• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০১৯, ০১:৫১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৬, ২০১৯, ০৪:৩৩ পিএম

বিএনপির কাছে সার চেয়ে গুলি খেয়েছিল কৃষক : প্রধানমন্ত্রী

বিএনপির কাছে সার চেয়ে গুলি খেয়েছিল কৃষক : প্রধানমন্ত্রী
বক্তব্য রাখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -ছবি : বিটিভি ওয়ার্ল্ড থেকে নেয়া

● কৃষকদের বঞ্চনা থেকে মুক্ত করতে জাতির পিতা সংগ্রাম করেছেন

● কৃষি জমি নষ্ট করে শিল্প-কারখানা নয়

● দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে কৃষকরাই

● ১১ বছরে কৃষি ভতুর্কি ৬৫ হাজার কোটি টাকা

● প্রায় তিন কোটি কৃষককে কৃষি উপকরণ বিতরণ

....................

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির কাছে সার চেয়ে গুলি খেয়েছিল কৃষকরা। আওয়ামী ক্ষমতার আসার পর ব্যাপক কৃষি উন্নয়ন হয়েছে। দেশ হয়েছে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বব্যাংক কৃষকদের ভর্তুকি দিতে নিষেধ করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার তা স্বত্বেও ভর্তুকি বহাল রেখেছে।

তিনি বলেন, কৃষকের ক্ষতি হয় এমন শিল্পায়ন হবে না। উন্নয়ন প্রকল্প নেয়ার সময়েও কৃষকদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

বুধবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক লীগের ১০ম সম্মেলনের উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি জমি নষ্ট করে যত্রতত্র শিল্প-কারখানা করতে দেয়া হবে না বলে। আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। এর অর্থ হলো কৃষি জমি যেনো নষ্ট না হয়। যারা ইন্ডাস্ট্রি করতে চান, তাদের ওইসব অঞ্চলে প্লট দেয়া হবে। এছাড়া সব ধরনের সার্ভিস প্রদান করা হবে। তারা সেখানে শিল্প গড়ে তুলবে। আমাদের কৃষি জমি বাঁচাতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি আমরা উন্নত হবো, শিল্পায়ন করবো। তবে কৃষকদের বা কৃষিকে বাদ দিয়ে নয়। কাজেই আমরা উন্নয়নে কৃষকদের সব সময় গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। কৃষকরাই বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখে। কৃষক ফসল ফলায়, আমরা খেয়ে বেঁচে থাকি। একটি সমাজ ও দেশের জন্য কৃষক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে কৃষক ফসল ফলাতো, কিন্তু তার পেটে খাবার ছিল না। তাদের পরনের কাপড় ছিল না। কৃষকের অধিকার সংরক্ষণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কৃষক যেন তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ই-কৃষি চালু হয়েছে। কৃষকরা যে কোনও সমস্যার সমাধানে ‘১৬১২৩’ নম্বরে কল করে জানতে পারে। আমাদের কৃষকরাও এখন যথেষ্ট পরিপক্ব। মোট কথা কৃষকদের যত ধরনের সুবিধা দেয়ার কথা, আমরা তা দিচ্ছি।

কৃষকদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্তী শেখ হাসিনা বলেন, কৃষকদের কথা বিবেচনায় করে সারের দাম কমানো হয়েছে। কৃষকদের ১০ টাকায় অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগও করে দেয়া হয়েছে। ১১ বছরে দেয়া হয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা কৃষি ভতুর্কি। ২০০৮-০৯ বাজেটে কৃষিতে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে আমরা ২০১৯-২০ সালে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। কৃষিকে প্রণোদনাসহ দেয়া হয়েছে ১ হাজার ২৭ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে ৭৯ লাখ কৃষক উপকৃত হচ্ছেন। প্রায় তিন কোটি কৃষককে কৃষি উপকরণ দেয়া হয়েছে। বিনা জামানতে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করেছে আওয়ামী লীগ। 

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলেই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। যেদিন আমরা সেই ঘোষণা দিলাম, তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ও সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বললেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ঘোষণা ভালো না। এতে বিদেশি সহায়তা পাওয়া যাবে না। অন্য দেশের কাছ থেকে সারাজীবন কেনো হাত পাততে হবে? এই জন্য কি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, ৩০ লাখ শহীদ জীবন দিয়েছে। মোটেই না। আমরা তা হতে দেবো না। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। আমরা ভিক্ষুক জাতি হতে চাই না।

ফসল উৎপাদনে কোনও জমি যাতে অনাবাদি না থাকে সেই বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প’ আমরাই করেছি। কেউ বসে থাকবে না। যে যেভাবে উৎপাদন করতে চায় আমরা সেই সুযোগ করে দেবো। এক ফোঁটা জমিও অনাবাদি থাকবে না। অনেকে পড়াশোনা করার পর জমিতে যেতে চায় না। নিজেদের জমিতে ফসল ফলানো সবচেয়ে গর্বের। লেখাপড়া জানতে মাঠে যাবে না সেই চিন্তা থাকা উচিত নয়। এই বিষয়ে কৃষক লীগের ভূমিকা থাকা উচিত। এ সময় নিত্য-নতুন জাতের ফসল উৎপাদনে গবেষণার ওপর জোর দেন তিনি।

কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করতে চান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কৃষকরা তার উৎপাদিত ফসল সম্পর্কে জানতে পারে, পরামর্শ নিতে পারে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে কৃষকরা সবচেয়ে বঞ্চিত-শোষিত ছিল। এজন্য বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করতে চেয়েছিলেন। কৃষকদের বঞ্চনা থেকে মুক্ত করতে জাতির পিতা সংগ্রাম করেছেন।

সভায় বক্তব্য রাখেন সর্বভারতীয় কৃষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক অতুল কুমার অঞ্জন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার আমলে স্লোগান ঠিক করেছিলেন ‘কৃষক বাঁচাও দেশ বাঁচাও’। স্লোগানটি আজও সমকালীন। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু ঠিকই বলেছিলেন।

সম্মেলনে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের দফতর সম্পাদক নাজমুল ইসলাম। সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল হক রেজা। 

সম্মেলেনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপিসহ আরও অনেকে।

এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং কবুতর অবমুক্ত করার মধ্য দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর সেখানে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনে পরিবেশন করা হয় কৃষক লীগের ‘কৃষক বাঁচাও দেশ বাঁচাও’ থিম সং পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। 

এর আগে সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে বহনকারী গাড়ি বহরটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পৌঁছায়। সেখানে নেতা-কর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানান। 

সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নেতা-কর্মীদের পদচারণায় সকাল থেকেই মুখরিত।

সম্মেলেনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপিসহ আরও অনেকে।

এএইচএস/এসএমএম

আরও পড়ুন