• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০১৯, ০২:৪৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৩, ২০১৯, ০৫:৪১ পিএম

দুর্নীতিবাজ যেই হোক ছাড় নেই, শুদ্ধি অভিযান চলবে : প্রধানমন্ত্রী

দুর্নীতিবাজ যেই হোক ছাড় নেই, শুদ্ধি অভিযান চলবে : প্রধানমন্ত্রী
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -ছবি : টিভি থেকে নেয়া

যুবলীগের ৭ম জাতীয় কংগ্রেস

.......................

● চাঁদার হিসাব না করে জনকল্যাণে চিন্তা করুন

● ভোগে নয়, ত্যাগেই মর্যাদা বাড়ে

● যুব সমাজের মেধা-শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে

● অনেক ক্ষেত্র বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল

● অবৈধ টাকায় চাকচিক্য থাকলেও সম্মান পাওয়া যায় না

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির টাকায় জৌলুস-চাকচিক্য থাকলেও সম্মান পাওয়া যায় না। অবৈধ টাকা দিয়ে হয়তো জৌলুস বাড়তে পারে, চাকচিক্য বাড়তে পারে, আন্তর্জাতিক বড় বড় ব্রান্ডের জিনিস পরতে পারে। কিন্তু তাতে সম্মান পাওয়া যায় না। দুর্নীতিবাজ যেই হোক ছাড় নেই, শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের ৭ম কংগ্রেস উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সকলকে এ কথাটাই মনে রাখতে হবে ভোগে নয় ত্যাগই মহত্ব, ত্যাগেই সুখ। কতোটুকু মানুষের জন্য করতে পারলাম সেটাই হবে একজন রাজনীতিবিদের চিন্তা। আমাদের যুব সমাজকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলতে চাই। মাদক সন্ত্রাস দুর্নীতি এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। নিজে কি পেয়েছি কি পেলাম- এই চিন্তা না করে, সাধারণ মানুষের জন্য কতোটুকু করতে পারলাম এই চিন্তা থেকে যারা রাজনীতি করে তারাই সফল হতে পারে।

তিনি বলেন, ভোগের মধ্যদিয়ে আত্মতুষ্টি পাওয়া যায় কিন্তু মানুষের মন জয় করা যায় না। এ সময় বিএনপির সাজাপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী যিনি এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে দুর্নীতির দায়ে কারাগারে আজ। বিএনপি নেতারা তার তুলনা করে নেলসেল মেন্ডেলার সঙ্গে। কার সঙ্গে কার তুলনা। এতে আমি মনে করি নেলসেন মেন্ডেলাকে অপমান করা হচ্ছে। কারণ নেলসেল মেন্ডেলা তার জাতির স্বাধীনতার সংগ্রাম করে কারাগারে ছিলেন। দুর্নীতি করে কারাগারে যান নাই। 

শেখ হাসিনা বলেন, এমন একজন নিকৃষ্ট ব্যক্তি (খালেদা জিয়া), যিনি ক্ষমতায় থাকতে বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। দুর্নীতিই ছিল যাদের নীতি। যার ছেলে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ষড়যন্ত্র এবং মানিলন্ডারিং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, তার তুলনা এমন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কারা করে এটাই আমার প্রশ্ন।

যুবলীগের যেন বদনাম না হয়। যুবলীগে যারাই নেতৃত্বে আসুক না কেন, তারা যেন আদর্শ নিয়ে চলে সেই আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত দশ বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে। গত দশ বছরে দেশে স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করতে আওয়ামী লীগ সক্ষম হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুব সমাজকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি থেকে দূরে রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। যুবসমাজকে সঠিক পথে রাখতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি কাজ করে যাচ্ছে সরকার। দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরের মাধ্যমে তরুণদের কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করেছে সরকার।

যুবসমাজকে গড়তে যুবলীগকে আদর্শ সংগঠন হিসাবে গড়ে তুলতে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মাদক, সন্ত্রাস দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি যে অভিযান শুরু করেছে সেটি অব্যাহত থাকবে। এর সঙ্গে যুক্ত থাকলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না সে যেই হোক। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য তার কোনও সহানুভূতি নেই।

যুবলীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। এর মধ্য দিয়েই একটি সংগঠন যেমন গড়ে উঠে দেশকেও কিছু দেয়া যায়। জাতির পিতার এই দেশ ব্যর্থ হতে পারে না। দেশকে সফল করেছি। এই সফলতা নিয়ে চলবো। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো।

যুবলীগের গর্বিত ইতিহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের আদর্শ নিয়ে সততার সঙ্গে জীবন-যাপন এবং ত্যাগের মহিমায় দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুরু করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যুবলীগে ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এই সংগঠনের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যুবকরাই জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আশা করবো যুবলীগ নেতা-কর্মীরা এমন কোনও কাজ করবে না যাতে সংগঠনের বদনাম হয়। আদর্শ নিয়ে চলে দেশের কল্যাণে কাজ করে তাগের মহিমায় নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।

দেশের মানুষকে নির্যাতন, শোষণ আর বঞ্চনা থেকে মুক্তি দিকে আওয়ামী লীগের ঘিরে উঠেছিলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সংগঠিত হয়েছিলো বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ নিয়ে ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতার উচ্ছৃষ্ট বিলিয়ে এই দল গড়ে উঠেনি। এই দলের প্রতিটি সংগঠনও গড়ে উঠেছে মানুষের কল্যাণে, স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে এর সুফল পৌঁছে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। আদর্শ থেকে বিচ্যুত হলে দেশকে কেউ কিছু দিতে পারে না। যুবলীগ নেতা-কর্মীদের এটি স্মরণ রাখতে হবে।

আদর্শ ধরে রাখতে নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধু লেখা দুটি বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই বই পরলে বোঝা যাবে একজন নেতা কিভাবে লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়।

যুবসমাজের জন্য তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু চাকরির পেছনে ছুটে চলা নয়, আমাদের যুবসমাজকে এমনভাবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিচ্ছি যাতে তারা আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে অন্যকে চাকরি দিতে পারে। আমরা সেই দিকে জোর দিচ্ছি। সারাদেশে একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি। এই দেশে কেউ বেকার থাকবে না।

এ সময় যুব সমাজকে কারিগরি ট্রেনিংয়ে সম্পৃক্ত করার ওপর জোর দেয়ার কথা জানান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, স্কুল লেভেল থেকে হাতে কলমে কারিগরি শিক্ষা জোরদার করছে সরকার।

সরকার গত দশ বছরে দারিদ্রের হার ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, এই হার দ্রুত ১৫/১৬ ভাগে নামিয়ে আনতে চান তিনি। এই বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। 

তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, উদ্বৃত্ত দেশ।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথা জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতুতে অর্থ আটকানোর বিষয়েও কথা বলেন।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিলো। আমি চালেঞ্জ দিয়েছিলাম। একজন আছেন যে একটা ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়ে না আবার নোবেল পুরস্কার পায়। তিনি পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করতে আমেরিকা গিয়ে ধর্না দিলো। বিশ্বব্যাংক অর্থ বন্ধ করে দিলো। কিন্তু দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। যখন দুর্নীতি খুঁজতে গেলো তখন খালেদা জিয়া, তারেক, কোকোর দুর্নীতি পেয়েছে। আমাদের কোনও কিছু পায়নি। আমি বলেছিলাম পদ্মা সেতু নিজের অর্থায়নে হবে। আমরা এখন নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি। সেই সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি।

কারও কাছে মাথা নত করে চলবো না। কারও কাছ থেকে ধার করে ঘি খাবো না। নিজের অর্থে নিজেরা চলবো। এই কথাটি আমাদের মনে রাখতে হবে।

সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। একটা দেশ গড়ে তুলতে হলে যুব সমাজের মেধা মনন শক্তিকে কাজে লাগানো দরকার। যারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে দেশ গঠনে কাজ করবে।

তিনি দেশের যুব এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দেশ গড়ার কাছে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব মধ্যাহ্নভোজের পর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

যুবলীগের বহুল আলোচিত ৭ম কংগ্রেসে সারা দেশের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা ও ৮টি জেলার মর্যাদাসম্পন্ন বৈদেশিক শাখার প্রায় ৩ হাজার কাউন্সিলর ও ২৫ হাজার ডেলিগেট এবং ৮ হাজার অতিথি আমন্ত্রিত ছিলেন।

সম্প্রতি সম্মেলনের মাধ্যমে কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটির নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অব্যাহত দেয়া হয়েছে আগেই। ফলে সংগঠনটির নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন অনুমিতই ছিল।

যুবলীগ নেতাকর্মীদের বহুল কাঙ্ক্ষিত কংগ্রেসে বিদায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীসহ কয়েকজন বিতর্কিত নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। গণভবন থেকে ‘সবুজ সঙ্কেত’ না মেলায় তাদের দাওয়াতপত্র দেয়া হয়নি।

কংগ্রেসকে সামনে রেখে আগেই নেতাদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। ৫৫ বছরের বেশি বয়সের কোনও নেতা এবারের কংগ্রেসে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেননি।

২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর কংগ্রেস হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৭ বছর পর সপ্তম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এএইচএস/এসএমএম

আরও পড়ুন