• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০১৯, ০৬:২৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১২, ২০১৯, ০৬:৩৬ পিএম

বিএনপির সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ

ভাঙছে আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি!

ভাঙছে আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি!

স্বাধীনতার পর দেশের রাজনীতিতে প্রথম শক্তিশালী বিরোধী দলের তকমা পাওয়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) অনেক আগেই খণ্ডিত হতে হতে ব্র্যাকেটবন্দি হয়ে পড়েছে। একসময়ের শক্তিশালী এ রাজনৈতিক দলটি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলে সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে দেশের তরুণ ছাত্রসমাজের মধ্যে ব্যাপক আবেদন ও আলোড়ন তুলতে পেরেছিল। কিন্তু জাসদের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিল জাসদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই মূলত দলটি খুব দ্রুত খণ্ডাংশে পরিণত হতে থাকে। নেতৃত্বের দ্বন্দ্বই এই শক্তিশালী রাজনৈতিক দলটিকে বার বার ভাঙনের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমানে বহুধাবিভক্ত জাসদের প্রতিটি নামের পাশে ব্র্যাকেট দিয়ে চিহ্নিত হয়ে থাকে। এবার বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন করে রাজনৈতিক আদর্শ জলাঞ্জলি দেয়া ও বিভিন্ন অভিযোগে আবারও নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডিতে। এরই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক চার খলিফার এক খলিফা আ স ম রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) আবারও ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে। 

জেএসডির ভাঙনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমাদের দাবি তাদের ডাকা কাউন্সিলে মেনে না নিলে দল ভাঙতেও পারে। ভাঙাটাই স্বাভাবিক। 

আপনারা বিবৃতিতে ‘গত কয়েক মাস যাবত দলের একটি অংশ স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে আঁতাতকে গভীর থেকে গভীরতর করে চলছে’  বলেছেন। এই বাক্যের মাধ্যমে কি বিএনপিকে বুঝিয়েছেন- দৈনিক জাগরণের এমন জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত। তাদের সঙ্গে জোট গঠন বা সম্পর্ক উন্নয়নকে আমরা মেনে নিতে পারি না।’

দল ভাঙার মূল অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রতন বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দল চলবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গঠনতন্ত্র মেনে। সেখানে কোনো ব্যক্তিতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত থাকবে না। দল চলবে নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে।’ 

জেএসডি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সংগঠনটির নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন। কিন্তু সংগঠনে ব্যক্তি ও পরিবারতন্ত্র, কোটারিতন্ত্র ও রাজনৈতিক আদর্শের বিচ্যুতির অভিযোগে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরেই বিশেষ করে আগামীতে দলের নেতৃত্বকে কেন্দ্র করেই আ স ম আব্দুর রব ও আবদুল মালেক রতনের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে। এর কারণে এ ভাঙনের মুখে পড়েছে জেএসডি। রবের বিরদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলকে অবৈধ ঘোষণা করে রতনের নেতৃত্বে ১১ জানুয়ারি জাতীয় কনভেনশনও ডাকা হয়েছে এরইমধ্যে। 

জানা গেছে, দলের ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই মতভেদ চলছিল জেএসডিতে। আবদুল মালেক রতনের নেতৃত্বে একটি অংশ দলের গণতান্ত্রিকভাবে সব কিছু করার তাগিদও দেয়া হয়। তবে দলের কয়েকটি শীর্ষ পদ নিয়ে সরাসরি মতভেদের কারণে ভাঙন চূড়ান্ত পরিণতির দিকেই গড়াচ্ছে।  

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) গণমাধ্যমে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতনসহ দলের শীর্ষস্থানীয় ৮ নেতা এক বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তারা বলেন, জেএসডি ঘোষিত ২৮ ডিসেম্বরের কাউন্সিল-২০১৯ সম্পূর্ণ অবৈধ। গত ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে কোনো গঠনতন্ত্র উপস্থাপিত ও অনুমোদন হয়নি। জাতীয় পরিষদের সভা ডেকে পরবর্তীতে সব ঠিক করে নেয়া হবে বলার পর ৪ বছর পার করে দেয়া হয়েছে। অথচ আজও তা করা হয়নি। এর মধ্যে আগের গঠনতন্ত্রকেও লঙ্ঘন করে ৭ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়, যা অনুমোদিত নয় ও সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক। এ কমিটির মাধ্যমে গঠিত কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটি ও দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক এমপি এমএ গোফরানকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে বহিষ্কার ঘোষণা সবই অবৈধ। কাজেই এ কাউন্সিল অগণতান্ত্রিকভাবে ব্যক্তি বিশেষের অবৈধ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াস ছাড়া কিছুই নয়।
 
বিবৃতিতে বলা হয়, এভাবে চলতে থাকলে দ্বিতীয় রাজনৈতিক ধারার ভিত্তিতে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার দাবির রাজনীতির কবর হবে। অথচ আজ সর্বস্তরে জনগণের অংশিদারিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে রাজনীতি ও রাষ্ট্র প্রশাসন গড়ে তোলা সময়ের দাবি। গত কয়েক মাস যাবত দলের একটি অংশ স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে আঁতাতকে গভীর থেকে গভীরতর করে চলছে। তাই দেশে স্বাধীন দেশের উপযোগী রাজনীতি ও রাষ্ট্র প্রশাসন গড়ে তোলার আন্দোলনকে জোরদার করার লক্ষ্যে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠিত ও কনভেনশনে দলের গঠনতন্ত্র ঘোষণা পত্রসহ পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। দলকে ব্যক্তিতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, কোটারিতন্ত্র ও রাজনৈতিক বিচ্যুতি থেকে মুক্ত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে গণতন্ত্র চর্চা। 

বিবৃতিতে পাটির সাধারণ সম্পদক আবদুল মালেক রতনসহ দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি এমএ গোফরান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আতাউল করিম ফরুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক, সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়া খোন্দকারও দেলওয়ার হোসেন ও মোশারফ হোসেন এবং শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষর করেন।
 
তবে এ ব্যাপারে জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের সহধর্মিণী ও জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব জানান, দলের এমন মতভেদ খুব তাড়াতাড়ি মিটে যাবে। এ ধরনের বিরোধ এসময়ে কারও জন্য মঙ্গল নয়। তাই দল ভেঙে যাচ্ছে এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। আমরা আলাপ আলোচনা করছি, তাদেরকে পাল্টা সমঝোতার প্রস্তাবও দিয়েছি। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে। 

টিএস/ এফসি

আরও পড়ুন