• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯, ০৮:১৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯, ০৮:১৪ পিএম

ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী- ফাইল ছবি

পাহাড় পরিমান দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের এক যৌথসভায় এ প্রসঙ্গে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
  
উল্লেখ্য,২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। ৩১ জুলাই ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় এক বছর পর গত ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। 

শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ : 

জানা গেছে, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের কাছে ক্যাম্পাসের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকায় নিজের ভাগ হিসেবে ২ কোটি টাকা চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে। পরে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়। এতে বেশ ক্ষুদ্ধ হন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া সাভারে জমি কেনাবেচা চক্রের সঙ্গে গোলাম রাব্বানী জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে মাদক সেবনেরও অভিযোগ রয়েছে। তারা ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা সেবন করেন। বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে ছাত্রলীগের কার্যালয়ে ফেনসিডিলের অসংখ্য বোতল দেখে আওয়ামী লীগের এক নেতা ছবি তুলে তা প্রধানমন্ত্রীকে দেখান। কার্যালয়ে নিজের রুমে  বসে শোভন ফেনসিডিল খাচ্ছেন এমন ছবিও পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
শোভনের চাচাতো ভাই দাবি করা রাফির সঙ্গে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে সাতক্ষীরা জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়ার একটি অডিও গণমাধ্যমে ফাঁস করা হয়। সেই সঙ্গে তা ছড়িয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ আগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ছাত্রলীগের পদ দেয়ার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয় গণমাধ্যমে। ফোনালাপে ওই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ৪০ লাখেরও বেশি টাকা দিয়ে নেতা হয়েছেন বলে স্বীকার করেন। এই টাকা আগামী ৬ মাসে ডাবল হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।গত ঈদুল আজহার আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন নেতার সঙ্গে রাকিবের এই কথোপকথন হয় বলে জানা গেছে। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

গত ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ‘ভিআইপি লাউঞ্জে’ কয়েকশ কর্মী নিয়ে ঢুকে পরেন ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন। পরে বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ দলের বিভিন্ন স্তরের ব্যাপক আলোচনা হয়। একজন ছাত্রনেতা হিসেবে শোভন ‘ভিআইপি লাউঞ্জে’ ব্যবহার করতে পারেন কিনা? বিষয়টি নিয়েও সমালোচনার শিকার হন শোভন। 
   
এছাড়া গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর দুই নেতাকে নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশের পরও ছাত্রলীগ সভাপতি শোভনের বিরুদ্ধে এক সাংবাদিককে গাড়িতে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠে। গত মঙ্গলবার মধুর ক্যান্টিনের সামনে শোভনের অনুসারী ছাত্রলীগের দুই সহ-সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী জহির ও শাহরিয়ার কবির বিদ্যুৎ মারামারি করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত দৈনিক ইনকিলাবের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার নূর হোসেন ইমন মোবাইলফোনে ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় তাকে শোভন জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান বলে অভিযোগ উঠে। পরে বিষয়টি সমাধানে সাংবাদিক সমিতি নেতৃবৃন্দের কাছে ক্ষমা চান শোভন। কমিটি ভেঙে দেয়ার আলোচনার মধ্যেই ডাকসু সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ডাকসুর নিজ অফিস কক্ষে এয়ার কন্ডিশন (এসি) লাগানো বিতর্কে উঠে। 

এ ছাড়া ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে শিক্ষা ভবন, খাদ্য ভবন, গণপূর্ত, বিদ্যুৎ ভবনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর উন্নয়নে টেন্ডারবাজির। এর আগে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর থেকেই অভিযোগ ছিল মাদক সেবন, দুপুর পর্যন্ত ঘুমানো, মধুর ক্যান্টিনে সময় মত না যাওয়া, সংগঠনের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখার মত সাংগঠনিক শিষ্টাচার বহির্ভূত নানা অভিযোগ উঠে আসে। এছাড়া ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় বিতর্কিত, মাদক ব্যবসায়ী, রাজাকারের সন্তান, বিবাহিতদের নিয়ে কমিটি করায় সে সময় সংগঠনে মারামারির ঘটনা ঘটে। তাছাড়া বিভিন্ন অপরাধে জড়িতদের স্থান দেয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্কের মুখে পড়েন শীর্ষ নেতৃত্ব। যা তখন উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। যার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাদেরও ব্যাপক বিব্রত হতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে শুরু হয় লাগাতার আন্দোলন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৯৯ জনই বিতর্কিত-অযোগ্য দেখিয়ে তালিকা প্রকাশ করে সংগঠনেরই কিছু নেতাকর্মী। তাদের অভিযোগ, অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ত্যাগীদের অন্তর্ভুক্ত করে ছাত্রলীগের কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রায় পাঁচ মাস পার হলেও শোভন-রাব্বানী ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ ও বিতর্কের সমাধান করতে পারেনি। এছাড়া ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সময় বিতর্কিতেদের বাদ দিতে গত মে মাসে দীর্ঘদিন ধরে অনশনরতদের সঙ্গেও ফয়সালায় যেতে ব্যর্থ হয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপে বিষয়টির সমাধান হয়। গত পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসার্টে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরও তাদের ওপর ক্ষেপেছিলেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। কিন্তু সে সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান। 

এ ছাড়া ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার সাংগঠনিক ব্যর্থতার কথাও বলছেন ছাত্রলীগের নেতারা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী কমিটি দেয়ায় শোভন-রাব্বানীর প্রতি আলাদা নজর ছিল আওয়ামী লীগের সব মহলের। তারা ছাত্রলীগকে শেখ হাসিনার প্রত্যাশা অনুযায়ী ‘নতুন ধারায়’ ফিরিয়ে আনবেন এমন আশা ছিল সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। কিন্তু সংগঠনকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তারাই দায়ী। সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগ গত ১ বছরে ১১১টি জেলা ইউনিটের মধ্যে মাত্র ২টির কমিটি করতে পেরেছে। ছাত্রলীগ নোতারা বলছেন, বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নেতৃত্বে ভাগ না করে দেয়ায় তারা কোনো কাজ করতে সক্ষম হন নি। এছাড়া সম্মেলন হয়ে যাওয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের কমিটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ এই দুই নেতা। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জামায়াত-বিএনপি সংশ্লিষ্টদের পদায়ন করারও অভিযোগ রয়েছে। 
  
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার জন্য সকাল ১১টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে পৌঁছানোর পর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অনুষ্ঠানে গিয়ে পৌঁছান। এক অনুষ্ঠানের আয়োজক হয়েও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদকেও তারা বসিয়ে রাখেন। শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে  গত ৬ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে দিদার মাহমুদ আব্বাস নামের এক ছাত্রলীগ নেতাকে থাপ্পর মারেন সংগঠনের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। বিষয়টি তখন ব্শে বিতর্কের সৃষ্টি করে। 

এএইচএস/বিএস 
 

আরও পড়ুন