• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০১৯, ০৭:৪২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৩, ২০১৯, ০৮:১০ পিএম

সংসদে দাঁড়িয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন রাঙ্গা

সংসদে দাঁড়িয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন রাঙ্গা
মশিউর রহমান রাঙ্গা - ফাইল ছবি

বিবৃতি দিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার ও নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর এবার জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাইলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। বুধবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২৭৪ বিধিতে দাঁড়িয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান তিনি।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহিদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর ও ফেনসিডিলখোর’ অভিহিত করে দেশব্যাপী প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন জাপা মহাসচিব রাঙ্গা। পরে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি ওই বক্তব্যের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন উল্লেখ করে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। নিজের বক্তব্য প্রত্যাহারও করেন তিনি বিবৃতিতে। তারপরও  জাতীয় সংসদে সরকারি দলসহ নিজ দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদেরও তীব্র সমালোচনায় তুলোধুনা হন রাঙ্গা। তবে সেদিন তিনি সংসদে উপস্থিত ছিলেন না।

আজ বুধবার সংসদ অধিবেশন শুরু হলে তাতে যোগ দেন মশিউর রহমান রাঙ্গা। পরে তিনি ২৭৪ বিধিতে স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, নূর হোসেনকে নিয়ে আমি যে কটূক্তি করেছি, তার জন্য বিবৃতি দিয়ে নূর হোসেনের পরিবারের কাছে আমি ক্ষমা চেয়েছি। আজ সংসদে দাঁড়িয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাই।

রাঙ্গা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও যদি নিজের অজান্তেই কোনো কটূ কথা বলে থাকি, সেজন্যও আপনাদের সবার কাছে কাছে ক্ষমা চাই।

রাঙ্গা বলেন, জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ একটি গণতন্ত্র দিবস পালন নিয়ে আমাদের একটা সংক্ষিপ্ত পরিসরে অনুষ্ঠান ছিল। একই দিনে নূর হোসেনের দিবস নিয়ে একটি আলোচনা ছিল। পুরাতন ঢাকা থেকে আমাদের কিছু লোক আসার সময় নূর হোসেন চত্বরে তাদেরকে গালাগালি করা হয়। বলা হয়- এরশাদের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে। এই সব কিছু কথাবার্তা শোনার পর আমাদের অফিসে এসে তারা আমাদের বলেন। আমি দলের মহাসচিব হিসেবে তাদেরকে শান্ত থাকতে বলি।

তার এ বক্তব্যের সময় সংসদে উপস্থিত অনেক এমপি হৈ-হুল্লোড় করতে থাকেন। উত্তেজিত এমপিদের উদ্দেশে রাঙ্গা বলেন, কোনো মন্তব্য করার আগে আমারটা শুনুন।

এসময় সংসদের সভাপতিত্বে থাকা স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য আপনি বলতে থাকুন, আপনি বলুন।

এরপর রাঙ্গা বলেন, আমাদের সাবেক সিনিয়র মন্ত্রী মহোদয় সংসদে এই নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমার স্থানীয় সরকারের সাবেক সিনিয়র মন্ত্রীও আলোচনা করেছেন মঙ্গলবার সংসদে। আমি মনে করি তারা আমাকে শাসন করেছেন। আমি এটা ভুল করেছি এবং ভুল করার জন্য আমি তার (নূর হোসেন) পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। এমনকী বিবৃতিও দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমি মন্ত্রী থাকা অবস্থায় সংসদে ৩৭ বার প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। সেসময় অসংখ্যবার আমি জাতির পিতাকে নিয়ে কথা বলেছি। এসময় জয় বাংলা বলেছি। তাই জাতির পিতা নিয়ে আমার যদি কোনো রকমের ভুল করে থাকি তার জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি, নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি।

তিনি বলেন, মাননীয় স্পিকার আমরা মহাজোটের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করেছি ২০১৪ সালে। আমি মন্ত্রী থাকা অবস্থায় সারা দিনরাত পরিবহন সেক্টর সচল রাখার জন্য কাজ করেছি। আমি প্রধানমন্ত্রীকে দুর্নীতিবাজ বা সন্ত্রাসবাদ বলিনি। আমি বলেছি এই সময়ে বিশ্বজিৎ হত্যা হয়েছে। তারও বিচার হয়েছে। আমি যেটা বলেছি তা হলো, ১৯৯০ সালে পর যখন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসলেন তখন কৃষকদের হত্যা করা হয়েছিল। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছিল সেসময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা হত্যার জন্য। বিদেশ থেকে সেই সময় অস্ত্র নিয়ে আসা হয়েছিল বাংলাদেশে। এই কথাগুলো কিন্তু আমি বলেছি। এর রেকর্ড রয়েছে। এরপরও আমি নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাচ্ছি। যদি আমি কোনো ভুল করে থাকি অবশ্যই আমি তাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। সংসদে আমার কলিগ আছেন তারাও এটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।  তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, হয়তো আমার দল ক্ষমতায় আসলেও আমি মন্ত্রী হতে পারতাম না। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মন্ত্রী করেছেন। তিনি আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। আমি মনে করি সেই সম্পর্ক উনার সঙ্গে আমার থাকবে। আমি এখানে কাউকে কটাক্ষ করে কিছু বলতে চাই না। সমস্ত দোষ আমার ঘাড়ে নিচ্ছি। আমার হয়তো ভুল-ত্রুটি হতে পারে। আমি তিন দিন যাবত জ্বরে ভুগছি। তাই দুদিন আমি সংসদে আসতে পারিনি। আমি কালকে সংসদে এলে আমি কালকেই জবাব দিতে পারতাম। তারপরও আমি বিশ্বাস করি, নূর হোসেন মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা গুলি করি কিংবা এরশাদ সাহেব গুলি করে মারুক কিংবা না মারুক, এটা তো- সত্য তিনি মারা গেছেন। আমি তার পরিবারের কাছে পত্র দিয়ে ক্ষমা চেয়েছি। সুতরাং আমি মনে করি, এখনকার মাননীয় মন্ত্রী-এমপিরা আমার কোনো ভুল-ত্রুটি হলে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।

এইচএস/ এফসি

আরও পড়ুন