• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০১৯, ০৯:৪২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৭, ২০১৯, ০৯:৪৫ পিএম

বাজছে বিদায়ের সুর, মঙ্গলবার বিজয়া দশমী

বাজছে বিদায়ের সুর, মঙ্গলবার বিজয়া দশমী

হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা বিজয়া দশমী আগামীকাল মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে। আজ বাজছে বিদায়ের সুর। দেবী এসেছে ঘোড়ায়, যাবেও ঘোড়ায়। আজ মহানবমীর সন্ধ্যায় আরতি শেষে দেবীর বন্দনায় প্রতিটি পূজামণ্ডপে বিষাদের সুর বাজতে শুরু করে। 

মহানবমীতে আজ পূজা শুরু হয় সকাল সাড়ে ৬টায়। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় আরতি প্রতিযোগিতা। দিনভর চলেছে চণ্ডীপাঠ আর ভক্তদের কীর্তনবন্দনা। রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মহানবমীতে বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে ছিল ভক্ত ও দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড়। নবমী পূজা শেষে অশ্রুসজল নয়নে ভক্তরা দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার পায়ে অঞ্জলি দিয়েছে।

হিন্দু শাস্ত্রমতে, নবমী তিথিতে রাবণ বধের পর শ্রী রামচন্দ্র এই পূজা করেছিলেন। নীলকণ্ঠ ফুল, যজ্ঞের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় নবমী বিহিত পূজা। নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদলাভ হয়।

শাস্ত্র অনুযায়ী- আজ শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে দশভুজা দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা শুরুর পর ভক্তরা প্রার্থনা করতে থাকে দেবীর উদ্দেশে। নীল অপরাজিতা ফুল নবমী পূজার বিশেষ অনুষঙ্গ। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেয়া হয়। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়। পূজা শেষে যথারীতি অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

আগামীকাল মঙ্গলবার মা দুর্গার বিদায়। তাই আজ শেষবারের মতো দেবীর আশীর্বাদ কামনায় নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর সব বয়সের ভক্ত নিবিষ্ট মনে প্রার্থনা করে। প্রতিটি মণ্ডপেই কয়েক দফা করে পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হয়। বিদায় বেলায়ও চলেছে ঢাক আর শঙ্খধ্বনি, টানা মন্ত্র পাঠ, উলুধ্বনি, অঞ্জলি, ঢাকের বাজনার সঙ্গে ছিল ধুনচি নৃত্য। সন্ধ্যায় আরতির পাশাপাশি মণ্ডপে মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অষ্টমীর রাত থেকে শুরু হয়ে নবমীর সারা দিনই কম-বেশি বৃষ্টি ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল ভক্ত ও দশনার্থীর ভিড়। ঢাকেশ্বরী ও রামকৃষ্ণ মন্দিরের পাশাপাশি রাজধানীর রমনা কালীমন্দির, বনানী পূজামণ্ডপ, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, স্বামীবাগ লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম, ধানমণ্ডি কলাবাগান মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, বাংলাবাজার পূজা কমিটি, নর্থব্রুক হল রোড, তাঁতীবাজার, শঙ্ঘমিত্র শাঁখারীবাজার, পানিটোলা, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, হাজারীবাগ সুইপার কলোনি, গৌতম মন্দির, ভোলাগিরি আশ্রম, রাধাবল্লভ জিউ বিগ্রহ মন্দির, মিরপুর, বাসাবো বালুর মাঠের আয়োজনে মানুষের সমাগম ছিল বেশি। 

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে দেশের পূজামণ্ডপে দুর্গা দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এ বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার বন্দনায় পূজা করা হয়। মণ্ডপে-মন্দিরে পঞ্চমীতে সন্ধ্যায় এ বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

এবার সারাদেশে ৩১ হাজার ৩৯৮ পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যা গত বছরের চেয়ে ৪৮৩টি বেশি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। ঢাকা মহানগরীতে এবার পূজামণ্ডপের সংখ্যা ২৩৭। যা গত বছরের চেয়ে তিনটি বেশি।

এ বছর ঢাকা বিভাগে ৭ হাজার ২৭১, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪ হাজার ৪৫৬, সিলেট বিভাগে ২ হাজার ৫৪৫, খুলনা বিভাগে ৪ হাজার ৯৩৬, রাজশাহী বিভাগে ৩ হাজার ৫১২, রংপুর বিভাগে ৫ হাজার ৩০৫, বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৭৪১ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ হাজার ৬৩২ মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

পূরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লংকা যাত্রার আগে শ্রী রামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে, যা শারদীয় দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। দেবীর শরৎকালের পূজাকে এজন্যই হিন্দুমতে অকাল বোধনও বলা হয়। 

টিএইচ/ এফসি

আরও পড়ুন