• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০১৯, ১১:১৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৮, ২০১৯, ১২:৩৮ পিএম

অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগে অ্যাকশন শুরু

অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগে অ্যাকশন শুরু

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই দলটির ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগও শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। জানা গেছে, মঙ্গলবার পিরোজপুরের পৃথক দুটি ইউনিটের দুই ছাত্রলীগ নেতাকে অনুপ্রবেশের দায়ে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে, সংগঠনে কোনো প্রকার স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির দোসররা থাকতে পারবে না। 

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের কারণে বেশ বিপাকে পরে আওয়ামী লীগ ও সরকার। এমন ঘটনার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে ডেকে সংগঠনের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করার নির্দেশ দেন। যার অ্যাকশন শুরু করল সংগঠনটি।   

উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লেখক ভট্টাচার্য দায়িত্ব পাওয়ার পর একমাসের মধ্যে এই অভিযান শুরু করল সংগঠনটি। এরইমধ্যে এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।   

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগে কোনো অনুপ্রবেশকারীদের ঠাঁই হবে না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে সংগঠনের এদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক ঘটনা ঘটেছে যেসব ঘটনায় ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। পরে দেখা গেছে এসব ঘটনার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তারা কোনো না কোনো সময়ে অন্য সংগঠন থেকে ছাত্রলীগে এসেছে। এসব ‘সুসময়ের মাছি’দের বিতারিত করতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে এদের কারণে সংগঠনের ত্যাগী নেতারা কোণঠাসা হয়ে থাকছেন। এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার পিরোজপুরের দুটি ইউনিটের দুই ছাত্রলীগ নেতাকে অনুপ্রবেশের দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের একজন পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাতুল হাসান বাবু। আরেকজন একই জেলা ভাণ্ডারিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের ধাওয়া ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হাসান শোভন শিকদার। পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম টিটু এবং সাধারণ সম্পাদক অনিরুজ্জামান অনিক স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে অনুপ্রবেশের দায়ে দুজনকে স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে কেন্দ্রে চিঠি পাঠানো হয়েছে। 

রাতুল হাসান বাবুকে অব্যাহতির পত্র  - ছবি : জাগরণ

চিঠিতে বলা হয়েছে, জাহিদ হাসান শোভন শিকদারের নামে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় তাকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হল এবং তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করা হল। অন্যদিকে রাতুল হাসান বাবুকে অব্যাহিত দেয়ার কারণ হিসেবে ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়েছে।

জাহিদ হাসান শোভন শিকদারকে অব্যাহতির পত্র  - ছবি : জাগরণ

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম টিটু বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আমরা সংগঠনে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছি। যে দু’জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেজন্য তাদের অব্যাহতি দিয়ে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন্দ্র চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের চিঠি পেয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সংসদ। ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবিব বলেন, দুই এক দিনের মধ্যে তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের চিঠি দেয়া হবে।

অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহরিয়ার কবির বিদ্যুৎ বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে জামায়াত-বিএনপি পরিবারের যেসব সন্তানেরা ঘাপটি মেরে আছে তাদের হটাতে ছাত্রলীগ কাজ করছে। ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে, সংগঠনে কোনো প্রকার স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির দোসররা থাকতে পারবে না।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী কেউ পার পেতে পারবে না। এ বিষয়ে সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ হারানো সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ আরও এক কমিটি আগে যারা শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন তাদের সময়ে ছাত্রর্লীগের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

সূত্র বলছে, টানা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে অন্য সংগঠনের নেতাকর্মীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এই অনুপ্রবেশ হয়েছে কখনো নীরবে-অজান্তে, আবার কখনো আর্থিক সুবিধা নিয়ে পদ দিয়ে। এ নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভের প্রকাশ চলছিল দীর্ঘদিন। বারবার দাবি উঠেছিল, সংগঠনের অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বাদ দেয়ার। কিন্তু নেতৃত্ব বদল হলেও এই প্রক্রিয়া শুরু করেনি কেউ। সম্প্রতি বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যকাণ্ডের পর এই দাবি আবারো জোরালো হয়েছে। কারণ ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেরই ব্যাকগ্রাউন্ড বা পারিবারিক রাজনীতির সঙ্গে প্রতিপক্ষ দল বা সংগঠনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে। অবশেষে সংগঠন থেকে অনুপ্রবেশকারীদের সরাতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। 

ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, তবে অনুপ্রবেশকারীদের সরাতে গিয়ে যেন সংগঠনের মধ্যে কোনো ভিন্ন খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে সজাগ থাকবে ছাত্রলীগ। প্রত্যেকটি ইউনিটের সাংগঠনিক নেতারা, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সংগঠনে অনুপ্রবেশকারীদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে ছাত্রলীগ। দ্রুতই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সাংগাঠনিক ব্যবস্থা নেয়াহবে। 

উল্লেখ্য, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোয় অনুপ্রবেশকারীদের হটাতে জোরালো দাবি ওঠে। এই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে- আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা এমন বক্তব্য বেশ কিছু দিন ধরেই দিয়ে আসছিলেন। তবে ক্যাসিনো কাণ্ডে যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হওয়ার পরও দেখা গেছে তারা দলে অনুপ্রবেশকারী ছিলেন। এর মধ্যে যুবলীগ পরিচয় দেয়া জিকে শামীম বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ এবং যুবদলের সহ-সম্পাদক ছিলেন। যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ফ্রিডম পার্টির কর্মী ছিলেন। যুবলীগ দক্ষিণের সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি হন বিএনপি নেতা ক্যাসিনো ব্যবসায়ী আটক লোকমান হোসেন। লোকমান হোসেনের হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে আগমন ঘটে মমিনুল হক সাঈদের। কিন্তু বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মতিঝিল এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) তাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

এএইচএস/ এফসি

আরও পড়ুন