• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০৮:২৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০৮:৩০ পিএম

পাগলা কুত্তা দিয়ে রাঙ্গার জিহবা খাওয়ানো উচিত, বললেন সাবেক ছাত্রনেতারা

পাগলা কুত্তা দিয়ে রাঙ্গার জিহবা খাওয়ানো উচিত, বললেন সাবেক ছাত্রনেতারা
জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গা - ছবি : টিভি থেকে নেয়া

পতিত স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর, ফেন্সিডিলখোর’ উল্লেখ করার বিরুদ্ধে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে। রাঙার এ বক্তব্যকে চরম ধৃষ্টতা দাবি করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের চালিকাশক্তি তৎকালীন ছাত্রনেতারা রাঙাকে রাজনীতি থেকে বহিষ্কারের দাবি করেছেন। একইসঙ্গে পতিত স্বৈরাচারের এসব দোসর যেন বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার না পায় সেজন্যও জনগণকে সোচ্চার হতে তারা আহ্বান জানিয়েছেন।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যর আহ্বায়ক জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ওই সময়ের সভাপতি আমান উল্লাহ আমান জাপা মহাসচিবের বক্তব্যকে অর্বাচীনসুলভ ও স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীর ধৃষ্টতা হিসেবে দেখছেন। বিদেশে অবস্থান করা ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) ও বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, দেশের গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করা নূর হোসেন সম্পর্কে ওই লোক এত বড় সাহস কোথায় পায়, জাতি তা জানতে চায়? রাঙ্গার এদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকারই নেই। নূর হোসেন সম্পর্কে এ ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার অপরাধে তার বিচার করতে হবে।   

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা তৎকালীন আওয়ামী ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব জাপা মহাসচিব রাঙ্গার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দৈনিক জাগরণকে বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আত্মোৎসর্গ করা একজন শহীদ নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেয়ার ধৃষ্টতা দেখানোয় ওই স্বৈরাচারের পা-চাটাকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা দরকার। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়া এরকম একজন শহীদ সম্পর্কে এ ধরনের ঘৃণ্য বক্তব্য দেয়ার অপরাধে রাঙ্গার জিহবাটা কেটে নিয়ে পাগলা কুত্তা দিয়ে খাওয়ানো দরকার। রাঙ্গার মতো নিকৃষ্ট লোক যেন বাংলাদেশে রাজনীতি করার সাহস না পায় সেদিকে দেশের জনগণেরও খেয়াল রাখা উচিত।
 
তিনি বলেন, নূর হোসেন সারা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। কাগজ ব্যবহার না করে নিজের বুক-পিঠকে কবিতার জমিন বানিয়ে যে গণতন্ত্রের কবিতা লেখা যায়, তা সারা দুনিয়াকে শিখিয়েছে নূর হোসেন। স্বৈরাচারের বন্দুকের নলের সামনে অকুতোভয় থেকে নিজের বুক পেতে দিয়েছে। নিশ্চিত মৃত্যুকেও পরোয়া করেনি। আর সেই সাহসী বীরকে নিয়ে কোথাকার কে রাঙ্গার এত নোংরা বক্তব্য দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ কখনও মেনে নিতে পারে না। মেনে নিতে পারে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জেল-জুলুম-হুলিয়া উপেক্ষা করে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রসমাজ।

‘দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্বৈরাচার’- রাঙ্গার এ বক্তব্যকেও ধৃষ্টতা হিসেবে দেখছেন হাবিব। তিনি বলেন, এই দুই নেত্রী স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। তাই তাদের সম্পর্কে রাঙ্গার মতো ইয়াবাখোর-মাদকখোর লোকদের স্বৈরাচার আখ্যায়িত করা মানায় না। বর্তমান সরকার নিজেদের স্বার্থে পতিত স্বৈরাচারের সঙ্গে আঁতাত করার কারণেই এসব স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীরা এ ধরনের বক্তব্য রাখার সাহস পায় বলেও মন্তব্য করেন হাবিবুর রহমান হাবিব। 

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে নূর হোসেনের প্রতিবাদ

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল দৈনিক জাগরণকে বলেন, নূর হোসেনের বিষয়ে জাপা মহাসচিব রাঙ্গা অত্যন্ত নিম্নমানের কথা বলেছে। এই লোকটিই ওই লাইনের (ইয়াবাখোর-মাদকখোর)। তাই সে ওসব বিষয়ে খোঁজ রাখে।
 
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক উকিল আরও বলেন, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় নূর হোসেন যুবলীগের নেতা ছিলেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য শহীদ হয়েছেন। 

’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা ও গণতান্ত্রিক ছাত্র লীগের তৎকালীন সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি বলেন, জাপা মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা শহীদ নূর হোসেন সম্পর্কে দেয়া বক্তব্য অনৈতিক ও শিষ্টাচার বহির্ভূত। সে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে প্রমাণ করলো তারা আসলেই স্বৈরাচারের রক্তের উত্তরাধিকারী। ১৯৮৭ সালে সামরিক শাসন বিরোধী অগ্নিগর্ভ উত্তাল রাজপথে শহীদ নূর হোসেন ছিলেন আগুনে তৈরি জীবন্ত পোস্টার। রাঙ্গা তখন রংপুরের কোন স্তরের নেতা তা ভেবে দেখতে হবে? তার জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান বর্তমানে ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মনি। 

রাঙ্গা যা বলেছিলেন : 
বঙ্গুবন্ধু গণতন্ত্রের জন্য অনেক কিছু করলেও তিনিই প্রথম গণতন্ত্রের বুকে শেষ পেরেকটি মেরেছিলেন বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যেদিন বাকশাল গঠন করেন, সেদিন তিনি কয়েকটি বাদে সব পত্রিকা বন্ধ করে দেন। সেদিনই আসলে গণতন্ত্রের বুকের শেষ পেরেক ঠুকে দেন তিনি। এসময় জাপা মহাসচিব স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ নূর হোসেনকে ইয়াবাখোর, ফেন্সিডিলখোর বলেও উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া যদি স্বৈরাচার হন, তাহলে শেখ হাসিনাও স্বৈরাচার। 

রোববার জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে ‘গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে  আলোচনা সভায় রাঙ্গা এসব কথা বলেন। ১৯৮৬ সালের পর থেকে দিবসটিকে গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করে আসছে জাতীয় পার্টি।

সভায় মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, গণতন্ত্র আজ নির্বাসনে সুন্দরবনে, যদি বিশ্বজিৎ ও আবরারকে হত্যা করা না হতো তাহলে বলতাম গণতন্ত্র রয়েছে। শিক্ষককে পানিতে ফেলে দেয়া হচ্ছে। জাবি ভিসির পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করছে ছাত্ররা। ইয়াবাখোর ফেনসিডিলখোর ছিলেন নূর হোসেন। তাকে নিয়ে নাচানাচি করছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি। তাদের কাছে ইয়াবা-ফেন্সিডিলখোর ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব বেশি। এরশাদ সাহেবের কাছে এরা কোনো গুরুত্ব পাননি। যারা গণতন্ত্রের গ-ও বুঝে না, অ্যাডিক্টেড একটি ছেলে নূর হোসেন। পুলিশ গুলি করলো সামনে থেকে আর ঘুরে গিয়ে পেছন থেকে লাগল। কী হাস্যকর যুক্তি। তখন তো একজন মারা গেছে, এখন প্রতিদিনই মানুষ মরছে।

তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ না, খালেদা জিয়া স্বৈরাচার। খালেদা স্বৈরাচার হলে শেখ হাসিনাও স্বৈরাচার। কারণ এখন প্রতিদিনই মানুষ গুম-খুন হচ্ছে। সর্বত্র মানুষের আহাজারি। একুশ বছর পর এরশাদের অনুগ্রহে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আর সেই আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগ বিএনপি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। ওদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না। এই গণতন্ত্র মুখে দেয় নাকি মাথায় দেয়। আগে গণতন্ত্র বুঝতে হবে বলেও মন্তব্য করেন জাপা মহাসিচব। 

টিএস/ এফসি

আরও পড়ুন