• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯, ০৯:০৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯, ০৯:৪৭ পিএম

রাত পোহালেই জাপার সম্মেলন

নিজেকে নিরাপদ করলেন জিএম কাদের

নিজেকে নিরাপদ করলেন জিএম কাদের
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের

                                      

                              রওশন পার্টির আজীবন ‘প্রধান পৃষ্ঠপোষক’
                              চেয়ারম্যান থাকছেন জিএম কাদেরই
                              কো-চেয়ারম্যান বেড়ে হচ্ছে ৫ জন

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর সাড়ে ৫ মাস পর দলটির জাতীয় কাউন্সিল হতে যাচ্ছে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর)। রমনা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে হবে কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। দুপুরে মিলনায়তনের ভেতরে হবে ভোটাভুটি। জাপার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের মৌখিক ভোটে চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় নেতা নির্বাচন করা হবে। জাপার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর পর পর কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।

সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের অবর্তমানে দলটিতে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্ব নিয়ে তৈরি হওয়া টানাপড়েনে দ্বিতীয়বারের মতো ‘দান’ মারলেন এরশাদভ্রাতা জিএম কাদের। নিজের চেয়ারম্যান পদকে ‘নিরাপদ’ রাখতে এরশাদপত্নী রওশনকে ম্যানেজের পথে হাঁটলেন জিএম কাদের। মূলত, চেয়ারম্যান পদে বিনা চ্যালেঞ্জে বহাল থাকতেই কাউন্সিলে রওশনের জন্য ‘প্রধান পৃষ্ঠপোষকে’র পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল থাকবেন এরশাদের ভাই জিএম কাদেরই। 

জাপা সূত্রমতে, দেশে জোটের ও ভোটের রাজনীতিতে বরাবরই ফ্যাক্টর ছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। বিভিন্ন আমলে সরকার গঠনে তার প্রতিষ্ঠিত দলকে রাজনীতির বাজারে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন নিয়ামক হিসেবে। কিন্তু এরশাদের প্রয়ানে সেই জাতীয় পার্টি রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটাই প্রভাবহীন। এরশাদের প্রয়ানের পর দলটি ভাঙনের মুখেও পড়েছিল। সেই ভাঙন শেষ পর্যন্ত ঠেকানো গেলেও গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি জাতীয় পার্টি। বরং দলটির জাতীয় সম্মেলনের পূর্বেই নানা সমীকরণে দলের হাইকমান্ড বা শীর্ষ নেতৃত্ব অর্থাৎ বর্তমান চেয়ারম্যান পদ নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়েছিলেন জিএম কাদের। এ পদ নিয়ে এখন এরশাদভ্রাতা জিএম কাদের ও এরশাদপত্নী পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ মুখোমুখি অবস্থানে চলে গিয়েছিলেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতেও অনঢ় ছিলেন তারা। এ অবস্থায় চেয়ারম্যান কে হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে জাপার ভেতরে চলছিল নানা আলোচনা-গুঞ্জন। এদিকে পার্টির মহাসচিব পদ নিয়েও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। 

সূত্র জানায়, বিভিন্ন দিক চিন্তা করে জিএম কাদের ‘মাতৃসম ভাবী’ রওশনকে ম্যানেজ করতে সক্ষম হয়েছেন। যতদিন জীবিত ততদিন রওশন জাপার ‘প্রধান পৃষ্ঠপোষক’- দলের গঠনতন্ত্রে এ পরিবর্তন এনে তাকে সম্মান দেয়ার প্রস্তাব রওশন গ্রহণ করায় আপাতত জিএম কাদেরের সামনে আর কোনো চ্যালেঞ্জ রইল না। সেক্ষেত্রে তিনি (জিএম কাদের) কাউন্সিলে জাপার চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন- তা নিশ্চিত বলা যায়।

জাপা সূত্র জানায়, এবারের কাউন্সিলে পার্টির গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। রওশনের জন্য ‘প্রধান পৃষ্ঠপোষকে’র পদ ছাড়াও বেশ কয়েকটি কো-চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করা হবে। আর এসব পদে আসবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।

সূত্র আরও জানায়, গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে এবার জাপাতে অতিরিক্ত মহাসচিবের পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আর সেই পদে আসছেন দেশের রাজনীতিতে বহুল আলোচিত ‘ওয়ান ইলেভেনে’র অন্যতম সমালোচিত সেনাকর্মকর্তা লে. জে (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। এ ছাড়াও ৮টি বিভাগের প্রতিটিতে একজন করে অতিরিক্ত মহাসচিবের পদ হচ্ছে। 

জাপা সূত্র জানায়, মহাসচিব হিসেবে মশিউর রহমান রাঙ্গার সক্ষমতা নেতাকর্মীদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না। তাছাড়া, দলে তুলনামূলক জুনিয়র রাঙ্গাকে মহাসচিব হিসেবে চান না দলটির অনেক সিনিয়র নেতা। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, রাঙ্গা বেশিরভাগ সময় সাবেক এক মহাসচিবের দরবারে পড়ে থাকেন এবং তার ইশারায় চলেন। জাতীয় ও স্থানীয় সরকার (উপজেলা) নির্বাচন থেকে শুরু করে তৃণমূলের কোনো খোঁজ-খবরও রাখেন না তিনি। বেশিরভাগ সময়ই তিনি ব্যস্ত থাকেন তার পরিবহন ব্যবসাসহ অন্যান্য ব্যবসা নিয়ে। সেজন্য তৃণমূল নেতাদের দাবি পার্টির জন্য যোগ্য, জাপা কেন্দ্রিক সার্বক্ষণিক নিবেদিত কাউকে করা হোক মহাসচিব। এরইমধ্যে তৃণমূল থেকে নেয়া হয়েছে একটি তালিকাও। সেই তালিকায় বর্তমান মহাসচিব রাঙ্গার চেয়ে এগিয়ে আছেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, গোলাম মশিহ ও হালের জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি লিয়াকত হোসেন খোকা। আছেন মশিউর রহমান রাঙ্গাও।  

এদিকে, জাতীয় পার্টির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গত বুধবার ‘জিএম কাদের জাতীয় পার্টির বৈধ চেয়ারম্যান নন’ বলে অভিযোগ করে তার নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির কাউন্সিল স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মুহাম্মদ জহির উদ্দিন। উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে তিনি একটি রিটও দায়ের করেন। রিটের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এরইমধ্যে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে কেন জিএম কাদেরকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, সেই বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছেন। 

সংবাদ সম্মেলন করে জহির উদ্দিন বলেন, আসন্ন কাউন্সিল স্থগিত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। অন্যথায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে প্রশাসন দায়ী থাকবে। তিনি বলেন, আদালতে মামলা বিচারাধীন সময়ে এবং দলের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল করা হলে একদিকে আদালত অবমাননা হবে, অন্যদিকে জাতীয় পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ অবস্থায় এরশাদের সৈনিক হিসেবে আমি চুপ থাকতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, জিএম কাদের জাতীয় পার্টির বৈধ চেয়ারম্যান নন। ২৪ ডিসেম্বর মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টে ১৫০৫১/২০১৯ রিট মামলা দায়ের করি। হাইকোর্ট জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে কেন চেয়ারম্যান পদে অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল জারি করেছে। এ অবস্থায় জি এম কাদের পার্টির অবৈধ চেয়ারম্যান হিসেবে দলের কোনো সভা-সম্মেলনে সভাপতিত্ব করতে পারেন না।

তিনি দাবি করেন, জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর কোনো কাউন্সিল ছাড়াই দলের মহাসচিব সংবাদ সম্মেলন করে চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন, যা গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন। তা ছাড়া তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে যাকে খুশি, যত ইচ্ছা প্রেসিডিয়াম থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রেসিডিয়াম সদস্য হবেন সর্বোচ্চ ৪১ জন।  আর তিনি অবৈধভাবে চেয়ারম্যান হয়ে তা লঙ্ঘন করে ৫১ জনকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করেছেন। একইভাবে বেআইনিভাবে ভাইস চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে পদোন্নতি দিয়েছেন। যা সুস্পষ্টভাবে বেআইনি ও গঠনতন্ত্রবিরোধী।
 
পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, এরশাদবিহীন জাপার গন্তব্য কোথায়? এই দল কি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে? নাকি ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে লেজুড়বৃত্তিক কর্মকাণ্ডই চালিয়ে যাবে? দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর জিএম কাদের চেষ্টা করছেন দলকে চাঙা করতে। তার আশা, জাতীয় পার্টি নিজের পায়ে দাঁড়াবে তার নেতৃত্বে। ভোটের মাঠে ও জনস্বার্থ নিয়ে তারা রাজপথে লড়বেন এককভাবে। কিন্তু তার সেই আশা বাস্তবায়নে কাউকে পাশে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

জানতে চাইলে জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন আজাদ বলেন, আমাদের দলটি এরশাদকেন্দ্রিক দল ছিল, এটা বলাই যায়। তার প্রয়ানের প্রভাব তো দলে পড়েছেই। তার অনুপস্থিতিতে দলের সবাই অ্যাকটিভ নয়। তবে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চেষ্টা চলছে দলকে সুসংগঠিত করে এগিয়ে নেয়ার।

জাপা সূত্র জানায়, এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে দেখা দেয় চরম অনিশ্চয়তা। এরশাদ নিজে জীবিত অবস্থায় তার অবর্তমানে ছোট ভাই জিএম কাদেরকে পার্টিতে তার জায়গায় বসিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী এরশাদ মারা গেলে জিএম কাদের নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। তবে এর বিরোধিতা করেন এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ। পরে জিএম কাদের নিজেকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকারকে চিঠিও দেন। একপর্যায়ে রওশন নিজেকে জাতীয় পার্টির সভাপতিই ঘোষণা করে বসেন। পরে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নেন, জিএম কাদের থাকবেন দলের চেয়ারম্যান, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা থাকবেন রওশন এরশাদ। এতে আপাতত ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পায় জাতীয় পার্টি।

এ সর্ম্পকে সিনিয়র একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য তার নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, সবার নেতৃত্বে রাজনীতিতে তৎপর থাকা যায় না। কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে জাপার নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আসবে। কাউন্সিলের পরে জাতীয় পার্টির কোন্দল আরও চরম আকার ধারণ করারও আশঙ্কা আছে। 

জাপার ভাইস প্রেসিডেন্ট জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, সবাইকে সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। এখন বিএনপি মাঠে নেই, আওয়ামী লীগে দুর্নীতি। সবকিছু মিলিয়ে জাতীয় পার্টির দিকে জনগণ ভিড়বে বলে আশা করি।

দলে শীর্ষ নেতাদের অনেকেরই নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে জানতে চাইলে জহির বলেন, ‘দলের ভেতর গ্রুপিং এরশাদ আমলেও ছিল, এখনো আছে। সুযোগসন্ধানী কেউ এসবের মধ্যে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে। তবে সামনে জাতীয় পার্টির কাউন্সিল। আশা করি কাউন্সিলের পর এই অবস্থার অনেক উন্নতি হবে।’

এদিকে, বসে নেই জিএম কাদের কেন্দ্রিক জাপার একটি অংশ। জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান রেখেই পার্টিতে রওশন এরশাদ বলয়কে দুর্বল করতে চান এই অংশের নেতারা। পার্টির চেয়ারম্যানের চেয়ার, সংসদের উপনেতা, সদ্য অনুষ্ঠিত রংপুরের উপ-নির্বাচনসহ গুচ্ছ ইস্যুতে কাদের ও রওশনের মধ্যে যে বিরোধ চলছিল, তার দৃশ্যত সুরাহা হয়েছে। সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য থেকে একে অন্যকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছাড় দিয়েছেন। কিন্তু নিজ নিজ টার্গেট থেকে সরেননি কেউই। দুই পক্ষই সীমারেখা টেনেছে কাউন্সিল ঘিরে। দলের নেতারা বলছেন, কাউন্সিলের পরই হয়তো দুই পক্ষের আসল রূপ বেরিয়ে আসবে।

জাপার কাউন্সিল, গঠনতন্ত্রে পরিবর্তনসহ অন্যান্য বিষয়ে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুস সবুর আসুদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমরা সবাইকে নিয়েই পার্টির কাউন্সিল করতে চাই। আশাকরি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই আমাদের পার্টির কাউন্সিল সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। সেক্ষেত্রে কাউন্সিলরাই পার্টির আগামী নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন।

তিনি আরও বলেন, হ্যাঁ, আমাদের গঠনতন্ত্রে বেশকিছু পরিবর্তন আসছে। কো-চেয়ারম্যানের সংখ্যা বাড়তে পারে। প্রেসিডিয়ামের বর্তমান সংখ্যা ৪১ থেকে কমতে পারে। এ ছাড়াও আরও কিছু পরিবর্তন আসবে, যা এ মুহূর্তে বলতে চাচ্ছি না। কাউন্সিলেই তা আপনারা (সাংবাদিকরা) দেখতে পারবেন।

গত ২০১৬ সালে মার্চে পার্টির অষ্টম কাউন্সিলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কো-চেয়ারম্যানের পদ তৈরি করে তাতে ভাই জিএম কাদেরকে আসীন করেন। স্ত্রী রওশন এরশাদ এতে ক্ষিপ্ত হলে পরে তার জন্য এরশাদ তৈরি করেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানের পদ। রওশন আর জিএম কাদেরের দ্বন্দ্ব তখন থেকেই। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ চলতি বছরের ৫ মে তার ছোট ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। পরে ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর চার দিনের মাথায় বনানীতে পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের নাম ঘোষণা করেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় রওশনপন্থিরা পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনেন। 

পরে দুই পক্ষের সমঝোতা হলে ৮ সেপ্টেম্বর আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে রাঙ্গা জানান, জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবেই দায়িত্ব পালন করবেন। রওশন এরশাদ হবেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। সেই সমঝোতার পর রওশনকে সংসদ অধিবেশনে দেখা গেলেও দলের কার্যক্রম থেকে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেন। এই দূরত্ব ঘোঁচাতেই দলের নবম কাউন্সিলে ‘সর্বোচ্চ সম্মান’ দিয়ে তাকে নতুন পদে বসানোর পরিকল্পনা হয়েছে বলে আভাস দিলেন জাতীয় পার্টির এক সিনিয়র নেতা। 

জাপা মহাসচিব রাঙ্গা বলেন, প্রেসিডিয়ামে সদস্য সংখ্যা কমবে না বাড়বে সেই সিদ্ধান্ত  দলের নবম কাউন্সিলের পর নেবে জাতীয় পার্টি। তবে কাউন্সিলে ‘চার-পাঁচ জনকে’ দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যানের পদে আনা হতে পারে। জাতীয় পার্টির বেশ কয়টি সহযোগী সংগঠন কাউন্সিলে অঙ্গ-সংগঠনের স্বীকৃতি পাবে।

টিএস/ এফসি