• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২১, ০৩:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৭, ২০২১, ১২:১৯ এএম

চাঁদ অভিযানে কল্পনা ও বাস্তব!

চাঁদ অভিযানে কল্পনা ও বাস্তব!
ফাইল ছবি।

||মো. মির-হোসেন সরকার

মানব সভ্যতার জন্য চাঁদে অভিযান ছিল উল্লেখযোগ্য এক পদক্ষেপ। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের চাঁদ নিয়ে অনেক রহস্য,গল্পকথা,উদ্ভট চিন্তাভাবনা চালু ছিলো সমাজে। কিন্তু, চাঁদে মানুষের পা পড়ার পর এসব আর রূপকথা নয়। শুরু হয় মহাকাশ যুগ!সেই ৭৬’-এ নাসার দুটি ভাইকিং ল্যান্ডার মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করবার পর থেকেই জীবনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে গ্রহ বিজ্ঞানীরা বেশ ঝামেলায় পড়েছেন। মূলত মঙ্গলের মাটিতে অতীত কিংবা বর্তমানে আদৌ প্রাণের কোনো অস্তিত্ব আছে কি না সেটা দেখাই মূখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু এসব অভিযানের মাধ্যমে ‘প্রাণ’ আসলে কি, এই বিষয়ে আমরা কি কোনো পরিস্কার ধারণা পেয়েছি। মার্কিন গবেষণা সংস্থা (নাসা) এই ব্যাপারে আনঅফিসিয়াল সংজ্ঞা হলো, ‘প্রাকৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট রাসায়নিক পদ্ধতি।’

মঙ্গল গ্রহে অবতরণ নাসার মহাকাশযান ‘ইনসাইট’। ছবি- নাসা

দিন যতই যাচ্ছে বিশ্বের দেশগুলোতে মহাকাশ অভিযানের আগ্রহ ততই বাড়ছে। ঝুঁকে পড়েছে চাঁদ কিংবা গ্রহগুলোতে অনুসন্ধানের কাজে। ইতোমধ্যেই অনেক দেশ মহাকাশে অনুসন্ধানের কাজে নভোযান, নভোচারিও পাঠিয়েছেন। গ্রহে প্রাণের সন্ধানে গবেষণা করা কিছু অ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্ট এবং বিজ্ঞানী ধারণা করেন, আমরা খুব সংকীর্ণভাবে এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করছি। আমাদের পরিচিত বেশির ভাগ জীবিত প্রাণীই এমন কোষ দিয়ে তৈরি, যারা জলজ পরিবেশে অভিযোজন করতে সক্ষম। কোষগুলো মূলত প্রোটিনের দ্বারা তৈরি এবং ডিএনএ-এর ভেতরে জিনের আকার এনকোডেড অবস্থায় থাকে। যদি বহির্জাগতিক প্রাণ থেকে থাকে, তারা হয়তো একই ধরনের রাসায়নিক পদার্থের সন্নিবেশে তৈরি। এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে বাহিত হয় এবং সংগঠনের সৃষ্টি করে। কিন্তু, সেটা ঠাণ্ডা কেলাসের কোনো সন্নিবেশ নয়, সেখানে অণুগুলো একে অপরের সাথে নির্দিষ্ট বিন্যাসে থাকে। এটা অনেকটা শহুরে গতিশীল মেঘের মতো।

অ্যাস্ট্রেবায়োলজিস্ট এবং পদার্থবিজ্ঞানী সারা ওয়াকার কারসেনবাম তাঁর নতুন গ্রন্থ্য ‘দ্য জুয়োলজিস্টস গাইড গ্যালাক্সি’-তে বলেন, ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন ব্যতীত অন্য কোনো পদ্ধতীর মাধ্যমে জটিল রাসায়সনিক সিস্টেম গড়ে ওঠা এবং তার বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। এটি দারুণ মূলনীতি! সেটা শুধু পৃথিবীতে নয়,সমগ্র মহাবিশ্বের যেকোনো প্রান্তে প্রয়োগ করা সম্ভব।

বিশ্বের অনেক দেশ মহাকাশে চাঁদ অভিযান নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন, আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে এমনও তথ্য বিশ্বের অনেক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। বলা হয়, চাঁদে মানুষ নামার ঘটনাকে সাজানো মনে করেন কিছু মানুষ। ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে নভোযান অ্যপোলো ১১তে ৩ নভোচারী(নিল আর্মস্ট্রং,এডুইন অলড্রিন,মাইকেল কলিন্স )কে পাঠায় মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সেই প্রথম চাঁদে গিয়ে যখন নেমেছিলেন মার্কিন নভোচারীরা, সেই ঘটনা বিশ্বজুড়ে দেখেছেন কোটি কোটি মানুষ। কিন্তু, পৃথিবীতে এখনো এমন বহু মানুষ আছেন, যারা বিশ্বাস করেন, মানুষ আসলে কোনদিন চাঁদে যায়নি। মহাকাশে এলিয়েন বলতে কিছু নেই। বিজ্ঞানীরা যা বলে সবই সাজানো নাটক। যদি এলিয়েন থাকতো তাহলে এখানে কেউ আজো আসেনি কেন? এমন হতে পারে যে,স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রাণের আবির্ভাবের ব্যাপারটি অত্যন্ত বিরল একটি ঘটনা এবং ফলত এই গ্যালাক্সিতে-এবং দৃশ্যমান মহাবিশ্বে একমাত্র পৃথিবীতেই জীবনের অস্তিত্ব আছে।

১৯৬৯ সালের ২১শে জুলাই প্রথম মানব হিসেবে চাঁদে পদার্পণ করেন ‘নিল আর্মস্ট্রং’। ছবি- উইকিপিডিয়া

পড়ুন: চাঁদে অভিযান ও এলিয়েন রহস্য

মানবমনের মধ্যে অনেক দূর্বলতা আছে,তার মধ্যে একটি দূর্বলতা হলো-না বুঝেই তর্ক করা। এটা মনোবিজ্ঞানী কিংবা দার্শনিকরা অনেক আগে থেকেই জেনে গেছেন। নাসা স্পেস মিশনের কোনো কোনো ভিডিওতে স্পেস শাটলের জানালার বাইরে অব্যাখ্যাত কিছু বস্তুর আনাগোনা দেখা যায়। এ ধরনের ঘটনা রহস্যময় সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। এগুলো ভিডিও বেশ জেনুইন, তবে সাথে সাথে এটাও মনে রাখতে হবে ইউএফওর ‘ইউ’ অর্থই হলো অজ্ঞাত। যখন জানাই আছে আপনি সেটা দেখছেন, সেটা আপনি কি দেখছেন সেটা জানেন না, তখন সেটা জানেন বলাটা কোনোক্রমেই যুক্তিযুক্ত সিন্ধান্ত হতে পারে না। এমনকি ওই অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুসমূহকে অবধারিতভাবে গ্রহান্তরের উন্নত প্রযুক্তিধারী ‘বুদ্ধিমান’ আগন্তক, যারা গোপনে পৃথীবিবাসীকে দেখতে এসেছে, ধরে নেওয়াটা যুক্তিতেই পড়ে না। এমন নিশ্চিতভাবে বলবার মতো কোনো সাক্ষ্যই আপনার হাতে নেই। মনে রাখতে হবে, কোনো দাবিদাওয়ার সপক্ষে প্রদত্ত অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল হল চাক্ষুষ সাক্ষ্য-প্রমাণ। কোর্ট-কাচারিতে চাক্ষুস সাক্ষ্যের চুড়ান্ত মুল্য থাকলেও বিজ্ঞানের আদালতে চাক্ষুস সাক্ষ্য-প্রমাণ মোটামুটি মূল্যহীন![টাইসনের গ্রন্থ লেটার্স ফ্রম অ্যান অ্যাস্ট্রফিজিসিস্ট,২০১৯]

চীনের রোবোটিক মহাকাশযান চাং’এ-৪। ছবি- উইকিপিডিয়া

১৯৯৪ সালে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি যখন বৃহস্পতি গ্রহের সাথে শুমেকার-লেভি নামক উল্কার সংঘর্ষ ঘটে। এর ফলশ্রুতিতে বড় কিছু বিস্ফোরণ আমরা ঘটতে দেখেছি। এমনটি মনে করা হয় যে প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে অপেক্ষাকৃত ছোট একটা জ্যোতিস্কের সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষের ফলে অতিকায় ডাইনোসরেরা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে এটা সত্য যে, ডাউনোসর বিলুপ্ত না হয়ে গেলে, এবং ফলত আমাদের পূর্বপূরি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য একটি শূন্যস্থান তৈরি না হলে, আমাদের স্থলে অন্য কোনো বুদ্ধিমান জীব আসতো কি না বলা যায় না। এই ভিষণ ঘটনায় ছোট আকৃতির ‍কিছু প্রথম দিকের স্তন্যপায়ী প্রাণী বেঁচে গেলেও, মানুষের সাইজে যেকোনো কিছুই প্রায় নিশ্চিতভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এইরকম মহাজাগতিক সংঘর্ষ কতবার যে সংঘটিত হয়েছে সেটা বলা মুশকিল। তবে প্রতি ২ কোটি বছরে গড়ে প্রায় একবার হয়তো এমন দূর্ঘটনা ঘঠেছে। এটা একটা যৌক্তিক হিসাব। এই হিসাব সঠিক হলে পৃথিবীতে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটার কারণ হলো এই যে গত ৬৬ মিলিয়ন বছরে কোনো বড় সংঘর্ষ ঘটেনি। এটা একটা দারুণ সমাপতন! [তথ্যসূত্র:ব্রিফ আনসার্স টু বিগ কোয়েশ্চেনস]

নাসার মহাকাশযান ‘নিউ হরাইজন’। ছবি- নাসা

যাহোক মহাকাশ যুগ শুরু হলে কিছুটা স্বস্তিকর সংবাদ পাওয়া গিয়েছে। শুক্রগ্রহকে মনে করা হতো মেঘে ঢাকা স্বর্গরাজ্য, কিন্তু সেখানে জলাভূমি ও ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য খেলা করে। কিন্তু বাস্তাবে দেখা গেল সে এক ভয়ানক নরককুণ্ড। ওদিকে বুধ গ্রহ অসংখ্য খানাখন্দে ভরা এক বিরান পাথুরে গ্রহ। এবং মঙ্গল গ্রহ, সৌরজগতের সবচেয়ে পৃথিবীসদৃশ্য গ্রহ, নাসার কিউরিওসিটি নভোযান ও তাদের পূর্বসূরি মিশনগুলো কল্যাণে দেখা গেল যে সেখানে বায়ুমণ্ডল ভয়ানক পাতলা এবং তুষারিত মরুপ্রান্তর। তবে বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপ বা শনির এনসেলেডাসের পৃষ্ঠাঞ্চলের বরফের নিচে অপার্থিব প্রাণীর খেলা করার সম্ভবনা থাকলেও খুব আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না। এটা এখন নিশ্চিত যে, অন্তত সৌরজগতের অন্য কোথাও বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব আমরা আর আশা করছি না।

আরও পড়ুন