• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০১৯, ০৮:৫৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৮, ২০১৯, ০৮:৫৬ এএম

মেয়াদ শেষের ৯১ দিন আগেই হচ্ছে যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি!

মেয়াদ শেষের ৯১ দিন আগেই হচ্ছে যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি!

সংগঠনের গণতন্ত্র অনুযায়ী আর মাত্র ৯১ দিন পর মেয়াদোত্তীর্ণ হবে যুবদলের বর্তমান কমিটি। কিন্তু হঠাৎ করেই সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে শুরু হয়েছে তোড়জোড় ও আলোচনা। ভবিষ্যতে বিএনপি ও এর সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনে সম্মেলনকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হলেও মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র তিনমাস আগে সমঝোতার ভিত্তিতেই হতে যাচ্ছে যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির অন্যতম এ অঙ্গ সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিল নেতাকর্মীরা। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তদের ‘ধীরে চলো’ নীতি ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে অনেকটা অনীহা পদ-প্রত্যাশীদের সেই দাবিকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। এরমধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কমিটি না দেয়ার পক্ষে আরও ‘উছিলা’ হাতে পান। 

চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে কমিটি না দেয়ার পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাফাইয়ের পর নেতাকর্মীরাও তেমন জোরালো কোনো প্রতিবাদ জানাতে পারেনি। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানো উদ্যোগ নিলে যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রসঙ্গ সামনে আসে। সেই আলোকে চলতি বা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এ সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও মহানগর দক্ষিণের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির নেতারা হলেন- সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্ত্তাজুল করিম বাদরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। 

৯০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা ও গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানতে ব্যর্থ হন নেতারা। শুধু তাই নয়, বিগত দিনে সক্রিয় আন্দোলনে যুবদলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংগঠনের পদ-পদবিবিহীন নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে সারাদেশে যখন বিএনপির লাখো নেতাকর্মীর নামে অগণিত মামলা দায়ের হয়েছে, অনেককে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে থাকতে হচ্ছে, সেখানে যুবদলের শীর্ষ নেতা বিগত কয়েক বছরে একবারের জন্যও গ্রেফতার ও নতুন মামলা পর্যন্ত না হওয়া নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়েছে।

যুবদল সূত্র জানায়, কাউন্সিলের মাধ্যমে নাকি সমাঝোতার ভিত্তিতে- কমিটি গঠন হবে এই নিয়ে গত এক মাস ধরে সংগঠন এবং বিএনপির নেতাদের মধ্যে দেন-দরবার চলে আসছে। 

লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুবদল পুনর্গঠন নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার স্কাইপির মাধ্যমে মতবিনিময়ও করেছেন। সবশেষে বিভিন্ন যুক্তির পর তিনি আপাতত সমঝোতার ভিত্তিতেই যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।  

জানা গেছে, আগামী ২৭ অক্টোবর (রোববার) সংগঠনের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান। স্কাইপিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুবদলের নেতাদের সঙ্গে গত দুই সপ্তাহে একাধিকবার বৈঠক করেন তিনি। সর্বশেষ গত ৯ অক্টোবর (বুধবার) রাতে যুবদলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর নেতাদের সঙ্গে স্কাইপি বৈঠক করেন তারেক। বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে আগামী ২০ অক্টোবরের (রোববার) মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি। তবে এই পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি। এরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে যুবদলের নতুন নেতা নির্বাচন করার নির্দেশনাও দেন তারেক রহমান। এরপর কয়েক দফা বৈঠকে বসেন সংগঠনের নেতারা। নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি গঠনের খসড়া তালিকা তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। আগের কমিটি ছিল ২৭১ সদস্য বিশিষ্ট। এবারও তারা ২৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনে কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট পাঁচ নেতা। 

আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে  কমিটির খসড়া তালিকা লন্ডনে পাঠানো হবে বলে যুবদলের একাধিক নেতা দৈনিক জাগরণকে নিশ্চিত করেছেন।   

যুবদল কর্মীদের দাবি, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সক্রিয় কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি যুবদল। কিছু ঘরোয়া কর্মসূচিতেই মাঝে-মধ্যে নেতাকর্মীদের দেখা মেলে। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়া আগে মামলা হাজিরা দেয়ার সময় তার গাড়িবহর ঘিরে হাতেগোনা কয়েকজন নেতা উপস্থিত থেকে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছেন বিগত দিনগুলোয়।

তবে যুবদলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের দাবি, সারাদেশে যুবদলের ৮২টি রাজনৈতিক ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ৮০টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৬৩টি কমিটি এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। নানা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও যুবদল তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। 

যুবদলের পদ-প্রত্যাশী একাধিক নেতা দৈনিক জাগরণকে জানান, কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পর ফের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে স্কাইপির মাধ্যমে কথা বলবেন তারেক রহমান। সেদিন তিনি পরবর্তী করণীয় এবং সংগঠন পরিচালনায় দিক-নির্দেশনা দেবেন। কমিটি ঘোষণার পর বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিনিধি সম্মেলন করা হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ কতদিন হবে তিনি এখনও জানাননি। তবে স্বল্প সময়ের জন্য পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে। মূলত পদ-প্রত্যাশীদের পরিচয় নিয়ে সংগঠন থেকে বের হওয়ার একটি সন্মানজনক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই কমিটি পূর্ণাঙ্গকরণের দিকে এগোচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড।  

যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরব দৈনিক জাগরণকে বলেন, যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ আমরা শুরু করেছি। খুব শিগগিরই কমিটি গঠন করা হবে।

কমিটির মেয়াদই কতদিন হবে, জানতে চাইলে নিরব বলেন, আসলে কোনো টাইমফ্রেম দিয়ে তো আর রাজনীতি হয় না। আমরা চেষ্টা করছি সংগঠনে গতিশীল নেতৃত্ব দেয়ার জন্য। কতদিনের জন্য কমিটি গঠন করা হবে তা আগে থেকেই বলা যাবে না।

যুবদলের কমিটির মেয়াদ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছরের। সেই হিসাবে বর্তমান কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হতে আর বাকি আছে মোট ৯১ দিন।

যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু দৈনিক জাগরণকে বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন করা হবে এবং তা এ মাসের মধ্যেই। মেয়াদ শেষের মাত্র তিন মাস আগে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা প্রসঙ্গে টুকু বলেন, আসলে এখানে আমাদের কিছু করার নাই। বিএনপি থেকে যে নির্দেশনা আছে, সেইভাবে আমরা কাজ করছি। যুবদল এবং ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে বলেও জানান ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা টুকু।

যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্ত্তাজুল করিম বাদরু দৈনিক জাগরণকে বলেন, নানা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও আমরা সারাদেশে ৮২টি ইউনিটের মধ্যে ৮০টি কমিটি গঠন করেছি। এরমধ্যে ৬৩টি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীসহ বিভাগ ও উপজেলায় অনেক কমিটি দেয়া হয়েছে। কেউ যদি বলে- কমিটি ব্যর্থ হয়েছে, তাহলে এর কী জবাব দেব? সবাই দেখেন আমরা কী করেছি? যুবদল কোনো সক্রিয় আন্দোলনে ছিল না, ঘরোয়া কর্মসূচি পালন করেছে- এ অভিযোগও ঠিক নয় বলেও দাবি করেন বাদরু।

২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে তিন বছরের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। একইসঙ্গে যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের ৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি তিন বছরের জন্য অনুমোদন করেছেন খালেদা জিয়া।

টিএস/এসএমএম/ এফসি

আরও পড়ুন