• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২১, ১০:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১৬, ২০২১, ১০:৫৬ পিএম

মাইক্রোসফটের নতুন প্রযুক্তি ‘হিউম্যান চ্যাটবোট’

মাইক্রোসফটের নতুন প্রযুক্তি ‘হিউম্যান চ্যাটবোট’

‘মৃত্যুই শেষকথা নয়’ এই বাক্যটি হয়তো আক্ষরিক অর্থেই পছন্দ হয়েছে মাইক্রোসফটের। আর তাই বিশ্বখ্যাত এই টেক জায়ান্ট এবার জীবিত মানুষের আদলে তাদের ‘চ্যাট বোট’ তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। মাইক্রোসফটের এই প্রযুক্তির মাধ্যমে হলিউডের সায়েন্স ফিকশন মুভির মতো মৃত্যুর আগে আপনি নিজের ডিজিটাল প্রতিরূপ তৈরি করে রেখে যেতে পারবেন। মৃত্যুর পর আপনার চ্যাটবোট সবার সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাবে আপনার মতো করেই। অবিশ্বাস্য মনে হলেও ইতোমধ্যে নিজেদের নামে এই প্রযুক্তির পেটেন্টও সেরে ফেলেছে মাইক্রোসফট।

সম্প্রতি উবারগিজমো নামের একটি টেক ব্লগে প্রযুক্তিপ্রেমীদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে ‘হিউম্যান বোট’-এর ধারনাটি। মাইক্রোসফটের নির্মাণাধীন এই প্রকল্প নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। এরই প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মাইক্রোসফটের ‘হিউম্যান চ্যাটবোট’ প্রকল্প নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন। এতে উঠে আসে চ্যাটবোটের খুঁটিনাটি নানা বিষয়। ধারণা করা হচ্ছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এই প্রযুক্তি।

মাইক্রোসফটের পেটেন্টে প্রস্তাবিত তথ্য অনুযায়ী, এই চ্যাটবোট মূলত একটি ব্যক্তিগত যোগাযোগ ব্যবস্থা। আপনার নির্দেশনা অনুযায়ী কিংবা আপনার আচার আচরণ অনুসরণের মাধ্যমেই সবার সঙ্গে তথ্য আদান প্রদান করতে শিখবে এটি। অর্থাৎ অনলাইনে আমরা কিভাবে অন্যদের সঙ্গে কথা বলছি, কিভাবে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি, আমাদের কথা বলার ঢং কিংবা আবগে অনুভূতি প্রকাশের ধরণসহ সূক্ষ্ম বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেকে তৈরি করবে আমাদের চ্যাটবোট। তারপর আমাদের বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে আমাদের মতো করেই কথা বলবে এটি। এমনকি আমাদের কণ্ঠস্বরও হুবহু নকল করতে পারবে।

ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কিংবা ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে সামাজিক মাধ্যম থেকে তাঁর ছবি, ভয়েস রেকর্ড, ফেসবুক পোস্ট, ফোনের ম্যাসেজ কিংবা হাতে লেখা চিঠি থেকেও তথ্য সংগ্রহ করবে মাইক্রোসফটের চ্যাটবোট। সে অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যাক্তির আদলে তৈরি করবে তাঁর নিজস্ব প্রোফাইল। অবশ্য কেউ চাইলে জীবিত অবস্থায় নিজের চ্যাটবোটের জন্য সম্ভাব্য বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও তৈরি করে রেখে যেতে পারবেন। আপনার মৃত্যুর পর সেই নির্দেশনা মেনেই সবার প্রশ্নের জবাব দেবে চ্যাটবোট। এছাড়াও কোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা না থাকলে ইন্টারনেট ঘেটেও আপনার মতো করে একটি নতুন রিপ্লাই লেখার বা বলার চেষ্টা করবে এটি। 

প্রথমিকভাবে চ্যাটবোটের ভাষার আদান-প্রদানের দিকটি নিখুঁত করার চেষ্টা করছে মাইক্রোসফট। কণ্ঠস্বর, শব্দচয়ন, বাক্যগঠন, বাচনভঙ্গি, আলোচনার জন্যে পছন্দ অপছন্দের বিষয় আর সবকিছুর সমন্বয়ের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে প্রত্যেক ব্যক্তির শারীরিক গঠন অনুযায়ী তাঁর থ্রিডি মডেল তৈরির পরিকল্পনা আছে তাদের। তবে মাইক্রোসফট জানিয়েছে, চ্যাটবোটগুলো আমাদের মৃত্যুর ব্যাপারেও অবগত থাকবে। তাই কারো চ্যাটবোটের সঙ্গে আপনি সামনাসামনি দেখা করতে চাইলে কিংবা একে কোন প্রতিশ্রুতি দিতে বললে সঙ্গে সঙ্গেই এটি আপনার প্রস্তাব নাকচ করে দেবে।

মাইক্রোসফট এই চ্যাটবোটের কোন প্রাথমিক নকশা প্রকাশ না করায় বিস্তারিত বেশিকিছু এখনো জানা যায়নি। তাই উবারগিজমোর ওয়েবসাইটে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এই চ্যাটবোট কি আমাদের মৃত্যুর পর চালু হবে নাকি আমরা জীবিত অবস্থাতেই এটি ব্যবহার করতে পারবো? আমাদের মৃত্যুর পর পরিচিত কেউ কি চাইলে আমাদের তথ্য দিয়ে আরেকটি চ্যাটবোট তৈরি করতে পারবে? মৃত্যুর পর আমাদের পরিবার চাইলে কি চ্যাটবোটটি বন্ধ করে দিতে পারবেন? এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে মাইক্রোসফট কিংবা এর প্রতিযোগী কোন প্রতিষ্ঠান এই প্রযুক্তি বাজারে আনার আগ পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।

আরও পড়ুন