• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০১৯, ০৩:১০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৩০, ২০১৯, ০৬:২১ পিএম

অবৈধ টাকা বানানো একটা রোগ, অসুস্থতা : প্রধানমন্ত্রী

অবৈধ টাকা বানানো একটা রোগ, অসুস্থতা : প্রধানমন্ত্রী
বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ছবি : পিএমও

● ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো যারা নির্বাচন করে তাদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না

● বিএনপি ও জাতীয় পার্টি হলো খাই খাই পার্টি 

●  আওয়ামী লীগ মানুষের কল্যাণে কাজ করে

● বিএনপির কাজই হলো মানুষকে যন্ত্রণা দেয়া

● সুইপারদের টাকাটাও মেরে খেয়েছে বিএনপি

● দুর্নীতির কারণে জেল খাটছেন খালেদা জিয়া 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়ার বিএনপি বা এরশাদের জাতীয় পার্টি সৃষ্টি হয়েছে অবৈধভাবে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। তারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে। ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে এই দলগুলো গঠন করা হয়েছে। এরা মাটি থেকে গড়ে উঠেনি, বিরোধীদলে থেকে গড়ে উঠেনি, মানুষের কথা চিন্তা করে গড়ে উঠেনি বরং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী অবৈধ ক্ষমতা বৈধকরণে একটা হাতিয়ার হিসেবে দলগুলো তৈরি করা হয়েছিল। কাজেই তাদের চরিত্রটা হচ্ছে আলাদা। তারা হচ্ছে সুবিধাভোগী, খাওয়া পার্টি। তারা মানুষকে কিছু দিতে পারে না।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিরানি-পোলাও খাওয়া, ব্র্যান্ডের কাপড় পরা থেকে সাদাসিধে জীবন-যাপন করা অনেক সম্মানের। অন্তত অবৈধ বা চোরা টাকা চোরা টাকা এটা মনেও আসবে না। শান্তিতে ঘুমানো যাবে। আসলে টাকা বানানো একটা রোগ। কারণ একবার যে টাকা বানায় তার শুধু বানাতেই ইচ্ছে করে। টাকার পেছনে ছুটছে এই ধরনের সামাজিক অবস্থা আমরা চাই না।

দুর্নীতির অবৈধ টাকা দিয়ে যতই বিলাসিতা করুক মানুষ সামনে একটা বাহবা দিলেও পেছনে ‘দুর্নীতিবাজ-চোর’ বলে গালি দেবে। সেই গালিটা হয়ত শোনা যাবে না।

আওয়ামী লীগ মানুষের কল্যাণে কাজ করে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম  তখন খালেদা জিয়া আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর যারা অত্যাচার করেছে, খুন করেছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে অথবা হাত পা কেটে দিয়ে, চোখ তুলে নিয়ে, গুলি করে হত্যা করেছে। যারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে জ্যান্ত মানুষ হত্যা করেছে, যারা ওই সন্ত্রাস, দুর্নীতি এছাড়া কিছু বোঝো না, দেশ তারা পরিচালনা করে, দেশের সম্পদ তারা লুটে খায়, দেশের কল্যাণ তারা করতে পারে না, দেশের মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে তাদের ঘাড়ে বসে এদের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করা, জনগণের জীবন-যাপন উন্নত করা এটাই আমাদের লক্ষ্য।

বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ওরা ধ্বংস করতে জানে। সৃষ্টি করতে পারে না। বিএনপির কাজই হলো মানুষকে যন্ত্রণা দেয়া। তারা শান্তি দিতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন দুর্নীতির কারণে কমে গিয়েছিল। আমরা এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি। তাদের কাজই হলো দুর্নীতি করা, লুটপাট করা আর মানুষকে নির্যাতন করা। হাওয়া ভবন খুলে লুটপাট করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশ থেকে এতিমের টাকা এসেছিল, সেই টাকা চলে গেল খালেদা জিয়ার অ্যাকাউন্টে। সেই মামলায় খালেদা জিয়া এখন জেল খাটছেন। তার ছেলেও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের জীবন-যাপন উন্নয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি, জনগণের পুষ্টির দিকে নজর দিচ্ছি। আমরা ঢাকা শহরে ১১টি সরকারি স্কুল ও ছয়টি কলেজ করে দিচ্ছি। এভাবে বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক সরকারি স্কুল করা কিংবা যেখানে স্কুল নেই সেখানে সরকারি স্কুল করার ব্যবস্থা করছি।

আওয়ামী লীগ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছে। আমাদের নীতি-আদর্শ হলো জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করা, জনগণের জীবনমান নিশ্চিত করা। জাতির পিতা মন্ত্রিত্বের পদ ছেড়ে দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়েছিলেন জনগণের সেবা করার জন্য। কাজেই আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীর বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষা নিতে হবে।

পানি ও বিদ্যুত ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া ও শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বস্তিবাসীরা যাতে ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকতে পারে এজন্য আমরা ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছি। দুঃখের কথা আমি বলবো কী। আমরা ক্ষমতায় থাকতে সুইপার যাদের আমি বলি পরিচ্ছন্নকর্মী তাদের থাকার ভালো ব্যবস্থা ছিল না। আমরা প্রকল্প নিলাম তাদের জন্য বহুতল ভবন করে দেব। বিএনপি ক্ষমতায় আসলো এবং বিএনপির নেতা হলো ঢাকার মেয়র। সেই সুইপার কলোনীর টাকাটা পর্যন্ত এমনভাবে চুরি করে খেয়ে গেল সেই দালানগুলো আর থাকার মতো না। হেলে পড়ে যায়। আর যারা বানাতে গেছে তারা টাকা খেয়ে চলে গেছে।

একটা মানুষও গৃহহারা থাকবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দিনমজুর তারা দিনের ভাড়া যেন দিনেই দিতে পারে সেজন্য ব্যাংকের ব্যবস্থা থাকবে। যারা সপ্তাহিক আয় করে তারা সপ্তাহের ভাড়া দিয়ে থাকবে। যারা মাসে আয় করে তারা মাসের ভাড়া দিয়ে থাকতে পারে তাদের জন্য সে ব্যবস্থা করে আমরা বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট করে দেব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যখন বিএনপি নেতারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে, বা নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তোলে- তাদের আমি এটাই মনে করিয়ে দিতে চাই যে তাদের নেতা জিয়াউর রহমানের ‘হ্যা’, ‘না’ ভোট এবং তার যে নির্বাচন অথবা ৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। কেমন নির্বাচন তারা করেছিল? সেখানে কোথায় ভোটার, কোথায় নির্বাচন। জনগণ তো স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেনি। তখন কথাই ছিল ১০টা হুন্ডা, ২০টা গুন্ডা নির্বাচন ঠাণ্ডা। ঠিক তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিল জেনারেল এরশাদ।

তিনি আরও বলেন, সেই অবস্থা আমরা পরে আবার দেখি ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে। খালেদা জিয়াও সেই একই পদাঙ্ক অনুসরণ করে। কাজেই ১৫ ফ্রেব্রুয়ারির নির্বাচন ৯৬ সালে যারা করেছিল, তাদের অন্তত নির্বাচন নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা শোভা পায় না।

এর আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। পরে বেলা ১১টার দিকে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে থেকে আসা নেতা-কর্মীদের পদচারণায় ও স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হ‌য়ে ওঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

এএইচএস/এসএমএম

আরও পড়ুন