• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯, ০১:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯, ০১:১৮ পিএম

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

বেঁচে থাকার শেষ সুযোগ পাবে কি তাফিদা?

বেঁচে থাকার শেষ সুযোগ পাবে কি তাফিদা?
হাসপাতালে বাবা-মার সঙ্গে তাফিদা -ছবি : জাগরণ

বাবা-মার আদরের ৫ বছর বয়সী ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশি তাফিদা রাকিব। এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সে। যদিও জীবন মৃত্যু স্রষ্টার হাতে অথচ তাফিদার বেঁচে থাকার অধিকার এখন আদালতের হাতে। আদালতই নির্ধারণ করবে তাফিদা বেঁচে থাকার শেষ সুযোগ পাবে কি না! মেয়ের জীবন রক্ষায় মাত্র একটি সুযোগ পাওয়ার আশায় আদালতের দারস্থ হয়েছেন তার মা-বাবা।

তাফিদার মা সেলিনা রাকিব দৈনিক জাগরণকে জানান, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে তাফিদা মাথায় ব্যথা অনুভব করে। একটু পরেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাকে স্থানীয় নিউহ্যাম হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ডাক্তাররা পরীক্ষা করে বলেন তাফিদার ব্রেইন মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর তার মাথায় অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সে কোমায় রয়েছে। বর্তমানে তাফিদা রয়েল লন্ডন হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে।

ডাক্তাররা বলছেন, তাফিদার সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, তার জন্য এখন উত্তম হচ্ছে তাকে শান্তিতে মরতে দেয়া।

কিন্তু তাফিদার মা সেলিনা রাকিব বলছেন, তার মেয়ে এখন আগের চেয়ে ভাল এবং সে দিন দিন সুস্থতার দিকে এগুচ্ছে। তিনি জানান, তাকে একজন ভাল নিউরোলজিস্ট বলেছেন- তাফিদার শারীরিক অবস্থা পুরোপরি বোঝার জন্যে আরও সময় লাগবে। এজন্য তার পরিবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ইতালির জেনোয়ার গাসলিনি চিলড্রেনস হাসপাতালে স্থানান্তর করতে চায়। কিন্তু তাফিদার রয়েল লন্ডন হাসপাতালের ডাক্তাররা তাকে ইতালির হাসপাতালে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন না। তারা বার বার বলছেন তাফিদার ব্রেইন আর সুস্থ হবে না। বরং তারা তাফিদার লাইফ সাপোর্ট খুলে নিতে চান। লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়ার মানে হচ্ছে তাফিদার জীবন শেষ বলে ঘোষণা করা। কিন্তু তাফিদার মা ডাক্তারদের লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়ার অনুমতি দিচ্ছেন না।

এদিকে ডাক্তাররা লাইফ সাপোর্ট খুলে নিতে অনুমতি আদায়ের জন্য আদালতে মামলা করেছেন। পাশাপাশি তাফিদার মা সেলিনা বেগমও তার মেয়েকে ইতালির হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অনুমতির জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। দু’টি মামলাই এখন বিচারাধীন। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) আদালতে যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

তাফিদার মামলার আইনজীবী পল কনরাত দৈনিক জাগরণকে জানান, তাফিদার মামলাটি অনেক জটিল একটি মামলা। মামলার বিষয়টি অনেক গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন বিচারক। মামলাতে তাফিদার মায়ের জয়লাভের সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন তিনি।

তাফিদার মা সেলিনা বেগম বলেন, তিনি এ মামলায় হেরে গেলেও তার মেয়ের জীবন রক্ষার জন্যে তিনি সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত যাবেন। তিনি মনে করেন, তার মেয়ের সঙ্গে যা করা হচ্ছে তা অন্য যে কারও সঙ্গেও হতে পারে। তিনি সবাইকে তার মেয়ের জীবন বাঁচার একটা সুযোগ করে দেয়ার জন্য সহযোগিতার অনুরোধ করেন। এছাড়াও তাফিদার বিষয়টি ব্রিটেনের গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার হলেও বাংলাদেশি মিডিয়াতে সেভাবে না আসায় হতাশা প্রকাশ করেন সেলিনা বেগম। 

তাফিদার গ্রামের বাড়ি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলায়। তার পিতা মোহাম্মদ রাকিব একজন কন্সট্রাকশন কনসালটেন্ট এবং মাতা সেলিনা বেগম একজন আইনজীবী।

তাফিদাকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দানের দাবি জানিয়ে গতকাল ১২ সেপ্টেম্বর লন্ডনের বিখ্যাত ট্রাফালগার স্কোয়ারে ‘সিটিজেন গো’ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বিভিন্ন কমিউনিটির লোকজন অংশগ্রহণ করেন। বর্তমানে ব্রিটেনের সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রধান বিষয় ব্রেক্সিট হলেও তারা তাফিদার অসুস্থতা এবং তার জীবন নিয়ে চলমান মামলার গতিবিধি ফলাও করে প্রচার করছে। 

একেএস
 

আরও পড়ুন

  • প্রবাস এর আরও খবর