• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২০, ০৯:১৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৭, ২০২০, ০৯:১৮ পিএম

‘হ্যালো ছাত্রলীগ’ অ্যাপ নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন-অভিযোগ

‘হ্যালো ছাত্রলীগ’ অ্যাপ নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন-অভিযোগ
ফেসবুক থেকে নেয়া

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ‘হ্যালো ছাত্রলীগ’ পরিষেবা নিয়ে শুরুতেই অভিযোগ। বলা যেতে পারে, অভিযোগমালা। যা আবার খোদ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের থেকেই।

করোনাকালে সারা দেশের সাধারণ ও অসহায় মানুষের মাঝে চিকিৎসা, খাদ্য সহায়তাসহ বেশ কয়েকটি সুবিধা দিতেই ‘হ্যালো ছাত্রলীগ’ অ্যাপসটির চালু হওয়ার কথা। ছাত্রলীগের ওই অ্যাপসটি এখনও চালুই হয়নি বলেই দাবি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য়ের। তবে এর মধ্যেই ব্যাপক সমন্বয়হীনতাসহ অনেক অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে, এই পরিষেবাটি সারা দেশে বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে যারা পরিচালনা করবেন তারা এ সমন্ধে আগে থেকে কিছুই জানতেন না। এ নিয়ে সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতা তাদের আগে থেকে কিছুই জানাননি। এখন পরিষেবা চালুর পর অসহায় মানুষের ফোন পেয়ে অনেকেই বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। এমন দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতা সংগঠনের এমন কার্যক্রমে বিব্রত হয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মুখ খুলেছেন। আবার অনেকেই জানিয়েছেন ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়াও।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ‘হ্যালো ছাত্রলীগ’ পরিষেবাটি চালু করে ছাত্রলীগ। যার উদ্দেশ্য ছিল করোনা চিকিৎসার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সঙ্কট মেটাতে ইন্টার্নি ডাক্তার ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানো। এ ছাড়াও সাধারণ মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেয়া বিষয়টিও ওই পরিষেবার মধ্যে সংযুক্ত করা হয়। সে অনুসারে কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের তাদের নিজস্ব জেলায় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং সেই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নাম ওই পরিষেবায় জেলা অনুসারে বিন্যাস্ত করা হয়। কিন্তু সেই বিষয়টি অধিকাংশ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জানতেন না বলে সংগঠনের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন। সারা দেশেই বিভিন্ন জেলায় ছাত্রলীগের এই পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত নেতারাই এমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলেই অভিযোগ করেন একাধিক নেতা।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ব্যাপক সমন্বয়হীনতার ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকের ক্ষুদ্ধ অবস্থানের কারণে অ্যাপস থেকে মোবাইল নম্বর সম্বলিত তালিকা বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, এটা হলো ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতারা মনগড়া সিদ্ধান্ত। যার ক্রেডিট শুধু তারাই নিতে চেয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়টিতে কোনও প্রকার সমন্বয় করা হয়নি। গরিব মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা তো সংগঠন থেকে দেয়াই হয় নি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। এমনকি তাদের (হ্যালো ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এটাও জানানো হয়নি। পরে কয়েকজন অসহায় মানুষের ফোন পেয়ে তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার বিষয়টি তারা জেনেছেন। এতে অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরেছেন। অনেকে ক্ষুদ্ধ হয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন লিখেছেন, ‘‘এই সঙ্কটে মানুষের পাশে থেকে ছাত্রলীগ আরও সুশৃঙ্খলভাবে তার কর্ম সম্পাদনের জন্য ‘Hello BSL’ নামে একটি অ্যাপ খুলেছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে জরুরি চিকিৎসা ও খাদ্য সহায়তা সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়েছে।

‘হ্যালো ছাত্রলীগ’ নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এই ভালো কাজটি করতে গিয়ে আমার মত শত শত কেন্দ্রীয় নেতাদের যে নিজ এলাকায় ভিলেন বানিয়ে দিচ্ছেন সেদিকে আপনাদের খেয়াল আছে?

আপনারা আমাদের ত্রাণ বা আর্থিক কোনও অনুদান দেননি, আমাদের কাউকে জানানও নি অথচ ‘‘হ্যালো ছাত্রলীগ’’ এ আমাদের নাম, নাম্বার দিয়ে বলে দিলেন আমাদের কল করলেই আমরা ত্রাণ সহযোগিতা পৌঁছে দিয়ে আসবো। কি আজব? এলাকার লোকজন রীতিমতো ভাবতে শুরু করেছে আমরা ত্রাণ/সাহায্য এনে খেয়ে ফেলেছি।

প্রিয় নেত্রীর কাছে আপনারা দু’জন ভালো হতে গিয়ে আমাদের মত শত শত কেন্দ্রীয় নেতাদের যে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করছেন, সেটা কি খেয়াল করেছেন নাকি ইচ্ছা করেই এমন করেছেন? মুমিন প্রতারণা করেছে প্রিয় নেত্রীর সাথে, প্রিয় সংগঠনের সাথে আর আমাদের জোর করে প্রতারক বানাচ্ছেন সারা বাংলাদেশে। কিন্তু আপনারা আমাদের প্রতারক বানাতে গিয়ে সংগঠনের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছেন। আপনাদের এই খেলায় জনগণের মধ্যে ছাত্রলীগ নিয়ে বিভ্রান্তকর মন্তব্য উদয় হচ্ছে। দয়া করে এই খেলা বন্ধ করুন।

ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আমার নাম ‘হ্যালো ছাত্রলীগ’ পরিষেবায় যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে আগে থেকে আমি কিছুই জানতাম না। সংগঠন থেকে এ জন্য আগে থেকে কোনও মিটিংও করা হয় নি। পরে অ্যাপটি প্রকাশ করা হলে অসহায় মানুষেরা আমাদের ফোন দিচ্ছে। কিন্তু আমরা তো ত্রাণ নিয়ে তাদের কাছে যেতে পারছি না, কারণ আমাদের তো বিষয়টি নিয়ে কোনও মানসিক প্রস্তুতিও ছিল না।

তিনি রোববার (১৭ মে) নিজের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন- Hello BSL সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। জেলাভিত্তিক জরুরি খাদ্য সহায়তা কমিটি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করা হয়নি। এখন অনেক দরিদ্র লোকজন ফোন দিয়ে ত্রাণ চায়। কিন্তু আমাদের কাছে কোন ধরনের ত্রাণ সরবরাহ করা হয়নি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি/সম্পাদক কর্তৃক। জনগণের মধ্যে ছাত্রলীগ নিয়ে বিভ্রান্তকর মন্তব্য উদয় হচ্ছে।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, এখন ‘হ্যালো ছাত্রলীগ’ অ্যাপসটি চালুই হয় নি। তাই চালুর আগেই এমন অভিযোগ সঠিক নয়।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের প্রত্যেকজন নেতা-কর্মী নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে অসহায় মানুষকে সহায়তা করবেন। এ জন্য কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে না। তবে যারা এমন অভিযোগ করেছেন তা দুঃখজনক।

এএইচএস/এসএমএম

আরও পড়ুন