• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০১৯, ০৯:৩০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৫, ২০১৯, ০৩:৩০ পিএম

আজ ৯ম রমজানুল করিম

রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্যই তাক্বওয়া অর্জন

রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্যই তাক্বওয়া অর্জন


মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনুল করিমে ঘোষণা করেন যে, হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে (আল কোরআন) আল কোরআনের এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, তোমাদের মধ্যে ত্বাকওয়া অর্জনের গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে। এই আয়াতে লাআল্লাকুম তাত্ত্বাকুন থেকে প্রমাণিত রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্যেই তাক্বওয়া অর্জন। 

আভিধানিক অর্থে তাক্বওয়া শব্দটি ওকিউন থেকে এসেছে। এর এক অর্থ বাঁচা, আরো একটি অর্থ হচ্ছে ভয় করা। পারিভাষিক অর্থে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) এর সকল আদেশ মানা ও নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে দূরে থাকা। 

ইসলামী জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে মুসলমানদের জন্য পঞ্চম স্তম্ভ বিশিষ্ট গৃহের মতো। আর রোজা হচ্ছে সেই গৃহের তৃতীয় স্তম্ভ। এই রোজার মাধ্যমে দেহ ও মনকে সংযমের শাসনে রেখে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন ও তাক্বওয়া অর্জনের কঠোর সিয়াম সাধনাই মাহে রমজানের মূল কাজ। 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, তাক্বওয়া হলো আল্লাহর আদেশের আনুগত্য হওয়া। নাফরমানি না করা, আল্লাহকে স্মরণ করা, তাঁকে ভুলে না যাওয়া, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং কুফরি না করা। তুমি যে, আমার নিকট থেকে দূরে সরে যাবে, আমার ভয় তোমার অন্তরে থাকবে না। তুমি তোমার পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, আত্মীয়-স্বজন, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতির নেশা সবকিছু নিয়ে তুমি যখন দূরে সরে যাবে। তোমাকে কাছে পাবার জন্য হে প্রিয়, তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক গাঢ় করার জন্য হে মুমিন বান্দাগণ, আমি তোমাদের উপর বাধ্যতামূলক এই রোজা দিয়েছি। যাতে তোমাদের অন্তরে আমার ভয়ভীতি ও ভালবাসার সঞ্চার করে নিতে পারি। বান্দার ভয় থাকলেই বান্দা আল্লাহর কাছে আসে। আল্লাহ পাকের ভয় যদি মুমিনের অন্তরে থাকে, তখন মুমিন আল্লাহর কাছে আসবেই, আল্লাহকে ভালবাসবেই এবং আল্লাহর নিকট প্রিয় মুমিন হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবেই। 

হযরত ওমর বিন আব্দুল আজিজ (রা.) বলেছেন, দিনে রোজা রাখা কিংবা রাত্রে জাগরণ করা তাক্বওয়া নয়, বরং তাক্বওয়া হচ্ছে আল্লাহ যা ফরজ করেছেন তা পালন করা এবং তিনি যা হারাম করেছেন তা থেকে দূরে থাকা। 

বিশিষ্ট তাবেঈ তালাক বিন হাবিব বলেন, আল্লাহর আলোর উজ্জ্বলতায় তাঁর হুকুমের পূর্ণ আনুগত্য হওয়া ও পুণ্যের আশা করা এবং আল্লাহর বিশাল শক্তিকে ভয় করা, আর তাঁর নাফরমানি ত্যাগ করার নাম তাক্বওয়া। 

হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) সাহাবী উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে তাক্বওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। উবাই (রা.) বলেন, হে ওমর (রা.) কাঁটাযুক্ত রাস্তায় কীভাবে চলেন? ওমর (রা.) বললেন, বেছে বেছে চলি। উবাই (রা.) বললেন, এটাই হচ্ছে তাক্বওয়া। 

তাক্বওয়ার এই মহান ব্রত সৃষ্টির জন্যই রমজান শরিফ আসে প্রতি বছর। রাসুল পাক (সা.) বলেন তাক্বওয়া বিহীন রোজা গ্রহণযোগ্য নয়। 

তাক্বওয়া অত্যন্ত উচুঁ স্তরের এবং মহামূল্যবান একটি গুণ এবং সব কাঙ্ক্ষিত গুণের সমষ্টিও বটে। যার মধ্যে তাক্বওয়ার গুণ রয়েছে তাঁকে আল্লাহ পাক দুনিয়া ও আখেরাতের সব কল্যাণের জামানত দান করেছেন। তাক্বওয়া এমন এক জিনিস যার মাধ্যমে সব সমস্যা মোকাবিলা করার কথা পাওয়া যায়। আর এই তাক্বওয়া অর্জনকারী মুত্ত্বাক্বীনদের জন্য এমন বেহেশতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, যার প্রশস্ততার মধ্যে সমগ্র পৃথিবী ঢুকে যাবে। সুবহানাল্লাহ।

এফসি