• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০১৯, ০৮:৩৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৩, ২০১৯, ০৮:৪১ এএম

ঈদকে সামনে রেখে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে আসছে গবাদি পশু 

ঈদকে সামনে রেখে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে আসছে গবাদি পশু 

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মিয়ানমার থেকে আসছে গবাদি পশু। গত তিন দিনে মিয়ানমার হতে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোর দিয়ে ৩৯৩৫টি পশু আমদানি হয়েছে। এছাড়া জুলাই মাসজুড়ে মিয়ানমার হতে ১০০৯৫টি গরু-মহিষ আমদানি হয়েছে। সাগরপথে ট্রলারে এসব পশু আমদানি হচ্ছে। পশু আমদানিকারকরা বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে আর দুই দেশের সীমান্ত পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে ঈদুল আজহা পর্যন্ত আরো পশু আমদানি হতে পারে। আমদানিকৃত এসব পশু স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারেও সরবরাহ করা যাবে বলে জানান তারা। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সচেষ্ট রয়েছেন যাতে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু আমদানি করা যায়। সীমান্ত এলাকার (উখিয়া টেকনাফ) মানুষের একমাত্র ভরসা হচ্ছেই মিয়ানমারের এসব পশু। অন্যথায়  উত্তরাঞ্চল থেকে পশু এনে কোরবানি করা সীমান্তবাসীর জন্য দুরূহ ব্যাপার।

শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোরে গিয়ে দেখা যায়, নাফ নদী দিয়ে গরু-মহিষ বোঝাই একের পর এক ট্রলার শাহপরীরদ্বীপ জেটিতে ভিড়ছে। একেকটি ছোট বড় ট্রলারে ৫০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত পশু আমদানি হচ্ছে। সেখান থেকে পশুগুলো খালাস করে করিডোরে নিয়ে আসা হচ্ছে। করিডোরে হাজারো গরু মহিষ মজুদ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এসে গরু-মহিষ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য গরু-মহিষ কিনছেন। 

আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করিডোরে তুলনামূলকভাবে অন্যান্য বছরের চেয়ে পশুর দাম কম রয়েছে। বড়, মাঝারি, ছোট বিভিন্ন সাইজের গরু-মহিষ আমদানি হচ্ছে এইবার।  
এখানে কথা হয় চট্টগ্রামের সাগরিকা পশুর হাটের ব্যবসায়ী কাশেমের সাথে। তিনি জানান, একজন আমদানিকারকের কাছ থেকে ১৮৮টি গরু কিনেছেন প্রতিটি ৯৪ হাজার টাকা দামে। প্রতিটি গরুর পেছনে ৮-১০ হাজার টাকা কম পেয়েছেন বলে জানান তিনি। 

পশু আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম জানান, শাহপরীরদ্বীপ করিডোর দিয়ে সারা বছর মিয়ানমার থেকে গবাদি পশু আমদানি হয়ে থাকে। তবে ঈদ উল আযহার সময় বাড়তি চাহিদা থাকায় অধিক সংখ্যক গবাদি পশু আমদানি করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এখানকার গবাদি পশু স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম-নোয়াখালী-কুমিল্লাসহ সারাদেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। 

অপর আমদানিকারক আবু সৈয়দ জানান, এইবার অধিক সংখ্যক গবাদি পশু আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে পর্যাপ্ত সংখ্যায় কোরবানির পশু আমদানি করা সম্ভব হবে। 

করিডোরের গবাদি পশু ব্যবসায়ী ইসমাঈল জানান, আমদানিকৃত গবাদি পশুর রাজস্ব পরিশোধের জন্য শাহপরীরদ্বীপে সোনালী ব্যাংকের একটি বুথ স্থাপন করার দাবি দীর্ঘদিনের। এছাড়া করিডোরে পশুগুলো রাখার জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই। ফলে রোদ বৃষ্টিতে ভিজে পশুগুলোর অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। 

ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ মনির জানান, পথে গরু-মহিষ বোঝাই যানবাহনগুলো যাতে কোন সমস্যায় না পড়ে সে ব্যাপারে আইনশৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি প্রয়োজন। তবে তিনি জানান, শাহপরীরদ্বীপের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ঠিক থাকলে গবাদি পশু দেশীয় বাজারে সরবরাহ করা আরো সহজ হতো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীরা সরাসরি শাহপরীরদ্বীপ হতে গাড়ি বোঝাই করে গবাদি পশু নিয়ে যেতে পারতেন।    

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শওকত আলী জানান, টেকনাফে আড়াই লাখ মানুষের মাঝে সাড়ে ৬ হাজারের মতো কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে খামারি ও ব্যবসায়ীদের কাছে ৭ হাজারের মতো পশু রয়েছে। এইবারের আমদানিকৃত পশুগুলোর মধ্যে খুড়া রোগ নেই বলে জানান তিনি। তবে স্থানীয়দের বাইরে উখিয়া-টেকনাফের ১১ লাখ রোহিঙ্গার জন্য কি পরিমাণ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে সে সম্পর্কে ধারণা নেই বলে জানান তিনি।  

টেকনাফ শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তা মো. ময়েজ উদ্দিন জানান, গত জুলাই মাসে শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোর দিয়ে ১০০৯৫টি গরু-মহিষ আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ৬৭৪৪টি গরু ও ৩৩৫১টি মহিষ। যার বিপরীতে ৫০ লাখ ৪৭ হাজার ৫শ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এছাড়া গত জুন মাসে ১০১৭৭টি গরু-মহিষ আমদানি হয়েছিল করিডোর দিয়ে। রাজস্ব আয় হয়েছিল ৫০ লাখ ৮৮ হাজার ৫শ টাকা। 

বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল ফয়সল হাসান খান জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার হতে ব্যবসায়ীরা ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশু আমদানি বৃদ্ধি করেছেন। বিজিবির তত্ত্বাবধানে শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোর দিয়ে পশুগুলো আমদানি হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে পশু আমদানি নির্বিঘ্ন করতে বিজিবি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। 

টেকনাফ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএমএস দোহা জানান, কোরবানির পশুর হাটে চাঁদাবাজি, জাল টাকার ব্যবহারসহ ক্রেতা-বিক্রেতাদের যাতে কোন ধরনের সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। 

টেকনাফের হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক মোর্শেদুল আলম চৌধুরী জানান, সড়কে পশুবাহী কোন যানবাহনে যাতে হয়রানী-চাঁদাবাজির শিকার না হয় সে ব্যাপারে টহল জোরদার রয়েছে। শুধু পশুবাহী নয়, সড়কে কোনো ধরনের নৈরাজ্য ঠেকাতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।

কেএসটি

আরও পড়ুন