• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০৯:৩১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০৯:৩১ পিএম

শুল্ক সুবিধায় পাওয়া গাড়ি বিক্রির সুবিধা চান বিএনপির হারুন

শুল্ক সুবিধায় পাওয়া গাড়ি বিক্রির সুবিধা চান বিএনপির হারুন

এমপি হওয়ার পর শুল্কমুক্ত ব্যবস্থায় কেনা গাড়ি বিক্রি করে দেয়ার সুবিধা চেয়েছেন- এই অনিয়মে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দণ্ড পাওয়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ। সোমবার (১১ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে ওই সুবিধা চেয়েছেন তিনি।

বিএনপির এমপি হারুন বলেন, আমি সংসদ নেতাসহ স্পিকারের প্রতি অনুরোধ রাখব- ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে এমপিদের গাড়ি কেনার সুযোগটা দেয়ার পাশাপাশি ৫ বছর গাড়ি ব্যবহার করার পর গাড়িটা যেন বিক্রি করা যায়। তাহলে আমরা অন্তত মূলধনটা ফেরত পাব।

শুল্কমুক্ত গাড়ি নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করে দেয়ায় আদালত সম্প্রতি ৫ বছরের দণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। পাশাপাশি তাকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। শুল্কমুক্ত গাড়ি এনে তা বিক্রি করে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের দায়ের করা মামলায় তাকে এ সাজা দেয়া হয়। মামলায় আরও দুজনকে সাজা দেয়া হয়। তারা হলেন- ব্যবসায়ী এনায়েতুর রহমান ও গাড়ি ব্যবসায়ী ইশতিয়াক সাদেক। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে বিএনপির এমপি হারুন অর রশিদ আজ সংসদে শুল্কমুক্ত গাড়ি বিক্রির সুবিধা চাইলেন। 

সারাদেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অসাধারণ পদক্ষেপ নিচ্ছেন। সারাদেশে যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছেন এবং দেখা যাচ্ছে যে সেখানে আওয়ামী লীগেরই বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। ঠিক ওই রকম একটা মুহূর্তেই আমার নামে হঠাৎ করে আদালতে সাজা হলো এবং এটা এত ব্যাপকভাবে প্রচারিত হল, সারাদেশের মানুষের মধ্যে যে পারসেপশন তৈরি হলো যে বিএনপির এমপি বলেই হারুনকে সাজা দেয়া হয়েছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আলহামদুলিল্লাহ, উচ্চ আদালতে আমি আপিল করার সাথে সাথে অতি অল্প সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাই এবং সুপ্রিম কোর্টেও আমাকে জামিন মঞ্জুর রাখা হয়। 

তিনি বলেন, এমপিদেরকে ১৯৮৮ সাল থেকে শুল্কমুক্ত গাড়ি সুবিধা দেয়া হচ্ছে। একটি পত্রিকার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, পঞ্চম সংসদে ৩০১টি, সপ্তম সংসদে ১৭৬, অষ্টম সংসদে ৩৩১, নবম সংসদে ৩১৫টি শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করা হয়েছিল। 

তিনি বলেন, আমরা টাকা দিয়ে গাড়িটি আমদানি করি। ১৯৯৬ সালে আমি যখন প্রথম এমপি হই, তার আগে আমি গাড়ি ব্যবহারকারী ছিলাম না। আমার কোনো ব্যক্তিগত গাড়িও ছিল না। এমপিদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করার জন্য জাতীয় সংসদ মাননীয় সংসদ সদস্যদেরকে এই সুযোগটি দিয়েছেন। এটি নিয়ে পত্র-পত্রিকা মিডিয়ায় ঢালাওভবে লেখালেখি হয়। 

স্পিকারকে লক্ষ করে তিনি বলেন, ইউরোপ আমেরিকা উন্নত বিশ্বে ১ কোটি দেড় কোটি টাকা দিয়ে নগদ টাকা দিয়ে গাড়ি কেনা হয় না। তারা ব্যাংকের সুবিধা পায়। ডাউন পেমেন্ট দিয়ে গাড়ি ক্রয় করে। আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় সরকারি কর্মকর্তাদেরকে গাড়ি কেনার সুবিধা দেয়া হচ্ছে। সচিবরা গাড়ির অপব্যবহার করছে বলেও বিরাট খবর দেখলাম। 

তিনি বলেন, মাননীয় সংসদ নেতা রয়েছেন, তারা তো রিকশায় করে গণভবনে যাবেন না। জাতীয় সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তো রিকশায় করে যাবে না। সচিবালয়ে তো রিকশায় যাবে না। আমি অনুরোধ করবো ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে এমপিদের গাড়ি কেনার সুযোগটা দেন, তাহলে পাঁচ বছর একটা গাড়ি ব্যবহার করার পর গাড়িটা বিক্রি করলে অন্তত মূলধনটা সে ফেরত পাবে। 

তিনি বলেন, আমি যে বিষয়টি বলতে চাই। যখন রায়টি হলো আমার এলাকায় দেখলাম কিছু ব্যক্তি আনন্দ উৎসব করল, রাতে পিকনিক করল। সারাদেশের মানুষ কিন্তু আমার জন্য দোয়া করেছে। আমি জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের অনেকে আমার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি মনে করি এই বিষয়গুলো, আজকে আমার নামে সাজা হয়েছে সাথে সাথে এখানে দোষ এলো হারুন বিএনপির এমপি। আমি যখন আবার জামিনে মুক্তি পেলাম তখন আবার দেখি টেলিভিশনের টকশোতে বলছে হারুনকে প্রধানমন্ত্রী খুব ভালোবাসে- তাই ১০ দিনের মধ্যে জামিন দিয়ে দিল। অর্থাৎ আমি এই দিকেও করাতে কাটছি ওই দিকেও করাতে কাটছি। 

তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের কাছে গাড়ি আমদানি পরিপত্র আছে, আমি যদি গাড়ি সত্যিকার অর্থে হস্তান্তর করে থাকি তখন আমাকে সমুদয় শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু এখানে জরিমানা বা জেলের কোনো সুযোগ নাই। আমি আশা করি উচ্চ আদালত আমাকে এই বিষয়ে বিবেচনায় নিয়ে আসবেন। মাননীয় স্পিকার, আপনার কাছে আমি অনুরোধ করবো এমপিদেরকে যে সুযোগটি দেয়া হয়েছে, এমপিরা যেন গাড়ি কিনতে পারে, গাড়িটি ব্যবহার করতে পারে। এই বিষয়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করবেন এবং মাননীয় সংসদ নেতাও রয়েছেন। অপব্যবহার যেন না হয়, চার মাস আগে আমাকে গাড়ি কেনার পারমিশন দিয়েছেন। কিন্তু ব্যাংকে আমার ১ কোটি টাকা নাই। আমি অবৈধভাবে কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে কিনতে পারি। কিন্তু আমি সেই জায়গায় যাব না। আমি এজন্য আপনার কাছে আন্তরিক সহযোগিতা চাই।

এইচএস/ এফসি

আরও পড়ুন