• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০, ০৮:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০, ০৮:২৬ পিএম

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএসএমএমইউ ভিসির কাছে স্বজনদের আবেদন

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএসএমএমইউ ভিসির কাছে স্বজনদের আবেদন
খালেদা জিয়া - ফাইল ছবি

দুই বছর ধরে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসির কাছে আবেদন করেছেন তার স্বজনরা। 

মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বজনদের পক্ষ থেকে এ আবেদন করেন। চিঠিতে গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশের আবেদন জানানো হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে গিয়ে বিএসএমএমইউর ভিসি কনক কান্তি বড়ুয়ার কাছে আবেদন করেন বিএনপি প্রধানের ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার শামীম ইস্কান্দার। এরপর তার সেজো বোন সেলিমা ইসলাম অন্যদের নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে গণমাধ্যমের সামনে বলেন, খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে এবং সেজন্য তারা বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্যারলে হলেও তার মুক্তি চান।

খালেদা জিয়ার স্বজনদের পক্ষ থেকে আবেদনের কথা স্বীকার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বিবিসিকে বলেন, তিনি আবেদনটি মেডিকেল বোর্ডে কাছে পাঠিয়ে দেবেন। ইতোপূর্বে মেডিকেল বোর্ড বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার কোনো সুপারিশ করেনি। উনাদের (খালেদা পরিবারের) আবেদন মেডিকেল বোর্ডকে দেব। বোর্ড পরীক্ষা করে কী সাজেশন দেয়, সেটা আমরা পরে জানাব।

এদিকে সেলিমা ইসলাম খালেদা জিয়ার জন্য বিএসএমএমইউর ভিসির কাছে আবেদনের কথা স্বীকার করে বলেন, আবেদনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চেয়েছি। আর বলেছি যে, উনাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে। কারণ এটা মিথ্যা মামলা। সেজন্য আমরা নিঃশর্ত মুক্তির জন্য বলেছি। তিনি বলেন, তাদের আবেদন বিবেচনা করা হবে বলে তারা আশা করছেন।

সেলিমা ইসলাম আরও বলেন, আমরা চাচ্ছি সরকার বিবেচনা করুক। যেভাবেই হোক, তাকে বিদেশে নেয়ার জন্য আমাদের পারমিশন দিক। প্যারলে দিলেও দিতে পারে। কারণ তার অবস্থা খুবই খারাপ।  

সেলিমা ইসলাম বলেন, উনার সম্মতি থাকবে। উনার অবস্থা এতই খারাপ হয়ে গিয়েছে যে, ৫ মিনিটও দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। বাঁ হাত সম্পূর্ণ বেঁকে গেছে। ডান হাতেরও খারাপ অবস্থা। তার চোখ দিয়েও অনবরত পানি পড়ছে। পায়ে কোনো সাপোর্ট রাখতে পারছে না। এই অবস্থায় একটা মানুষ তো চিকিৎসার জন্য যেখানেই হোক যেতে চাইবে।

দুই বছর ধরে কারাগারে আবদ্ধ থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য  বিদেশে নেয়ার কথা বলা হলেও এই প্রথম তার স্বজনদের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন করা হলো।

বিএসএমএমইউর সূত্রে জানা যায়, লিখিত আবেদনে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার শামীম ইস্কান্দার লিখেছেন, খালেদা জিয়ার দ্রুত অবনতিশীল স্বাস্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনা অপূরণীয় ক্ষতি এড়াতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন। খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যয় বহন করে এবং তাদের দায়িত্বে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে আবেদনে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্যারল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে প্যারলের জন্য আবেদন করা হয়েছে কি না সেটা আমার জানা নেই। পরিবারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।

এদিকে, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য আবেদন করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার দৈনিক জাগরণকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। গতকাল মঙ্গলবার ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) স্বজনরা হাসপাতালে উনাকে দেখতে গিয়েছেন। আমি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তারের নির্দেশে মিডিয়া সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়েছি। সেখানে শামীম ইস্কান্দার সাহেব বা ম্যাডামের পরিবারের কেউ আবেদন করেছেন কি না তা আমার জানা নেই। 

দিদার পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আবেদনটা করলো কখন? আমরা তো একসঙ্গেই ছিলাম। আমি তো এ বিষয়ে কিছু দেখিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি বলে থাকে তাহলে তারা আবেদনটি প্রকাশ করুক।

প্রসঙ্গত. দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে কারাগার বা হাসপাতালে তার স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে গেলে শামসুদ্দিন দিদার নিয়মিত গণমাধ্যমকর্মীদের সমন্বয় করে থাকেন। তিনি দৈনিক জাগরণকে আরও জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বজন বা পরিবারের সঙ্গে আমার কখনও যোগাযোগ হয় না। আমি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিবের নির্দেশেই আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক জাগরণকে বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে আমার কিছু জানা নেই। আমি জানি না। তাছাড়া, মহাসচিব তো আজকেই এ বিষয়ে আপনাদের (গণমাধ্যমে) জানিয়েছেন। মহাসচিব বলেছেন, প্যারলে মুক্তির বিষয়ে তার পরিবার আবেদন করেছে কি না, তা বিএনপির জানা নেই।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৭ বছরের সাজা নিয়ে জেল খাটার দুই বছর পুরো হয়েছে গত ৮ ফেব্রুয়ারি। এর মাঝে প্রায় ১০ মাস ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্ট থেকে তার জামিন আবেদন নাকচ হয়েছে। তার মুক্তি না পাওয়ার বিষয়কে ‘আইনগত’ বলে আসছে সরকার।

টিএস/ এফসি