• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২০, ০৬:২১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৫, ২০২০, ০৬:২১ পিএম

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত বিএনপির মূলশক্তি ছাত্রদল

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত বিএনপির মূলশক্তি ছাত্রদল

গঠনতন্ত্র ছাড়াই চলছে বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম। আর এ কারণেই ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল কিংবা যুবদলের কোনো কমিটিরও নেই নির্দিষ্ট আকার বা মেয়াদ। ফলে মাঝেমধ্যে নির্বাচন, সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় না কোনো কমিটি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত বিএনপির মূলশক্তি ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদল। দুর্বল নেতৃত্ব ও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি হওয়ায় এসব সংগঠন এখন অনেকটাই অকেজো। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যকারিতা হারিয়েছে অনেক আগেই।

সুনির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র না থাকায় ভেঙে পড়েছে সংগঠনগুলোর চেইন অব কমান্ড। এছাড়া দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে সিন্ডিকেটে আবদ্ধ ছাত্রদল। ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করলেও এখনো সিন্ডিকেট মুক্ত হতে পারেনি এ ছাত্র সংগঠনটি।

আরো জানা গেছে, কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলেও নতুন সিন্ডিকেটের কব্জায় পড়ে যায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কমিটি। তারা দায়িত্ব নেয়ার পর জেলা ভিত্তিক কমিটি করতে গেলেও বাধা হয় সেই সিন্ডিকেট। যোগ্য ও ত্যাগীদের বাদ দিয়ে লবিং করে অর্থের বিনিময়ে কমিটি গঠন করে তারা।

সূত্রে জানিয়েছে, সারাদেশে ১১৭টি ইউনিট কমিটির বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরও এখনো কেন্দ্রীয়ভাবে গঠন করা হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

এদিকে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি দায়িত্ব নেয়ার প্রায় ১ বছর পার হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটি ছাড়া কোনো কমিটি গঠন করতে পারেনি তারা। কয়েকটি নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় তারা। তবে পরবর্তীতে তা আলোর মুখ দেখেনি। পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠায় সেগুলো বাদ দেয়া হয়। জেলা, উপজেলার অবস্থাও একই। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, ঢাকা মহানগরীর ইউনিটগুলো, স্কুল-কলেজের কমিটিগুলো আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে আমরা করতে পারবো বলে আশা করছি। কাজ অনেক এগিয়েও গিয়েছে। সামনের পহেলা জানুয়ারি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা করবো।

বিএনপি’র রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট কোনো গঠনতন্ত্র না থাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিগুলোর মেয়াদ ও আকার ঠিক করা যায় না। তাদের স্বেচ্ছাসেবা দেয়া তো দূরের কথা, সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে মূল দলের আন্দোলন সংগ্রামে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি তারা। বর্তমান কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। তাদেরকে দিয়ে আর চলবে না। নতুন করে কমিটি দিতে হবে।

সবশেষ ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি ও আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটি দিয়েই এখনো চলছে স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যক্রম। চলতি বছের ২৮ জুলাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সংগঠনের সভাপতি শফিউল বারী বাবু। 
 
সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বেচ্চাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুইয়া জুয়েল বলেন, দলের এখনো পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র তৈরি হয়নি। আমাদের গত কমিটি ছিলো সাত বছর, এর আগের কমিটি ছিল পাঁচ বছর। বিষয়টি এ রকম আর কি! ভবিষ্যতে যে কমিটিগুলো হবে তারা গঠনতন্ত্র মোতাবেকই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে।

তিনি জানান, পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি প্রস্তাবনা রেডি করেছি। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে কমিটি এখনো দিতে পারিনি। তবে খুব শিগগিরই এটা দিতে পারবো বলে আশা করছি। 

সাংগঠনিক অদক্ষতা ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে প্রাণহীন হয়ে পড়েছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল। এজন্য বর্তমান কমিটিকে দায়ী করেছেন সংগঠনের পদ প্রত্যাশী ও সাবেক নেতারা।

তারা বলেন, বর্তমান কমিটির নেতারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত যুব সমাজের উন্নয়নে তেমন কোনো কর্মসূচি হাতে নিতে পারেনি। গড়ে তুলতে পারেননি আদর্শ নেতৃত্ব। আন্দোলন সংগ্রাম এমনকি পূর্ণাঙ্গ কমিটি পর্যন্ত গঠনেও তারা ব্যর্থ। কেন্দ্র এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবদল এই তিন কমিটিতে ১৭ জন নেতা নিয়ে চলছে তাদের কার্যক্রম।

হতাশার সুর নিয়ে তারা বলেন, বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে যে সংগঠনটি সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, সেই সংগঠনটি আজ যোগ্য, মেধাবী ও চৌকস নেতৃত্বের অভাবে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে আছে। কার্যকারিতা হারিয়েছে অনেক আগেই। নেতৃত্ব কোন্দলে বিপর্যস্ত অবস্থা সংগঠনটির। নেই কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম। 

জানা গেছে, গত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা অবস্থায় সাইফুল আলম নিরব নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছিলেন। এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি হয়ে নিজের আস্থাভাজনদের রাখতে চান কমিটিতে। অন্যদিকে ছাত্রদল নেতা থাকা অবস্থায় সুলতান সালাউদ্দিন টুকু তার নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেছিলেন। তিনিও তার আস্থাভাজনদের কমিটিতে আনতে চান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পদ প্রত্যাশী বলেন, দুই নেতার এই নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় না। যার ফলে নেতাকর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন বা বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নেয় না। কারণ রাজনৈতিক পরিচয় থাকলে, নেতা-কর্মীরা সেটা বাঁচানোর জন্য হলেও মাঠে নামত। যে লক্ষ্য আদর্শ নিয়ে বর্তমান কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল কিন্তু তারা বিগত দিনে কার্যকর কিছুই দেখাতে পারেনি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একাধিকবার তার মুঠে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

জাগরণ/এমইউ

আরও পড়ুন