• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০১৯, ০৩:১২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৩, ২০১৯, ০৩:১২ পিএম

নেতৃত্ব নির্ধারণে ক্লিন ইমেজই আ.লীগে মাপকাঠি

নেতৃত্ব নির্ধারণে ক্লিন ইমেজই আ.লীগে মাপকাঠি
আওয়ামী লীগের লোগো

দলকে আরো জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী করতে দুর্নীতিবাজ ও অপকর্মকারীদের ‘ছেটে ফেলার’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের প্রতি এমন নির্দেশনাই দিয়েছেন। এই ‘ছেঁটে ফেলার’ প্রভাব আগামী ডিসেম্বরের জাতীয় সম্মেলনে দেখা যাবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। 

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দুর্নীতির গন্ধ রয়েছে এমন প্রভাবশালী নেতারাও ওই কাউন্সিলে পদ হারাতে পারেন। অন্যদিকে ক্লিন ইমেজের নেতারা চলে আসবেন ফ্রন্ট লাইনে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলে পুরো দলকে ঢেলে সাজাতে ‘ক্লিন ইমেজকে’ প্রধান মানদণ্ড করছে দলটির হাইকমান্ড।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত বৈঠক করেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বৈঠকে দলের ত্যাগী নেতাদের তৃণমূল থেকে তুলে নিয়ে আসার ব্যাপারে অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেন দলীয় প্রধান। 

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলে শুদ্ধি অভিযানের বিষয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেন। দলের নেতাদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য এই অভিযান চালাতে হবে। এই অভিযানে অভিযুক্তদের কেউ যেন শেল্টার (আশ্রয়) দেয়ার চেষ্টা না করে। পাশাপাশি দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে সব ধরনের সম্মেলনের মাধ্যমে হওয়া নতুন কমিটিগুলোতে যাতে অনুপ্রবেশকারী প্রবেশ করতে না পারে সেই দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে দলীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।   

প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। চলমান অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারও নাম উল্লেখ করে আলোচনা হয় নাই। তবে, চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আওয়ামী লীগের বিষয়ে দলটির সভাপতির নির্দেশনা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতারা আওয়ামী লীগের আগামী কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাবে। আওয়ামী লীগের সম চিন্তার নয় এমন কেউ যাতে দলের ভেতরে অনুপ্রবেশ করতে না পরে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে বলেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সংগঠনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে দলের মধ্যে থেকে যারা অপকর্ম করেছে তাদের ছেঁটে ফেলা হবে। জনগণের অভিযোগ আছে, এমন লোককে দলের নেতৃত্বস্থানীয় কোনো পদে বসানো হবে না। 

এর আগে বুধবার (০২ অক্টোবর) সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন,‘নেত্রীর সঙ্গে আলাপ করে যেটা বুঝেছি-ক্লিন ইমেজ, উজ্জ্বল ভাবমূর্তি যার রয়েছে তারাই নির্বাহী কমিটিতে স্থান পাবেন এবং ভালো পদে যাবেন। গুরুত্বপূর্ণ পদেও যাবেন। যাদের ক্লিন ইমেজ আছে, পারফরমেন্স ভালো তাদের অবশ্যই আপগ্রেডেশন হবেই’।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি’ আওয়ামী লীগের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ইশতেহারে ছিলো এবং টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনায় কম-বেশি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানেও থেকেছে দলটি। তবে টানা তিন দফায় ক্ষমতায় থাকার কারণে কিছু দুর্নীতিবাজ এর সুযোগ নিয়েছে, যার মধ্যে দলের ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীলদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশও জড়িয়ে পড়েছে। এসব দুর্নীতি তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগকে যেমন বিব্রত করছে, তেমনি উন্নয়ন অর্জনকেও ম্লান করছে। সেজন্য এবারের যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। এর ব্যাপকতা থাকবে দীর্ঘমেয়াদে। 

তারা জানান, আগামী কাউন্সিলে সবচেয়ে বড় চমকের দেখা মিলবে। দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে অনেক প্রভাবশালী নেতার নামের পাশেই লাল দাগ পড়ে গেছে। দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণের রিপোর্ট এরই মধ্যে দলের হাইকমান্ডের নজরে এসেছে। অর্থাৎ কাউন্সিলে অনেক হেভিওয়েট নেতারা পদ হারালে অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। আবার অনেক প্রতিশ্রুতিশীল নেতা উঠে আসবেন যাদের নামের পাশে ‘ক্লিন ইমেজ’ তকমা আছে।|

তৃণমূল কাউন্সিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন নেতারা জানিয়েছেন, দুর্নীতিবিরোধী এই অভিযানে শুধু কেন্দ্রীয় নেতারাই নন, এর আওতায় আসছে তৃণমূল পর্যায়ের  নেতারাও। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনের যে নির্দেশ রয়েছে,  তাতে ক্লিন ইমেজের নেতাদের তুলে আনা হবে।
                                                         
দলটির নেতারা মনে করছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের যে নীতি নিয়ে সরকার অভিযান চালাচ্ছে, সেটি সফলতার সঙ্গে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। কারণ এর মাধ্যমে সাধারণ জনগণের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এর মাধ্যমে দলের ভাবমুর্তি তো বটেই, সরকারের পক্ষেও জনসমর্থনও হু হু করে বাড়বে। 

এএইচএস/বিএস