• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০১৯, ০৯:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৪, ২০১৯, ০৯:৫০ পিএম

সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ‘ক্লিন ইমেজ’ই হবে ‘নির্ণায়ক’

সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ‘ক্লিন ইমেজ’ই হবে ‘নির্ণায়ক’

স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলের কয়েকটি সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ এরইমধ্যে ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এর পর থেকেই ‘ক্লিন ইমেজ’ আগামী সম্মেলনে নেতৃত্বে আসার ‘নির্ণায়ক’ হবে- এমন কথা শোনা যাচ্ছে। 

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হতে যাচ্ছে প্রায় ৯ বছর পর। আর সংগঠনটির ঢাকা মহানগর কমিটির সম্মেলন হতে যাচ্ছে ১৩ বছর পর। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নেতৃত্বের পালাবদলের এই সম্মেলন ঘিরে এরইমধ্যে নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সংগঠনটির আগামী সম্মেলনে রয়েছে এক ডজনেরও বেশি পদপ্রত্যাশী। সংগঠনের পদ পেতে এরইমধ্যে মাঠে নেমেছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। এর সঙ্গে এক ঝাঁক সাবেক ছাত্রলীগ নেতাও সংগঠনের পদ পেতে মাঠে কাজ করছেন বলে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এবার যারা পদপ্রত্যাশী তাদের প্রত্যেকের কর্মকাণ্ড দলের আতস কাঁচের নিচে থাকবে। অর্থাৎ দুর্নাম আছে এমন নেতারা ছিটকে পড়বেন। সংগঠন সূত্রে এমনটা জানা গেছে। 

স্বেচ্ছাসেবক লীগ সূত্রে জানা গেছে, ‘ক্লিন ইমেজের’ নেতৃত্ব আসার মধ্য দিয়ে দলের মাঠপর্যায়ের ত্যাগী নেতারা দায়িত্ব পাবেন- এমন আশার সঞ্চার হয়েছে এই সহযোগী সংগঠনটির তৃণমূলেও। সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সকল স্তরে ত্যাগী নেতাদের দায়িত্বে আসার যে বার্তা দিয়েছেন তাতে উজ্জীবিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে এরইমধ্যে নিজেদের জানান দিচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। নেতাকর্মীদের কাছে যাচ্ছেন তারা। ক্লিন ইমেজের যারা দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের জন্য শ্রম-ঘাম দিয়েছেন তারাই সংগঠনের নেতৃত্বে আসুক- এমনটাই প্রত্যাশা সংগঠনটির নেতাকর্মীদেরও।  
  
আগামী সম্মেলনে সংগঠনটির পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের লড়াইয়ে অন্তত এক ডজনেরও বেশি নেতা পদ প্রত্যাশা করছেন। তারা নিজেরাও চান সংগঠনের নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব যে-ই পান, তিনি যেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আর সাংগঠনিকভাবে দক্ষ হন।

জানা গেছে, আগামী ১৬ নভেম্বর  বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ১১ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে এবং ১২ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন, বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।  

জানা গেছে, সম্মেলন উপলক্ষে আগামী ২৬ অক্টোবর একটি বর্ধিত সভা হবে। এ ছাড়া প্রস্তুতি কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার। সম্মেলনে প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন- সংগঠনের সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ এবং সদস্য সচিব যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু।  

সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীরা চান, ভবিষ্যতে যেন মেয়াদ শেষ হলেই নতুন সম্মেলন হয়। কারন হিসেবে তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হওয়ায় অনেক সম্ভবনাময় নেতৃত্ব যোগ্য পদ পায়নি। ফলে মাঠ রাজনীতি থেকে উঠে আসা অনেকে এত দিন রাজনীতিতে কোণঠাসা অবস্থায় ছিলেন। তবে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর তারা নিজেদের জানান দিতে শুরু করেছেন।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র বলছে, দুর্নীতির সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাদের নাম আসায় অঙ্গ-সংগঠনগুলোয় নতুন নেতৃত্ব আনার প্রক্রিয়া খুব বিচার-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে যাবে। তবে এবার দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা যে কড়া বার্তা দিয়েছেন সেই অনুসারেই হবে নেতৃত্ব নির্ধারণ। অন্য সহযোগী সংগঠনের মতো স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পদে যারা আসতে চান শিগগিরই তাদের বায়োডাটা জমা দিতে বলা হবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগর কমিটিতে পদের লড়াইয়ে আছেন সংগঠনটির বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ শাকিব বাদশা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জাসান রানা, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।   

স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগে নেতৃত্ব পাওয়ার প্রধান মানদণ্ড হোক ক্লিন ইমেজ, ত্যাগী মনোভব, সাংগঠনিক দক্ষতা। 

কামরুল হাসান রিপন বলেন, দলের দুঃসময়ে যারা জীবন বাজি রেখে দলের জন্য কাজ করেছেন, রাজপথে থেকেছেন, আন্দোলন করেছেন, সংগঠনকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রেখেছেন- তারা নেতৃত্ব আসুক। এতে সংগঠন যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতও শক্তিশালী হবে। 

তারিক সাঈদ বলেন, দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ায় আমাদের প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানাই। যারা দুঃসময়ে দলের পাশে থেকে কাজ করেছেন, রাজপথে থেকেছেন তারাই যেন নেতৃত্বে আসে- এই প্রত্যাশা আমার। 

আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোনো ধরনের চাঁদাবাজি, ক্যাসিনো ব্যবসাসহ খারাপ কিছুর সঙ্গে জড়িত নেই এমন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন পর্য়ায়ের দায়িত্ব পাক।

জানা গেছে, ২০১২ সালে ১১ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পান মোল্লা আবু কাওছার। আর সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেবনাথ। সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল ২০০৬ সালের ৩১ মে। সেই সম্মেলনে উত্তরের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মোবাশ্বের চৌধুরী আর সম্পাদক হয়েছিলেন ফরিদুর রহমান খান। আর স্বেচ্ছাসেবক লীগ দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন দেবাশীষ বিশ্বাস। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন আরিফুর রহমান টিটু। 

উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বর্তমানে আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী সংগঠন হচ্ছে এই স্বেচ্ছাসেবক লীগ।

এএইচএস/ এফসি

আরও পড়ুন