• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০১৯, ০৩:৩৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১২, ২০১৯, ০৩:৪৫ পিএম

ঈদে মিলাদুন্নবী-বাঙালি মুসলমানদের অন্যতম প্রধান সংস্কৃতি 

ঈদে মিলাদুন্নবী-বাঙালি মুসলমানদের অন্যতম প্রধান সংস্কৃতি 

সংস্কৃতি যদি হয় একটি জাতির জাগরণী তৎপরতার উপলক্ষ্য কিংবা স্বাতন্ত্র্যের বহমান পরিচায়ক তবে বাঙালি-মুসলমানদের প্রধান সাংস্কৃতিক মঞ্চ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজের উৎফুল্লমণ্ডিত উৎসবমুখর পরিবেশের যে ধারা এখনো পর্যন্ত প্রবহমান তার প্রতিষ্ঠাকাল নির্ণয় দুরূহ। 

শুধু বাঙালি-মুসলিম সমাজেই নয় বরং বিশ্বের তাবৎ মুসলিম সমাজেই অত্যন্ত উল্লাসের সাথেই দিবসটি বৃহৎ পরিসরে উদযাপিত হয়; তবে বাঙালি-মুসলিম সমাজে এ প্রসঙ্গটি আমল বা ইবাদতের লক্ষ্যের চেয়ে সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণেই আপ্যায়িত হয় বেশি। 

তাই বলে ঈদে মিলাদুন্নবীকে যে আমল বা ইবাদত হিসেবে বাঙালি-মুসলিমরা গণ্য করে না তা কিন্তু নয় এক্ষেত্রে তাদের নিকট এ প্রসঙ্গটি আমল বা ইবাদতের নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি; সংস্কৃতিরূপে গ্রহণ করে একে ধর্মজাতীয় উৎসবে রূপান্তর করার এক অতিকাঙ্ক্ষিত চেষ্টা তাদের মধ্যে স্পষ্টভাবেই লক্ষ্য করা যায়। 

১৭৫৭ সালে উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের অঘোষিত ইতি ঘটে। পরবর্তী শতাব্দী তথা ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ পর্যন্ত বাঙালি-মুসলিম সমাজ ছিল কোণঠাসার গভীর গহ্বরে; নির্যাতন আর নিপীড়নের কথা বিয়োগ করলেও সামাজিকভাবে ছিল অত্যন্ত মলিন, বিপর্যস্ত এবং অবশ্যই বিধ্বস্ত। বিধ্বস্ততার ছাপ শুধু চলনে-বলনে সীমাবদ্ধ ছিল না, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষাতেও পড়েছিল যন্ত্রণার কাতরানি; শিক্ষার প্রভাব খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রবাহিত হয়েছে সাংবাদিকতা ও সাহিত্যেও। 


বাঙালি-মুসলমানের এই বিধ্বস্ত অবস্থা ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর আরও গতিশীল হয়। ভারতবর্ষের ভাগ্য আংশিক সুপ্রসন্ন হবার সাথে সাথে মুসলিমরাও কিছুটা সাহসী হয়ে ওঠে। 

যার নিদর্শনস্বরূপ মীর মশাররফ হোসেন, কবি কায়কোবাদ এবং নজিবুর রহমানের মতো সাহসী সাহিত্যিকদের নাম স্মরণীয়। তৎকালীন সময়ে রাজনৈতিক যাতাকলে পিষ্ট হয়ে লাঞ্ছিততর বাঙালি মুসলমানদের জন্য ফরায়েজী, ওহাবী ইত্যাদি আন্দোলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে; কোণঠাসা ভাব দূরীকরণে সদাসহায়ক ছিল। 

সে কুণ্ঠিত সময়ে দুই ঈদ, শবে বরাত, শবে কদর এবং মোহররমসহ অন্যান্য যে সাংস্কৃতিক উপলক্ষ্য বাঙালি-মুসলমানের ছিল তার চেয়ে ঢের বেশিগুণে তারা উৎফুল্লতার সহিত লালন এবং পালন করেছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। যার প্রমাণরূপে ১৯০০ সালে মীর মশাররফ হোসেনের মিলাদুন্নবী-কেন্দ্রিক রচিত “মৌলুদ শরীফ” উজ্জ্বলতর এবং গ্রহণীয়। 

মীর মশাররফ যে এ সুবিস্তৃত গ্রন্থটি মিলাদুন্নবীকে কেন্দ্র করেই রচেছেন তা গ্রন্থের শুরুতেই নির্দ্বিধায় বলেছেন। পরবর্তী কয়েক বৎসরের মধ্যে চতুর্থ সংস্করণ পর্যন্ত নিঃশেষ হয়ে যায়; এতেই অনুমেয় যে, তৎকালীন সময়ে “মিলাদুন্নবী” বাঙালি-মুসলমানদের নিকট কতটা তাৎপর্যবহ এবং আদরণীয় ছিল। 

বাগ্মীপ্রবর মুনশি মেহেরুল্লাহর ‘মেহেরুল ইসলাম’ গ্রন্থ ও মিলাদ শরীফের বেশ কিছু কাসিদা, গজল উল্লেখ ছিল যেগুলো বাঙালি-মুসলিম সমাজে জনশ্রুতিরূপে পরিণত হয়েছিল। মুসলমানদের দৈনন্দিন ফরজ ইবাদত এবং অন্যান্য বহু উৎসব-উপলক্ষ্য বর্তমান থাকা সত্ত্বেও মিলাদুন্নবী-কেন্দ্রিক বিস্তৃত গ্রন্থটি প্রণয়ন এবং বাঙালি মুসলিম সমাজের অত্যুচ্ছ্বাসের সাথে সে গ্রন্থটি লুফে নেওয়াতেই দ্বন্দমুক্ত বিবেকে বোঝা যায়, মিলাদুন্নবীকে বাঙালি-মুসলমান কেবল আমলী দৃষ্টিতে দেখেই তুষ্ট ছিল না, এটাকে সাংস্কৃতিক পোষাকে সাজিয়ে নিজেদের ধর্মীয় পরিচয়ের “ব্র্যান্ড এম্বাসেডর” হিসেবে রূপদানই ছিল অসেচতন লক্ষ্য। 

কিন্তু দিন যতই বাড়তে লাগলো অসচেতন ভাবকে কাটিয়ে সচেতনতায় প্রবেশ করল অনেকেই। সামাজিকভাবে ঈদে মিলাদুন্নবীকে কেন্দ্র করে সাড়াসৃষ্ট আয়োজন একটি ঐতিহাসিক বিষয়। বাংলায় নওয়াবী শাসনের প্রতিষ্ঠাতা নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ মহাড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করতেন। রবিউল আওয়ালের প্রথম বারো দিন সর্বসাধারণের জন্য খাদ্যভোজের আয়োজন করতেন; পুরো মুর্শিদাবাদ শহর আলোকসজ্জায় আলোড়িত করে তুলতেন এ কাজে সেনাপতি নাজির আহমদের অধীনে এক লক্ষ্য লোক নিয়োজিত করা হতো। মীরাত-ই-সিকান্দরী গ্রন্থে বলা আছে, গুজরাটের সুলতান মুজাফফর আলেম-উলামাদের আমন্ত্রণ জানাতেন এবং মূল্যবান উপহারাদি প্রদান করতেন। 

গুজরাট সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ রাজপ্রাসাদে রবিউল আওয়ালের প্রথম বারো দিন ধর্মীয় আলোচনা ও ভোজসভার আয়োজন করতেন, বিশেষ ব্যক্তিদেরকে উপঢৌকন দিতেন। বিশিষ্ট্য ইতিহাস-গবেষক ডক্টর এম.এ. রহিমের অনন্য খ্যাতিমান গ্রন্থটি বাংলা একাডেমী থেকে অনূদিত বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস-এ উপর্যুক্ত ঐতিহাসিক তথ্য-পেশের পর ২য় খন্ডের ১৯৮ পৃষ্ঠায় বলেন, “ধার্মিক ও বিদ্বান ব্যক্তিদেরকে উপহার প্রদান এবং রোজা রাখা ও মুসলমানদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্যেও মহানবীর জন্মোৎসব একটা বিশেষ উপলক্ষ ছিল।”

১৯২০ সালে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে কাজী নজরুল ইসলাম ফাতেহা-ই-দোয়াজ্-দহম নামক বিশ্বসাহিত্যের বিরল কাব্যের প্রথমেই যখন “নাই তাজ - তাই লাজ” লিখেছেন তখন আমাদের বুঝতে বেগ পেতে হয় না যে, কাজী নজরুল একান্তই ঈদে মিলাদুন্নবী-কেন্দ্রিক কাব্যেও বাঙালি-মুসলমানদের মুকুটহীন শোচনীয় অবস্থাকে ঈদে মিলাদুন্নবীর দীপ্ত শক্তিমত্তার মাধ্যমে পাশ কাটাতে প্রেরণা যুগিয়েছেন।

তখনকার বাঙালি মুসলিম-সাহিত্যিকরাও ঈদে মিলাদুন্নবীকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র কবিতা, প্রবন্ধ লিখেছেন। মীর মশাররফ, শান্তিপুরের কবিখ্যাত মোজাম্মেল হক, ইয়াকুব আলী চৌধুরী, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ, কবি দাদ আলী মিঞা, কাজী নজরুল ইসলাম, সূফি মোতাহের হোসেন, সূফি জুলফিকার হায়দার, মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ, ফররুখ আহমদ, সুফিয়া কামাল এবং বে-নজীর আহমদসহ আরও অনেক বাঙালি-মুসলিম সাহিত্যিকের নাম আনা যাবে যাঁরা ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে স্বতন্ত্র কবিতা, প্রবন্ধ লিখে প্রকাশ এবং প্রচার করেছেন। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসব সাহিত্যিকরা কিন্তু মুসলমানদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতসমূহ, উৎসব-উপলক্ষ্য নিয়ে তেমন স্বতন্ত্র রচনায় মনোনিবেশ করেননি; মিলাদুন্নবী নিয়ে কেন স্বতন্ত্র রচনায় মাতলেন? উত্তরটা গভীরতর স্পষ্ট। মিলাদুন্নবী শুধুমাত্র ইবাদতের গন্ডিতেই বদ্ধ ছিল না; বাঙালি-মুসলমানদের প্রধান সাংস্কৃতিক মঞ্চ হিসেবেই পরিগণিত হয়েছিল। আর এ কথা তো সাহিত্যপ্রেমীদের অজানা নয় যে, একজন স্বাভাবিক কবি, সাহিত্যিক মাত্রই তাঁর কবিতায়, প্রবন্ধে সর্বোপরি রচনায় স্ব-সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, অনুসঙ্গ ও সংস্কৃতি আবেদনময়ী ভাষায় এবং জাগরণী ভঙ্গিমায় ফুটিয়ে তুলবেন বাঙালি-মুসলিম সাহিত্যিকবৃন্দ ঠিক  তাই করেছেন। 

বিগত শতাব্দীর কথাই যদি ধরি, বাঙালি-মুসলিম সমাজ যে উৎফুল্লতা নিয়ে উৎসবব্যঞ্জক পরিবেশ সৃষ্টি করে ঐশ্বর্যপ্রাচুর্যে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করছেন তন্মধ্যে অর্ধাংশেরও কি জান্নাত লাভ কিংবা সওয়াবের প্রাসাদ গড়ার মনোবাঞ্ছা ছিল? প্রশ্নটি অধিক ব্যখ্যাসুলভ এবং কিছুটা তর্কসাপেক্ষ। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে অত্যধিক পরিমাণে সাজ-সজ্জা, অত্যুজ্জ্বল আলোকবর্তিকার সমাবেশ কিংবা জনারণ্যের জুলুস “ইসলামী নীতিসিদ্ধ কি-না” তা নিয়ে গবেষণাদৃষ্টি জাগ্রত করলে ইতিবাচক উত্তর হয়তো পাওয়া যাবে, কিন্তু সে উত্তরের ধার কে ধারে! উপরন্তু সামগ্রিক ঐশ্বর্যতার উপর অনেকে বিরূপ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও যারা ঐশ্বর্যপ্রাচুর্যে ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়মিত পালন করে থাকেন তাদের পালন-রীতির তরী কিন্তু আরও অধিক গতিবেগে বয়ে চলে বঙ্গনদে। 

কারণ, বাঙালি মুসলমানদের প্রাণে ঈদে মিলাদুন্নবী এতটা প্রাচুর্যের নহর বইয়ে দেয় যা অন্য কোনো উপলক্ষ জোগান দিতে পারে না; মিলাদুন্নবী তাদের জাগরণী স্রোতকে এতটা প্রাবল্যবান করে যার ছিটেফোঁটাও অন্য কোনো উপলক্ষ থেকে সরবরাহ হয় না; সর্বোপরি ঈদে মিলাদুন্নবী বাঙালি-মুসলমানদের অপ্রতিদ্বন্দী সংস্কৃতিরূপে পরিগণিতই নয় শুধু, প্রসিদ্ধও বটে। 

আধুনিক বাঙলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ প্রাবন্ধিকদের মধ্যে অন্যতম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীন উপাচার্য সাহিত্যিক আবুল ফজল ১৯৭২ সালে ‘সংস্কৃতি প্রসঙ্গে’ প্রবন্ধে লিখেছেন, “সংস্কৃতির এক সহজাত ধর্ম অচলায়তনকে ভাঙা, ডিঙিয়ে যাওয়া, কোথাও আটকে না থাকা; আটকে না পড়া।” এ সমীকরণের ভিত্তিতে সহজাত প্রশ্ন, মিলাদুন্নবী কি মসজিদের আঙিনা ডিঙিয়ে মাঠে-ময়দানে, ঘরে-ঘাটলায়, সাহিত্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে যায়নি? সংস্কৃতির এ সহজাত ধর্মের পরীক্ষাগারেও মিলাদুন্নবী খুব সহজেই মানোত্তীর্ণ হয়। 

খানিক বাদেই উনি লিখেন, “সংস্কৃতি হচ্ছে মনের খোরাক এ খোরাকের সাহায্যে মন-মানসের বিকাশ আর সম্প্রসারণ ঘটে।” সত্যিকারর্থে মনের খোরাক যদি সংস্কৃতির চিহ্নরূপেই পরিগণিত হয় তবে  বাঙালি-মুসলমানের নিকট ঈদে মিলাদুন্নবীর আশপাশে অন্য কোনো সংস্কৃতির জায়গা হবে কি? প্রশ্নটা খুবই গভীর শক্তিশালী। 

আর যারা নিয়মিত খবরের কাগজে দৃষ্টি রাখেন এটা তাদের চোখ এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয় যে, বাংরাদেশের শীর্ষসারির প্রায় প্রতিটি দৈনিকই ঈদে মিলাদুন্নবীর দিবসটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব এবং দায়িত্বের সাথেই প্রচার করা হয়। যা শবে মেরাজ-বরাত-কদর এবং মোহররমের সময়ও তেমন দেখা যায় না। আর পত্রিকাবলীর সম্পাদকমন্ডলীও এটাকে নিছক ইবাদত হিসেবে নেন না; একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক মঞ্চ হিসেবেই বরণ করে থাকেন সচেতন কিংবা অসচেতন, যে কোনো ভাবেই হোক। 

এখানে একটি অতিশয় প্রণিধানযোগ্য তথ্য হচ্ছে,  ১৯৩৭ সালের অক্টোবরে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ‘এক জাতি গঠন’ প্রবন্ধে  বাঙালি-মুসলিমদের পক্ষথেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনী-দিবস তথা ঈদে মিলাদুন্নবীকে “জাতীয় উৎসব” হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। দুই ঈদ, শবে বরাত-মেরাজ-কদর এবং মোহররম থাকতেও ডক্টর শহীদুল্লাহ্ কেন ঈদে মিলাদুন্নবীকেই প্রস্তাব করেছিলেন তা আজ গভীরভাবে এবং ভীষণভাবে উপলব্ধির সময় এসেছে। 

প্রাবন্ধিক আবুল ফজল “সাহিত্য ও সংস্কৃতি” প্রবন্ধে লিখেছেন, “সংস্কৃতির মূল কাণ্ড সাহিত্য। সাহিত্যকে অবলম্বন করেই সাধারণত সংস্কৃতির নানা শাখা-প্রশাখা দল মেলে।’’ এ সূত্র ধরে একেবারে নিঃসঙ্কোচে বলা যায়, ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সংস্কৃতির মূল কাণ্ডটি অত্যন্ত মজবুত এবং সম্প্রসারিত; দুই ঈদ ব্যতীত অন্য কোনো ইসলামী উপলক্ষ্য বাঙালি-মুসলিম সাহিত্যিকদের বাগানে এতটা বিস্তৃত শিকড়েমূলকাণ্ড গাড়তে পারেনি। 

বিরোধীগোষ্ঠীর দিকে না তাকিয়ে বাঙালি-মুসলিম সমাজে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহাসিক সামাজিক গুরুত্ব অনুধাবন, বাঙালি-মুসলিম সাহিত্যিকদের রচনায় ঈদে মিলাদুন্নবীর দৃঢ় অবস্থান, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্'র ঐতিহাসিক প্রস্তাবের উপলব্ধি এবং বর্তমান পরিসরের সার্বিক পরিস্থিতির চাহিদা পূরণের নিমিত্তে ঈদে মিলাদুন্নবীকে মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বাতন্ত্র্য পরিচায়করূপে যথার্থ সমাদর করাই বাঙালি-মুসলিম সমাজের একান্ত এবং সচেতন চাহিদা।


তথ্যসূত্র: 
১. মশাররফ রচনা-সম্ভার; বাংলা একাডেমী, তৃতীয় খÐ, ১৯৮৪
২. বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস; ড.এম.এ. রহিম, বাংলা একাডেমী থেকে অনূদিত, ১৯৯৬
৩. নির্বাচিত প্রবন্ধ; আবুল ফজল, সময় প্রকাশন
৪. ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ স্মারকগ্রš’; বাংলা একাডেমী, ১৯৮৫, ৩০৪ পৃ.

লেখক: 
ধর্মীয় প্রাবন্ধিক।