• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০১৯, ১১:১৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ৫, ২০১৯, ১১:৩২ এএম

খালেদার স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদন পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর, আইনজীবীদের হট্টগোল

খালেদার স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদন পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর,  আইনজীবীদের হট্টগোল

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়ে আগামী ১২ ডিসেম্বর ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। প্রতিবেদন দাখিলের পূর্বনির্ধারিত তারিখ বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) আদালতে তা দাখিলের নির্দেশনা দেয়া ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ে এ প্রতিবেদন তৈরি না হওয়াতে তা আজ আদালতে দাখিল করা হয়নি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সময় চেয়ে আবেদন করেন। এরপর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। তবে খালেদার আইনজীবীরা নতুন তারিখ ৭ ডিসেম্বর ধার্য করার আর্জি করেন। তবে এতে সাড়া দেয়নি আদালত।

এই অবস্থায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা হট্টগোল করতে থাকলে বিচারপতিরা এজলাস ত্যাগ করেন।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এ সংক্রান্ত বোর্ড নির্ধারিত দিনে রিপোর্ট দাখিল করতে পারছে না বলে গতকাল বুধবারই গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোমধ্যে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার বিভিন্ন রোগব্যাধির রিপোর্টসহ সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা সভা করেছে। তবে বৃহস্পতিবার আদালতে সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন দাখিলের ব্যাপারে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি বোর্ড। এ কারণে বৃহস্পতিবার তারা আদালতে সময় প্রার্থনা করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মাধ্যমে আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুসারে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে পর্যালোচনা সভা করেন। কিন্তু তার কাছে এখনও মেডিকেল বোর্ড প্রতিবেদন দেয়নি। ফলে বৃহস্পতিবার  আদালতে রিপোর্ট দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবেদন দাখিলে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা জানাতে মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট আদালতে দাখিলের নির্দেশ কপি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের কাছে গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিকালে পৌঁছে। আজ ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এ রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়। এদিন আদেশের জন্য দিনও ধার্য করেন আদালত।

গত ২৮ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি ওইদিন আপিল বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ৫ ডিসেম্বর মেডিকেল বোর্ডকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

এর আগে, শুনানিতে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা, বয়স ও মানবিক দিক বিবেচনার কথা জানিয়ে তার জামিনের আরজি জানান।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গত ৭ অক্টোবর একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। ৩০ অক্টোবর বোর্ডের প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করেন বলে আদালতকে জানান জয়নুল আবেদীন। অনানুষ্ঠানিকভাবে পাওয়া ওই প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার উন্নত থেরাপির কথা বলা আছে বলে দাবি করেন জয়নুল আবেদীন। এ অবস্থায় আদালত বলেন, তাহলে আমরা একটা রিপোর্ট কল করি। পরে আদালত মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

এদিকে, দলীয় চেয়ারপারসনের সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার বলেন, পুরো জাতি বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, উচ্চ আদালত থেকে দেশনেত্রী ন্যায়বিচার পাবেন। বেগম খালেদা জিয়া দেশের সিনিয়র সিটিজেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দুবারের বিরোধীদলীয় নেতা ও দেশের জনপ্রিয় শীর্ষ রাজনীতিবিদ এবং গুরুতর অসুস্থ। তার জামিন পাওয়া ন্যায়সঙ্গত অধিকার। এ ধরনের মামলায় উচ্চ আদালত থেকে অনেকেই জামিন পেয়েছেন, সেটির নজিরও অসংখ্য রয়েছে।’

গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক। রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।

বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা বাতিল ও খালাস চেয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করেন খালেদা জিয়া। এর গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি নিয়ে ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে ওই মামলায় খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে দেয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এছাড়া বিচারিক আদালতে থাকা মামলাটির নথি তলব করা হয়। দুই মাসের মধ্যে নথি পাঠাতে বলা হয়।

বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি গত ২০ জুন হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আদালতে তুলে ধরেন তার আইনজীবীরা।

শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৩১ জুলাই জামিন আবেদন খারিজ করেন। পরে খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে তার আইনজীবীরা আপিল বিভাগে যান।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।

দুর্নীতির পৃথক দুটি মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন।


এমএ/টিএফ

আরও পড়ুন