• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২০, ০২:৩৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১, ২০২০, ০২:৩৬ এএম

আজ পবিত্র ঈদুল আজহা

আজ পবিত্র ঈদুল আজহা

ত্যাগ আর উৎসর্গের আদর্শে মহিমান্বিত পবিত্র ঈদুল আজহা আজ শনিবার। এবার ঈদ এসেছে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। করোনা মহামারির সঙ্গে বন্যার আঘাতে বিপর্যস্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অগণিত মানুষ। তাদের জীবনের ওপর নেমে আসা এ দুঃসময়ের অন্ধকার কবে কাটবে, তাও অজানা। 

এবারের রোজার ঈদের মতো এই ঈদের সঙ্গেও আসেনি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়া চিরায়ত খুশির আমেজ। গত মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনা মহামারি তিন হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে। লাখো মানুষের জীবিকা ছিনিয়ে নিয়েছে। রোজগার হারানো মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হয়েছে। সঞ্চয় ভেঙে, ত্রাণে কিংবা ধারদেনায় যাদের জীবন চলছে তাদের ঘর থেকে ঈদ দূর আকাশের চাঁদের মতোই দূরের বিষয় হয়ে গেছে।

তবুও জীবনের গতি থেমে থাকে না কোনও বাধাতেই। যত দুর্যোগই থাকুক, ঈদ বলে কথা! সবকিছুর পরও এই দিনটিতে একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানাবে মানুষ। সাধ্যমতো দান, খয়রাত, কোরবানির গোশত বিলি, খাওয়া-দাওয়া হবে। দুঃসহ দিনে কিছুটা হলেও আনন্দের সুযোগ তৈরি হবে। 

আল্লাহভীতি থেকে আত্মত্যাগের শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে আল্লাহর পথে কোরবানি করাই হলো ঈদের শিক্ষা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়- ‘চাহি নাকো গাভী দুম্বা উট, কতটুকু দান? ও দান ঝুট। চাই কোরবানি, চাই না দান।’

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ শীর্ষ রাজনীতিকরা আলাদা বাণী দিয়েছেন। তবে বহু বছরের মধ্যে এই দ্বিতীয়বার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদের দিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন না। গত ঈদুল ফিতরেও শুভেচ্ছা বিনিময় হয়নি।

ঈদের শুরুটা হয় ঈদগা সবাই মিলে নামাজ পড়তে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। করোনার কারণে স্মরণকালে ঈদুল আজহার মতো জামাত হবে না ঈদগায়। গত ৫০ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় ঈদগা ময়দানে নেই জামাতের আয়োজন। করোনার বিস্তার রোধে দেশের কোথাও এবার ঈদগায় জামাত হবে না।

এবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদুল আজহার ছয়টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে। এই জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান। প্রথম জামাতের পর দ্বিতীয়টি সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে, পরের চারটি জামাত যথাক্রমে সকাল ৮টা ৪৫, ৯টা ৩৫, সাড়ে ১০টা এবং বেলা ১১টা ১০ মিনিটে সর্বশেষ জামাত হবে।

সরকার বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবজনিত প্রেক্ষাপটে ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহার নামাজের জামাতও খোলা জায়গার পরিবর্তে নিকটস্থ মসজিদে আদায়ের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের পূর্বে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।

প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে অজু করে মসজিদে আসতে হবে এবং অজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদে অজুর স্থানে সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে এবং মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে।

ঈদের নামাজের জামাতে আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। শিশু, বৃদ্ধ, যেকোনো ধরনের অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করা যাবে না।

বাঙালির কাছে ঈদ শুধু আনন্দের নয়, সব ভেদাভেদ ভুলে পরম শত্রুকেও বুকে টেনে নেয়ার দিন। কিন্তু করোনার সংকটে এখানেও বাধা রয়েছে। ঈদ জামাতের পর কোলাকুলি করা যাবে না, হাত মেলানো যাবে না।

ধর্মীয় চিন্তাবিদরা বলেছেন, কোরবানির ঈদ যতটা না আনন্দের তার চেয়ে বেশি উৎসর্গের। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, চার হাজার বছর আগে আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু নিজ সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আল্লাহর কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর এই ত্যাগের মনোভাবের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর মুসলমানরা কোরবানি করে থাকেন।

কোরবানির গোশতের তিন ভাগের এক ভাগ দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করার বিধান রয়েছে। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনো দিন পশু কোরবানি দেওয়া যায়। সে হিসেবে রবি ও সোমবারও কোরবানি করা যাবে।

কেএপি

আরও পড়ুন