• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ১২, ২০১৯, ০৮:১২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১২, ২০১৯, ০৮:১২ এএম

আজ ৬ষ্ঠ রমজানুল করিম

সিয়াম পালনই তোমাদের জন্য কল্যাণকর

সিয়াম পালনই তোমাদের জন্য কল্যাণকর

মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আমাদের ওপর কতই না দয়ালু। যদি কোন ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হয়। তাহলে রোজার পরিবর্তে তার ওপর আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বিকল্প পথ ফিদইয়া প্রথা চালু করেছেন। 

পবিত্র কোরআনুল করিমে মহান আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, ওটা নির্দিষ্ট কয়েক দিন। কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে কেউ পীড়িত কিংবা প্রবাসী হয় তার জন্য অপর কোন দিন হতে গণনা করবে, আর যারা এতে অক্ষম তারা তৎপরিবর্তে একজন দরিদ্রকে আহার্য দান করবে। অতএব যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎ কাজ করে তার জন্য কল্যাণ এবং তোমরা যদি বুঝে থাক তাহলে সিয়াম পালনই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (সুরা বাকারা, আয়াত নং-১৮৪) ওয়া আলাল লাযিনা ইউত্বিকুনাহু (সুরা বাকারা, পারা-২, আয়াত নং- ১৮৪) 

এর ভাবার্থ হযরত মোয়ায (রা.) বর্ণনা করেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইচ্ছা করলে কেউ রোজা পালন করতেন আবার কেউ পালন করতেন না। বরং মিসকিনকে খাদ্য দান করতেন হযরত সালমা ইবনে আক্বওয়া (রা.) হতে সহীহ বুখারীতে একটি বর্ণনা এসেছে যে, এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার সময় যে, ব্যক্তি ইচ্ছা করতো রোজা ছেড়ে দিয়ে ফিদইয়া দিয়ে দিত। অতপর ওয়া আলাল লাযিনা ইউত্বিকুনাহু ফিদইয়াতুন তু’আমু মিসকিন অবতীর্ণ হয়। এবং মনছুখ রহিত হয়ে যায়। (ফাতহুল বারী ৮/২৯) 

হযরত ওমর (রা.) এটিকে মানছুখ বলেছেন, আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, এটা মানছুখ নয়। বরং এর ভাবার্থ হচ্ছে বৃদ্ধ পুরুষ-বৃদ্ধা নারী যারা সিয়াম পালন করার ক্ষমতা রাখে না তাদের জন্যই এই ফিদইয়া আদায় করতে হবে। (ফাতহুল বারী ৮/২৮)

হযরত ইবনে আবী লাইলা (রহ.) বলেন- আমি আতার (রহ.) নিকট রমজান মাসে আগমন করি। আমি দেখতে পাই যে, তিনি খানা খাচ্ছেন। আমাকে দেখে তিনি বলেন- ইবনে আব্বাস (রা.) এর উক্তি আছে যে, এই আয়াতটি পূর্বের আয়াতটিকে মানছুখ করেনি বরং এই হুকুম শুধু শক্তিহীন, অচল বৃদ্ধদের জন্য রয়েছে। (ফাতহুল বারী ৮/২৮) 

মোট কথা, যে ব্যক্তি নিজ আবাসে আছে এবং সুস্থ ও সবল অবস্থায় রয়েছে তার জন্য এই নির্দেশ নয়। বরং তাকে সিয়ামই পালন করতে হবে। তবে হ্যাঁ খুবই বয়স্ক, বৃদ্ধ এবং দুর্বল লোক যাদের সিয়াম পালন করার ক্ষমতা নেই, তারা সিয়াম পালন করবে না এবং তাদের ওপর সিয়াম কাযাও জরুরি নয়। কারণ তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই, ফলে ভবিষ্যতেও তারা সিয়াম পালন করতে সক্ষম হবেন না। এমতাবস্থায় তাদের প্রতিটি ছুটে যাওয়া সিয়ামের জন্য ফিদইয়া বা কাফফরা আদায় করতে হবে। 
ইহাই ইবনে আব্বাস (রা.) এবং বিভিন্ন আলেমের অভিমত, যাদের মধ্যে সালফে সালিহীনগণও রয়েছেন। (তাবারি ৩/৪৩১) ইমাম বুখারী (রহ.) এটাই পছন্দনীয় অভিমত। 

তিনি বলেন, খুব বেশি বয়স্ক বৃদ্ধ যার সিযাম পালন করার শক্তি নেই, সে ফিদইয়াই দিয়ে দিবে। যেমন- আনাস ইবন মালিক (রা.) শেষ বয়সে অত্যন্ত বার্ধক্য অবস্থায় দু’বছর ধরে রোজা পালন করেন নি এবং প্রতিটি রোজার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে গোশত-রুটি আহার করাতেন। (ফাতহুল বারী ৮/১৭৯) 

মুসনাদ আবু ইয়ালা গ্রন্থে  উল্লেখ রয়েছে, যখন আনাস (রা.) রোজা পালন করতে অসমর্থ হয়ে পড়েন তখন রুটি ও গোশত তৈরি করে ৩০ জন মিছকিনকে আহার করান। (আবু ইয়ালা ৭/২০৪) 

অনুরূপভাবে গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মহিলারা যখন তাদের নিজেদের ও সন্তানদের জীবনের ভয় করবে  তাদের ব্যাপারেও বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, তারা রোজা পালন করবে না বরং ফিদইয়া দিবে এবং যখন ভয় দূর হয়ে যাবে তখন সিয়ামের কাযা করে নিবে। আবার কেউ কেউ বলেন , শুধু ফিদইয়া যথেষ্ট, কাযা করার প্রয়োজন নেই। কেউ কেউ বলেন, রোজাই পালন করবে, ফিদইয়া বা কাযা নয়।

ফিদইয়া আদায়ের পরিমাণ 
একটি রোজার ফিদইয়া অর্ধ সা’আ গম অথবা তার মূল্য। আমাদের দেশে প্রচলিত আশি তোলার সের হিসেবে অর্ধ সা’আ পৌনে দু-সেরের কাছাকাছি হয়। এই পরিমাণ গম অথবা প্রচলিত বাজার মূল্য কোন মিসকিনকে দান করে দিলে একটি রোজার ফিদইয়া আদায় হয়ে যাবে। ফিদইয়া কোন মসজিদ বা মাদ্রাসায় কর্মরত কোন লোকের সেবার পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েজ নয়, যদি কোন ব্যক্তির পক্ষে ফিদইয়া প্রদান করার সামর্থ না থাকে তবে সে ব্যক্তি ইসতেগফার পড়তে থাকবে এবং মনে মনে নিয়ত করবে, সামর্থ হলে পরে তা আদায় করে দিব। (বয়ানুল কুরআন) 

এসএমএম