• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০৮:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০৮:৪৬ পিএম

নিজস্ব কৃতকর্মেই ভাগ্য নির্ণায়ক

স্বেচ্ছাসেবক লীগ উত্তরের সম্মেলন মঙ্গলবার 

স্বেচ্ছাসেবক লীগ উত্তরের সম্মেলন মঙ্গলবার 

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সম্মেলন আগামীকাল মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর)। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংগঠনটির সবাই ‘নিজস্ব কৃতকর্মেই’ তাদের নেতৃত্বের ‘ভাগ্য নির্ণায়ক’ করবে বলে জানায় আওয়ামী লীগ সূত্র। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির, ত্যাগী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা ওই কমিটিতে ঠাঁই পেতে যাচ্ছে বলেও জানা গেছে। ক্ষমতাসীন সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ সম্মেলন করা হবে।

২০০৬ সালের ৩১ মে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওসারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি হয়েছিল।

সম্প্রতি ক্যাসিনোকাণ্ডে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এছাড়া অন্য অভিযোগে বাদ দেয়া হয়েছে সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে। 

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। ১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বর্তমানে আওয়ামী লীগের অন‌্যতম সহযোগী সংগঠন এটি।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, মহানগর শাখার শীর্ষ নেতৃত্বে কারা আসছেন সেটি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যে নতুন মুখ আসবে এটা প্রায় নিশ্চিত।

ইতোমধ্যে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বে থেকে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন অনেক নেতারা। তাদের আমলনামা এরইমধ্যে কয়েকটি মাধ্যমে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে পৌঁছেছে। বিশেষ করে সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসাবে সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ দুই নেতাকে অব্যাহতি দেয়াকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার বড় বার্তা হিসেবেই দেখছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। সেক্ষেত্রে নেতাদের নিজস্ব কৃতকর্মই নেতৃত্বে নির্ণায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হবে। 

সোমবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের পার্টিতে দূষিত রক্ত আর চাই না। দূষিত রক্ত বের করে দিতে হবে। বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। কে কত প্রভাবশালী, তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমরা চাইবো ক্লিন ইমেজের কর্মীদের নেতা বানাতে। খারাপ লোকের কোনো দরকার নেই। এটি প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বার্তা। যা আমি সম্মেলনের কর্মী-নেতাদের কাছে দিয়ে গেলাম।  

এ সম্মেলনে ১৪ জন সভাপতি পদ ও ২৮ জন সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী রয়েছেন বলে সংগঠন সূত্রে জানা গেছে। তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরে এত পদ প্রত্যাশী থাকবে না বলে ধারণা করছেন নেতা-কর্মীরা। 

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনের অনেক নেতা ইতিমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে আছেন। কারণ ক্যাসিনোকাণ্ডে বাদ দেয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোল্লা আবু কাওসারের অনুসারী অনেকেই এবার উত্তর ও দক্ষিণের শীর্ষ পদগুলোতে আসতে আগ্রহী। 

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে। তার আগে সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন হলেও এর নেতৃত্বের ঘোষণা আসবে আগামী ১৬ নভেম্বর।    

সংগঠনের নেতৃত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা চাই কোনো অনুপ্রবেশকারী, কোনো সন্ত্রাসী কোনো চাঁদাবাজ, এরা যেন নেতৃত্বে না আসে। 

দলীয় সূত্র জানা গেছে, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর ঢাকা মহানগরীজুড়ে পদপ্রত্যাশী নেতারা পোস্টার, ফেস্টুনে প্রার্থিতা জানান দিয়ে বিভিন্ন মহলে দৌঁড়-ঝাপ শুরু করেছে। 

মঙ্গলবার ১২ নভেম্বর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে মহানগর উত্তরের সম্মেলনে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন- স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন হবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে।  

স্বেচ্ছাসেবক লীগ সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সম্মেলন হচ্ছে প্রায় ১৩ বছর পর। ২০০৬ সালের ৩১ মে ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঢাকা মহানগরকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে দুটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। উত্তরের সভাপতি নির্বাচিত হন মোবাশ্বের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হন ফরিদুর রহমান খান ইরান। ইরান এখন ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তখন দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হন দেবাশীষ বিশ্বাস। সাধারণ সম্পাদক হন আরিফুর রহমান টিটু।

আলোচনায় যারা

ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন- ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক,  সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান পান্না। 

এ কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন ধরে সম্মেলন পাই নি। অনেক দিন পর সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এ কারণে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আবেগ কাজ করছে।

তিনি বলেন, এবার ভিন্ন একটা প্রেক্ষাপটে সম্মেলন হতে যাচ্ছে। যারা রাজনীতির নামে অবৈধ পথে বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছে। তাদের বাদ দিয়ে আগামী দিনে যারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুদ্ধ রাজনীতি চর্চায় সাহসী ভূমিকা রাখবে তাদের আমরা নেতৃত্বে দেখতে চাই। এছাড়া আমরা চাই যাদের ১/১১ প্রেক্ষাপট ও বিরোধী দলের রাজনীতিতে সুষ্পষ্ট ভূমিকা ছিল এমন পরীক্ষিত, ত্যাগী ও স্বচ্ছ ইমেজের নেতৃত্ব আসবে। তাহলে বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে। 

ইসহাক মিয়া বলেন, ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালনের সময়ে পুরোটা সময়ে বিরোধীদলে কেটেছে। অর্থাৎ আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীকে কাছ থেকে দেখেছি। সুতরাং সেই সব দুঃসময়ের নেতাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পদের দায়িত্বে আশা করি।

এএইচএস/টিএফ

আরও পড়ুন