• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০১৯, ০৯:০৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৪, ২০১৯, ০৯:০৬ পিএম

‘সরকার রাজি প্যারোলে, খালেদা জিয়ার না’

‘সরকার রাজি প্যারোলে, খালেদা জিয়ার না’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া-ফাইল ছবি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাভোগ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই তার মুক্তির বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও মূলত গেলো সপ্তাহ থেকে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়।

সম্প্রতি বিএনপি দলীয় ৭জন সংসদ সদস্য দুই ভাগে ভাগ হয়ে দুদিনে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারপর থেকেই খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি বিষয়টি আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে।

জানা গেছে, দলীয় প্রধানের মুক্তি প্রশ্নে আগের চেয়ে সরকারের হাই কমান্ড বেশ নমনীয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারের শর্ত হচ্ছে ‘দোষ স্বীকার’ করে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করতে হবে। অপরদিকে কোনোক্রমেই প্যারোলে মুক্তির পক্ষে নন স্বয়ং খালেদা জিয়া। তিনি স্পষ্টভাষায় দলীয় নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তির প্রচেষ্টা চালাতে। কোনোক্রমেই প্যারোল নয়। তিনি বলেছেন, জামিন পাওয়া তার অধিকার। তিনি নিজের মুক্তির জন্য কারও কাছে অনুকম্পা চান না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে তা জামিনযোগ্য। আইন তার নিজের পথে চললে খালেদা জিয়া স্বাভাবিকভাবেই জামিন পাবেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, জামিনে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইছি আমরা, প্যারোলে নয়। জামিন তার প্রাপ্য।

খালেদা জিয়ার মুক্তি আলোচনায় প্যারোলের চিন্তা-ভাবনার বিষয়টি অস্বীকার করে ফখরুল বলেন, বিএনপি প্যারোলের ব্যাপারে কিছুই বলে নি। গণমাধ্যমের একটি অংশ এ ব্যাপারে মিথ্যা খবর প্রচার করছে।

গেল মাসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে বলেন, আমরা আগেও বলেছি, খালেদা জিয়া প্যারোলের আবেদন করলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তা বিবেচনা করবে। তবে প্যারোল চাওয়ার যে গ্রাউন্ড সেটি খালেদা জিয়ার আছে কি- না তা বিবেচনা করা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, মুক্তির জন্য কারও কাছে মাথা নত করবেন না বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি এখন বাংলাদেশের ১৬-১৭ কোটি মানুষেরই নেতা। সুতরাং হয় তার মুক্তি আইনি প্রক্রিয়ায় হবে, আর তা না হলে জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে তার মুক্তি হবে। অন্য কোনও পথে তার মুক্তি হবে না। তার মুক্তি মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আবারও গণতন্ত্র, বিচার বিভাগ, আইনের শাসন ও  সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরে আসবে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আইন অনুযায়ী একজন দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদির মুক্তির বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ করতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, কোনও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করলে তিনি মুক্তি পেতে পারেন। এই দুটি পদ্ধতি ছাড়া মুক্তির আর কোনও পদ্ধতি আছে বলে আমার জানা নেই। 

বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন প্যারোলের বিষয়টি প্রত্যাখান করে বলেন, আল্লাহর নামে শপথ নিয়ে বলছি আর কোনদিন করুণা ভিক্ষা করবো না। আমরা অনেক দেখেছি। আমাদের ধৈর্যচ্যুতি হয়ে গেছে।

খন্দকার মাহবুব বলেন, সংবিধানে হাইকোর্টকে যে অধিকার দেয়া হয়ে়ছে সেখানে যদি আইনের শাসন না থাকে তাহলে সেই হাইকোর্ট থাকার অস্তিত্ব নাই। আমরা শপথ নিয়েছি, বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব।

সরকারের হস্তক্ষেপে জামিন না হওয়ার আশঙ্কা থেকে সম্প্রতি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি দলীয় ৭ সংসদ সদস্য দলীয় প্রধানের মুক্তির জন্য সরকার প্রধানের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছেন। তারা মানবিক কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে প্রধানমন্ত্রী কাছে এ আহ্বান জানান। 

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিএনপির সংসদীয় দলের প্রধান হারুনুর রশীদ অপর দুই সংসদ সদস্য সঙ্গে নিয়ে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উকিল আবদুস সাত্তার ও আমিনুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করে এ তিন সংসদ সদস্য জানান, জামিনে মুক্তি পেলে যত দ্রুত সম্ভব খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশেও যাবেন। পরদিন হারুণ সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বৈঠক করেন।

ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের পর হারুন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া মারাত্মক অসুস্থ। তিনি তিন-তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি জামিন পেতেই পারেন। জামিন না দেয়া হলে সেটা হবে অমানবিক।

তিনি বলেন, রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয় আবার সরকারের সঙ্গে সমঝোতাও হয়। খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি কেন জামিন পাবেন না।

দুই সংসদ সদস্যকে সাথে নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে হারুনের দেখা করার পরদিন বুধবার (২ অক্টোবর) দেখা করেন দলটির অপর চার সংসদ সদস্য। এ দলে নেতৃত্ব দেন বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত জি এম সিরাজ। এদিন সিরাজের সঙ্গে ছিলেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান জাহিদ, বগুড়া-৮ আসনের মোশাররফ হোসেন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।

দলীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করে জি এম সিরাজ বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

জিএম সিরাজ বলেন, আমরা ৭ জন সংসদ সদস্য রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতার কাছে বলতে চাই, আপনি নিজে একবার আসুন। আপনি দেখে যান, এই দেশের তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে। আমরা নিশ্চিত আপনি যদি বেগম খালেদা জিয়াকে দেখেন, তাহলে আপনার মনুষ্যবোধ জাগ্রত হবে। আপনার মায়া হবে। তিনি রাজনৈতিক বন্দি। তার জামিনের জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার। আপনি আমলাতান্ত্রিক পরামর্শ না নিয়ে রাজনৈতিক দূর-দর্শিতায় তার জামিনের ব্যবস্থা করে দিন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রায় দেড় বছর ধরে কারাবন্দি রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তার মুক্তি প্রশ্নে বিএনপি ও দেশের রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা, গুজব-গুঞ্জন ঘুরপাক খেতে থাকলেও এখনও পর্যন্ত তা কোনও সমাধানে আসে নি। আইনি প্রক্রিয়ায় দলীয় প্রধানের মুক্তিতে ব্যর্থ হয়ে এরইমধ্যে দলটি আন্দোলনের পথেও নেমেছে। তারই অংশ হিসেবে এরই মধ্যে তারা দেশের বেশ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন হিসেবে সমাবেশ, প্রতিটি জেলা-উপজেলায় মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।

টিএস/এসএমএম

আরও পড়ুন