• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০১৯, ০৭:১১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৯, ২০১৯, ০৭:২১ পিএম

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে শেখ হাসিনা

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে শেখ হাসিনা
গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ছবি : পিএমও

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে এবং স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কোনো চিন্তা তার সরকারের নেই। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং নষ্ট রাজনীতি প্রবর্তন করে সামরিক স্বৈরাচারীরা। এরা ক্ষমতা দখল করে মানুষের চরিত্রহরণ করেছে। ছাত্রদের লোভী করেছে, তাদেরকে ভোগ-বিলাসের পথ দেখিয়ে গেছে। এটাই হলো নষ্ট রাজনীতি। এই নষ্ট রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি প্রবর্তন করতেই তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তবে বুয়েট কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান যদি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে তবে এতে তিনি কোনো হস্তক্ষেপ করবেন না। 

বুধবার (৯ অক্টোবর) গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের নেতৃত্ব উঠে এসেছে ছাত্র রাজনীতি থেকেই। রাজনীতি একটি শিক্ষার ব্যাপার, ট্রেনিংয়ের ব্যাপার, জানার ব্যাপার। ছাত্র রাজনীতি থেকেই ধীরে ধীরে দেশসেবার মানসিকতা গড়ে ওঠে।  আমি নিজেই ছাত্র রাজনীতি করে এসেছি, ছাত্র রাজনীতি করেছি বলেই এ পর্যায়ে এসেছি। দেশের ভালো-মন্দের চিন্তা সেই ছাত্র রাজনীতির সময় থেকে আমার মাথায় আছে বলে দেশের জন্য কাজ করতে পারছি। আমি ছাত্র রাজনীতি ব্যান্ড করবো কেন! কিন্তু যারা উড়ে এসে ক্ষমতায় বসে, তারা আসে ক্ষমতাকে উপভোগ করতে। তাদের মাথায় তো দেশ নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা থাকে না। আমাদের দেশের সমস্যা হলো- বার বার এখানে ‘মিলিটারি রুলার’রা এসেছে, আর তারা এসেই মানুষের চরিত্রহরণ করে গেছে। ছাত্রদের লোভী করে গেছে, তাদেরকে ভোগ-বিলাসের পথ দেখিয়ে গেছে। এটাই হলো নষ্ট রাজনীতি। সেখান থেকে আমার ধীরে ধীরে সুষ্ঠু ধারায় ফিরিয়ে আনছি। 


 
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এখন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটা ঘটনা ঘটেছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ আছে। বুয়েট যদি মনে করে তারা ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করবে এটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি একেবারে ব্যান্ড করে দিতে হবে এটা তো মিলিটারি ডিক্টেটরদের কথা।  মিলিটারি ডিক্টেটররা সব সময় ছাত্র রাজনীতিসহ সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। এই যে ছেলেটাকে (বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ) হত্যা করল, এটা তো কোনো রাজনীতি না। বসুনিয়াকে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া) যে হত্যা করেছিল সেটা রাজনৈতিকভাবে। এ ঘটনায় (আবরার হত্যায়) রাজনীতিটা কোথায়? এর কারণটা কোথায়? এটা খুঁজে খুঁজে বের করতে হবে।’ ‘শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটা হল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সার্চ করা দরকার। খুঁজে খুঁজে দেখা হবে বলেও এ সময় জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের জন্ম আওয়ামী লীগের আগে। জাতির পিতা যখন ভাষা আন্দোলন শুরু করেন, তখন তিনি ছাত্র সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ছাত্রলীগ গঠনের পর ’৪৯ সালে আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। ছাত্রলীগ সব সময়ই একটা স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করত। 

তিনি বলেন, নষ্ট রাজনীতি শুরু করেছিল আইউব খান। আর স্বাধীন বাংলাদেশে শুরু করেছিল জিয়াউর রহমান। কারণ এই দুজনের ক্ষমতা দখলের চরিত্রটাও একই রকম।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্রে খুব স্পষ্ট করে লেখা আছে কোনো কোনো দল আমাদের সহযোগী সংগঠন। কিন্তু অঙ্গসংগঠন বলে কিছু নেই। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন না।

প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ১৯৮০ সালে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের হত্যা করা হয়েছিল। শওকত, ওয়ালিদ, শিকদার এবং মহসিন। তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। আর একটি ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিই- শফিকুল আলম প্রধানের কথা। তিনি ৭টা খুন করলেন। বিচারে তাকে শাস্তি দেয়া হলো। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেই শফিকুল আলম প্রধানকে কারাগার থেকে বের করে এনে রাজনীতি করার সুযোগ দিল। সে কিন্তু খালেদা জিয়ার ২০ দলীয় জোটের শরিক ছিল। 

তিনি বলেন, আমরা কিন্তু খুনীদের কখনও প্রশয় দিইনি। শফিকুল আলম প্রধান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটানি ছিল। তাকে ৭ খুনের কারণে মামলা দেয়া হয়েছিল। ছাত্রলীগ করা সত্ত্বেও তাকে আমরা শাস্তি দিয়েছিলাম। কিন্তু তাকে ছেড়ে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান।  

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১২ জন ছাত্রলীগের ছেলে, তাদের হত্যা করলো। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির ৮ জনকে গুলি করে হত্যা করল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, রংপুরে ছাত্রলীগের ছেলের কবজি কেটে নিয়ে গেল শিবির। এসময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কত জন মারা গেছে, সেটা বের করেন, ছাপান। 

উল্লেখ্য, বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের ভারত অর্থনৈতিক সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী গত ৩ থেকে ৬ অক্টোবর ৪ দিনের সফরে নয়াদিল্লি যান। সেখানে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশে তিনি ২২ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। 

এএইচএস/ এফসি

আরও পড়ুন