েছে, গত ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে এক দফা বিভক্ত হয়ে পড়ে জাতীয় পার্টি। ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়ে। বড় অংশটিসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ছিলেন এরশাদের পক্ষে আরেকটি অংশ অবস্থান নেয় এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের পক্ষে। এরপর থেকে জাতীয় পার্টি চলছে বলয় দুটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি।

ওই নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে অবস্থান নেন রওশন ও তার অনুসারীরা। নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নেয় এরশাদ ও তার অনুসারীরা। এরশাদকে ছেড়ে আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করেন এরশাদের দীর্ঘ সময়ের সহযোদ্ধা কাজী জাফর। এসময় দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে রওশনের সঙ্গে না পেরে এরশাদ কোণঠাসা হয়ে পড়েন। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। দশম জাতীয় নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভা সদস্যসহ সব ধরনের সুবিধা নেয় রওশনপন্থিরা।

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর রওশন এরশাদের প্রতি গভীরভাবে ক্ষুব্ধ হন এরশাদ। দলীয় নেতাকর্মীদের নিজের পক্ষে রাখতে বেশ কিছু পদক্ষে নেন তিনি। ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি রংপুরের এক কর্মী সম্মেলনে ছোট গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন এরশাদ।

এসময় এরশাদের অবর্তমানে জিএম কাদের জাপার হাল ধরবেন নেতাকর্মীদের জানান তিনি। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রওশন এরশাদ ও তৎকালীন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুপন্থিরা। এর পরদিন ১৯ জানুয়ারি সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশনের বাসায় প্রেসিডিয়াম সদস্যের একাংশ বৈঠকে বসেন।

বৈঠক শেষে জিয়াউদ্দিন বাবলু রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন। এসময় তিনি বলেন, গঠনতন্ত্রে কো-চেয়ারম্যান বলে কোনো পদ নেই। এটা গঠনতন্ত্রের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।

পার্টির গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা বলে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি (এরশাদ) কাউকে ঘোষণা দিতে পারেন না। তার এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকে উপস্থিত সব সদস্যের সম্মতিক্রমে রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এখন থেকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ চেয়ারম্যান ও জিএম কাদের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে অবৈধ। জিয়াউদ্দিন বাবলুর ঘোষণার কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে ওইদিনই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, যারা অবৈধভাবে প্রেসিডিয়াম সদস্যের সভা ডেকেছে তারা দলে থাকবে না। আমি দলের চেয়ারম্যান, আমি ছাড়া প্রেসিডিয়াম সভা আহ্বান করার কারো অধিকার নেই। এটা গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে। আমি জীবিত থাকা অবস্থায় কেউ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হতে পারবে না। রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা সম্পূর্ণ অবৈধ।

এদিকে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে প্রথম বড় ধরনের ভাঙন ধরে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বের হয়ে আলাদা জাতীয় পার্টি ঘোষণা করলে। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার গঠনের সময় জাতীয় পার্টি প্রথমে তাদের সমর্থন দিলেও পরে চারদলীয় জোটে চলে যায়। সেসময়ের যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এরশাদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টি নামে মঞ্জু নতুন দল গঠন করেন।

২০০১ সালের নির্বাচনের আগে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে আরেক দফা ভাঙন ধরে। নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টি নামে আরেকটি দল গঠন করে এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অংশ হয়ে নির্বাচনে যায়। বর্তমানে এই অংশের নেতৃত্বে আছেন আন্দালিব রহমান। এই অংশটির ভেতরও আরেকটি ভাঙন আছে। মন্ত্রিত্ব নিয়ে ঝামেলার একপর্যায়ে এম এ মতিন আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করেন। এক এগারোর সময়ও জাতীয় পার্টি দুটি অংশে বিভক্ত হয়েছিল, পরে অবশ্য এ দুটি অংশই এরশাদের নেতৃত্বে এক হয়ে যায়।

সর্বশেষ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে ভাঙন ধরান তার পুরোনো রাজনৈতিক সহকর্মী কাজী জাফর আহমেদ। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে কাজী জাফর এরশাদকে ছেড়ে আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করে যোগ দেন বিএনপি-জোটে। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দলের বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন জাতীয় পার্টির ঘোষণা দেন কাজী জাফর। একই সঙ্গে তিনি এরশাদকে বহিষ্কারেরও ঘোষণা দেন।

এইচ এম/টিএফ
 

আরও পড়ুন