• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯, ১০:৪৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯, ০১:০৪ পিএম

বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফিরিয়ে দিতে ট্রাম্পকে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ

বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফিরিয়ে দিতে ট্রাম্পকে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ

বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সংক্রান্ত একটি ফাইল ট্রাম্পের হাতে নিজেই পৌঁছে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানেই এ কথা জানান তিনি। 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই জাতির পিতার খুনিকে আশ্রয় দেবে না। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে যেন ওয়ান ইলেভেন না হয়, সে জন্যই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। 

উন্নয়নের পুরোটা সুফল যেন দেশের মানুষ ভোগ করতে পারেন সে জন্য আবারও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।

ওয়ান ইলেভেনের পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য আগে থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এতে অনেকেই অখুশি হবে। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। 

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ওয়ান ইলেভেনের মতো পরিস্থিতির দরকার নেই, দুর্নীতি দমনে যা করার দরকার তা তিনিই করবেন। 

দেশে চলমান দুর্নীতি-বিরোধী অভিযানে কেউ ছাড়া পাবেন না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে যেন তার কুপ্রভাব না পরে সেটা যেখানে হোক আমাকে দেখতে হবে। সেজন্যই এই অভিযান আমি চালাচ্ছি।

ক্যাসিনো বিষয়ে তিনি বলেন এর শেষ দেখা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিানিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রকল্প প্রস্তুতি থেকে শুরু করে প্রকল্পের কাজ পাওয়ার জন্য অর্থ বিতরণের সুযোগ নিয়ে কিছু লোক বিপুল সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অর্থ চটের বস্তাতেও লুকিয়ে রাখা হচ্ছে এবং ওয়ান ইলাভেনের পট পরিবর্তনের পর আমরা এটা দেখেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, হঠাৎ করে যে সম্পদ আসে তা দেখানো কিছু মানুষের স্বভাব। আমাদের সমাজের এই অংশটিকে আঘাত করতে হবে।

জনগণের জন্যই তার রাজনীতি এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় এসেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি সব সময় জনগণের মঙ্গলের কথাই চিন্তা করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে আমার দল এবং সমাজের ওপর ক্ষতিকারক কোন প্রভাব পড়ছে কিনা সে বিষয়েও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমাকে সেটা মোকাবেলাও করতে হবে। যে কারণে আমি এই অভিযান চালাচ্ছি (দুনীতি বিরোধী)।

কিছু লোক এই অভিযান পরিচালনায় তার ওপর অখুশি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু আমি এটার পরোয়া করি না কেননা আমার ক্ষমতা এবং সম্পদের প্রতি কোন মোহ নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং চলবে। যদিও এজন্য কোনও বিশেষ কমিটি গঠনের প্রয়োজন নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, দুর্নীতির কোনও তথ্য পেলেই আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি, আমরা জাতীয় নিরাপত্তা সেল গঠন করেছি এবং তাদের সময় মত নির্দেশনা প্রদান করছি। এই অভিযান চলতে থাকবে এই নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রত্যেক মানুষের উন্নত ও সুন্দর জীবনযাপন করবে। এই সুযোগে কিছু সংখ্যক মানুষ সমাজকে বিষাক্ত করবে, এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে আমি এই নির্দেশ দিয়েছি।

তিনি বলেন, দেশে খেলাধুলার উন্নয়নে ক্রীড়াসামগ্রীর আমদানি খুবই ভালো। কিন্তু এটা অকল্পনীয়, ক্রীড়াসামগ্রী আমদানির নামে জুয়ার জিনিসপত্র আনা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে যে কোনও ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির তৎপরতা প্রতিরোধে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে।

তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং আমরা এই অভিযানে প্রায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে। এখন আমরা দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছি।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং এ লক্ষ্যে বহু প্রকল্প তৈরি ও এসব প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হবে এবং এসব কাজও সম্পন্ন হবে নির্বিঘ্নে। এতে কোনও অনিয়ম হলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হবে। এর ফলে আমরা যেভাবে দেশের উন্নয়নের চিন্তা করছি, তা সম্পন্ন হবে না।

ট্রাম্পকে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি
ট্রাম্পকে চিঠি প্রদান সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন যে, তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের মধ্যাহ্নভোজে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্পকে একটি চিঠি দিয়েছেন।

এই চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী জাতির পিতার খুনিদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। মূলত এ বিষয়ে তাকে (ট্রাম্প) চিঠি দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকারের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় খুবই সোচ্চার। তাহলে কী করে এই দেশে (যুক্তরাষ্ট্র) জাতির পিতা, নারী ও শিশু হত্যাকারীরা থাকতে পারে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন খুনি কানাডায় রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করছে। আমরা সবাইকে খুনিদের ফেরত পাঠাতে অনুরোধ করেছি। এই খুনিরা ওইসব দেশের জন্যও নিরাপদ নয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই দেশগুলো বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রত্যার্পণ করলে তখন বাংলাদেশের আদালতের রায় কার্যকর করা সম্ভব হবে।

রোহিঙ্গা ইস্যু
রোহিঙ্গা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিয়ানমার এ সমস্যার সৃষ্টি করেছে এবং তাদের এর দায়ভার গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, তারা যে কথাই বলুক না কেন, মিয়ানমারই এই সমস্যার সৃষ্টি করেছে এবং তাদেরই এর সমাধান দিতে হবে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদানকারী মিয়ানমারের নেতার বক্তৃতায় রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তুলতে বাংলাদেশের দাবিকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের নাগরিক অন্য দেশের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে, এটা হচ্ছে মিয়ানমারের জন্য লজ্জা, অসম্মান এবং একই সঙ্গে তাদের দুর্বলতা।

তিনি বলেন, এটা আমাদের কাছে খুব বড় প্রশ্ন, কেন তারা তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছে না।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এ বিষয়ে তাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও সৃষ্টি হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলে, রোহিঙ্গাদের মাঝে মিয়ানমারের আস্থা সৃষ্টি করতে হবে, যেন তারা বাসভূমিতে ফিরে যায়। এটা মিয়ানমারের জন্য লজ্জা, নিজের দেশের ওপর তাদের কোনও আস্থা নেই।

ঋণখেলাপি ও শেয়ার বাজার ইস্যু
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান দেশে ঋণখেলাপি চর্চা শুরু করেছিলেন। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, অর্থ কোনও সমস্যা নয় এবং তিনি ঋণ পরিশোধ না করার সংস্কৃতি চালু করেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এই সংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহন করছে।

ব্যাংকে উচ্চ সুদের হারের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের অধিক সুদের কারণে অনেকের পক্ষে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। ফলে তারা ঋণখেলাপি হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে মনে করেন যে, ঋণ পরিশোধ করার প্রয়োজন নেই। অনেক কোম্পানি রয়েছে যারা ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন। কিন্তু তারা ঋণ পরিশোধ করছেন না।

তিনি বলেন, সম্প্রতি আপনারা দেখেছেন যে গ্রামীণফোন কি করছে। তারা কর পরিশোধ করে না এবং যখন করের পরিমাণ বিপুল হয়ে দাঁড়ায়, তখন তারা বলে যে আসুন আলোচনা করি। আপনি একবার বা দু’বার তা করতে পারেন। কিন্তু বারবার তা করতে পারেন না।

শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি সমস্যা রয়েছে। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার সময় অনেক ব্যবসায়ী ঋণখেলাপি হয়েছেন। কারণ তারা সেই সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন বা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, আমরা তাদের একটা সুযোগ দিয়েছিলাম যাতে তারা তাদের শিল্প-কারখানা চালাতে পারেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বিঘ্নিত না হয় যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং যাতে ঋণখেলাপি সৃষ্টি না হয় সে লক্ষে সরকার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

তিনি বলেন, আমরা  এরই মধ্যে ব্যাংকের সুদের হার এককের ঘরে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছি এবং রাষ্ট্রচালিত ব্যাংকগুলো এই নির্দেশ অনুসরণ করছে।

স্টক মার্কেট সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, এতে যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদের অবশ্যই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে কোনও শেয়ারগুলো লাভজনক আর কোনগুলো নয়। এসব বিবেচনা করেই তাদের শেয়ার ক্রয় করতে হবে। সরকার শেয়ার বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রে অনেকবার শেযার বাজারে ধস নেমেছে। তারপর বাজার আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ মিশন খোলা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সরকার বিভিন্ন দেশে মিশনের নিজস্ব ভবন নির্মানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন এবং আমরা ওয়াশিংটনে চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ করেছি। নিউ ইয়র্ক মিশনের জন্য আমরা একটি ভবন ক্রয় করেছি। নিউ ইয়র্কে আমাদের নিজস্ব ভবনে কনসুলেট অফিস স্থাপনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এর আগে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে তার অংশগ্রহণ, পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান, জাতিসংঘ মহসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং থাই প্রধানমন্ত্রী প্রযুত ও-চা সহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার সাক্ষাতের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো তুলে ধরেন। বাসস

এসএমএম

আরও পড়ুন