• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০১৯, ১০:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২২, ২০১৯, ১০:৩৪ পিএম

যুবলীগের সম্মেলন শনিবার

ক্যাসিনোকাণ্ডে তছনছ যুবলীগের চেয়ারম্যান হচ্ছেন পরশ!

ক্যাসিনোকাণ্ডে তছনছ যুবলীগের চেয়ারম্যান হচ্ছেন পরশ!
শেখ ফজলে শামস পরশ

সরকারের মেগা প্রজেক্ট পদ্মা সেতুর আদলে গড়ে তোলা হয়েছে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ। বেলা ১১টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

.....................

রাত পোহালেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ৭ম জাতীয় কংগ্রেস।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা ১১টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়াদী উদ্যানে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত থাকবেন। সভাপতিত্ব করবেন যুবলীগ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি চয়ন ইসলাম।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন বসবে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। সেখানেই যুবলীগের নতুন চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে।  

সম্মেলনকে ঘিরে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ক্যাসিনোকাণ্ডের কারণে সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে যুবলীগের। তাই ক্লিন ইমেজের নেতৃত্বের মাধ্যমে সংগঠনকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে দল কাজ করে যাচ্ছে।

কংগ্রেসকে ঘিরে জনমনেও তৈরি হয়েছে নানা আগ্রহ। কে হচ্ছেন যুবলীগের পরবর্তী চেয়ারম্যান-সাধারণ সম্পাদক— এই প্রশ্ন বেশ জোরে-শোরে দেখা দিয়ে জনমনে। তবে এর এর উত্তর জানতে হলে আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।

যদিও এরই মধ্যে যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির উত্তরাধিকার শেখ ফজলে শামস পরশের নাম বেশ জোরে-শোরেই আলোচনা হচ্ছে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এই পরশের ওপরই আস্থা রাখতে চাইছেন।তিনিই যুবলীগের সভাপতি হচ্ছেন বলে এমনটাই দাবি করেছে দলীয় বিভিন্ন সূত্র। 

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃত্বদানকারী বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় রয়েছে।       

যুবলীগ নেতারা বলছেন, এবারের কংগ্রেস হচ্ছে বৈরি এক পরিবেশে। ক্যাসিনোকাণ্ডে  বিব্রত যুবলীগের হাই কমান্ড। তাই সংগঠনটিকে নেতিবাচক ধারা থেকে বের করে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে স্বয়ং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই একদিকে চলছে শুদ্ধি অভিযান অন্যদিকে নতুন নেতৃত্বের খোঁজ।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসের প্রস্তুতি পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে যুবলীগের পুর্বনির্ধারিত বয়সসীমা ৫৫ বছরই বহাল থাকছে। সম্মেলনের মাধ্যমে যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব ঠিক করবেন দলটির কাউন্সিলররাই। নেত্রীর সাথে আলোচনা করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, যেসব নেতার বিরুদ্ধে ক্যাসিনোকাণ্ডসহ নানা রকম অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে সম্মেলনে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না। 

জানা গেছে, সংগঠনের হাল ধরতে বিশ্বস্ত কাউকে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আনতে চান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। সে হিসাবে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছোট ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপসকে প্রথমে চেয়ারম্যান করার কথা কথা উঠলেও- তিনি বর্তমানে সরকারের সংসদ সদস্য এবং বিভিন্ন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন বলে তার বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশকে যুবলীগের নেতৃত্বে আনা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দেখা গেছে, তার আসার সম্ভাবনা বেশি।

সূত্র জানায়, শেখ ফজলে শামস পরশকে যুবলীগের নেতৃত্বের বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড। প্রথমে তিনি রাজি না হলেও পরবর্তীতে তিনি রাজি হয়েছেন। সে হিসাবে দলের শীর্ষ এক নেতা বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ফোনকল করে শেখ ফজলে শামস পরশকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসার জন্য বলেছিলেন। ওই শীর্ষ নেতার কথা রেখেছেন পরশ। তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছিলেন। 

ওবায়দুল কাদের জানান, যদি যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির রক্তের উত্তরাধিকারকে কাউকে এখানে চায় পরবর্তী নেতা হিসেবে, সেটা অবশ্যই যুবলীগের অধিকার আছে। 

পরশ গত ১০ বছর ধরে রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে ফের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

প্রস্তুতি সম্পন্ন

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলন উপলক্ষে প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সরকারের মেগা প্রজেক্ট পদ্মা সেতুর আদলে গড়ে তোলা হয়েছে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ। বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন।

কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করবেন যুবলীগ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি চয়ন ইসলাম।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

আলোচনায় যারা

সম্প্রতি শুদ্ধি অভিযানের ক্যাসিনোকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনায় এসেছে যুবলীগের নাম। ক্যাসিনোকাণ্ডে সংগঠনটির সুনাম নষ্ট হয়েছে।তাই নতুন নেতৃত্বে কাঁধে থাকবে ইমেজ পুনরুদ্ধারের বাড়তি দায়িত্ব। 

শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরে চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদকে সদস্য সচিব করে সম্মেলনের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। 

যুবলীগের  আগের ৬ সম্মেলনের ৪টিতেই নেতৃত্বে দেখা গেছে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি এবং তার নিকটাত্মীয়দের।  

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য চয়ন ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, এবার সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে। বাদ পড়বেন বিতর্কিতরা । 

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নতুন করে আলোচনার এসেছে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীর। তিনি প্রচারবিমুখ হওয়ায় দীর্ঘদিন ছিলেন আলোচনার বাইরে। রাজনীতির মাঠে চলাচল নিয়মিত হলেও ছিলেন না দলের কোনও সাংগঠনিক দায়িত্বে। তবে এই সময়ে আবারও আলোচনায় এসেছেন মাঈনুদ্দিন হাসান। সম-সাময়িক অনেকেই বিত্ত-বৈভবের মালিক হলেও মাঈনুদ্দিন বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। তিনি দৈনিক জাগরণের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও তিনি কিছুই জানেন না। 

সাধারণ সম্পাদক পদে মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে 

শেখ ফজলে শামস পরশ ও মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী দু’জনই বর্তমানে যুবলীগের কোনও পদে নেই। তাই একেবারে নতুন দু’জনকে যুবলীগের দায়িত্বে আনা হবে কি— না বা নতুন দুই মুখ সংগঠনের শীর্ষপদে আসলে নেতৃত্বে কেমন হবে এই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে কর্মীদের মধ্যে।

.....................

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ে এসে ছাত্রলীগের সভাপতি বানিয়েছিলেন ১৯৯২-১৯৯৪ সালে। সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিয়ে মাত্র ৩০ বছর বয়সে ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে অংশ নেন চট্টগ্রাম-১৫ থেকে। গত প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি কোনও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদে নেই। সম্প্রতি দেশব্যাপী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের কারণে স্বচ্ছ ইমেজের এই নেতাকে যুবলীগের শীর্ষপদে আসতে পারেন বলে জানা গেছে।

শেখ ফজলে শামস পরশ ও মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী দু’জনই বর্তমানে যুবলীগের কোনও পদে নেই। তাই একেবারে নতুন দু’জনকে যুবলীগের দায়িত্বে আনা হবে কি— না বা নতুন দুই মুখ সংগঠনের শীর্ষপদে আসলে নেতৃত্বে কেমন হবে এই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে কর্মীদের মধ্যে।

কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলামের নামও শোনা যাচ্ছে চেয়ারম্যান পদে। তবে বয়সের কারণে তিনি পিছিয়ে আছেন। 

যুবলীগের শীর্ষ আলোচনায় রয়েছেন— কেন্দ্রীয় বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সভাপতিমণ্ডলির সদস্য অ্যাডভোকেট  বেলাল হোসেন, সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাহিদ এবং মুহাম্মদ বদিউল আলম, বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি মনজুরুল আলম শাহীন ও যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু।

পদ-প্রত্যাশীদের মধ্যে মহিউদ্দিন আহমেদ মহি সংগঠনিক দিক দিয়ে এগিয়ে আছেন। অন্যদিকে অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেনকে সংগঠনের শীর্ষ পদে আনতে চান আওয়ামী লীগের এক শীর্ষনেতা। মনজুরুল আলম শাহীন ও ইকবাল মাহমুদ বাবলু আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে দিয়েছেন ফলে তারা একদিক থেকে এগিয়ে আছেন।  

যুবলীগের নেতৃত্বে বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান  জাহাঙ্গীর কবির নানক দৈনিক জাগরণকে বলেন, দুর্দিনের ত্যাগী কর্মী, পরীক্ষিত, একই সঙ্গে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আছে— এসব বিষয়গুলো যুবলীগের নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনায় থাকবে।

যুবলীগের শীর্ষ পদের আলোচনায় রয়েছে শেখ ফজলে ফাহিম ও শেখ ফজলে নাইমের নামও। তারা দু’জনই আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে। শেখ ফজলুল করিম সেলিম যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ওই পরিবারের বাইরে থেকেই নেতৃত্ব আসার সম্ভাবনাই বেশি।

২০১২ সালের ১৪ জুলাই আওয়ামী যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান পদে ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক পদে হারুনুর রশিদ নির্বাচিত হন।

১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সবচেয়ে শক্তিশালী সহযোগী সংগঠন হিসেবে যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। যার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি।

এএইচএস/এসএমএম

আরও পড়ুন