• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২১, ১১:৫৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১০, ২০২১, ১১:৫৪ এএম

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মূল যন্ত্র স্থাপন

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মূল যন্ত্র স্থাপন
ফাইল ফটো

পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র ‘রিয়াক্টর প্রেসার ভেসেল’ বা পরমাণু চুল্লিপাত্র প্রথম ইউনিটে স্থাপন করা হয়েছে। 

রোববার (১০ অক্টোবর) ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার পরমাণু শক্তি সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ।

রিয়াক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের আগে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে রূপপুর প্রকল্পের বাংলাদেশি ও রাশিয়ান কর্মকর্তারা।

পরমাণু চুল্লিপাত্র বসানোর আগে বিজ্ঞানমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, এই ঘটনা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর ফলে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের সাথে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যাবে। 

রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে রূপপুর প্রকল্প। চুল্লি স্থাপনের আগে রুশ পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক এলেক্সি লিখাচেভ এআরবিকে বলেন, বিজ্ঞান নিয়ে বছরের পর বছর রাশিয়া যে উৎকর্ষ অর্জন করেছে, সেই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান আজ রূপপুরে প্রয়োগ করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কিছু ব্যবস্থাপনা রূপপুর প্রকল্পকে করেছে সবচেয়ে নিরাপদ।

রুপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। প্রকল্প পরিচালক ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, ইউনিট-১ এর ভৌত কাঠামোর ভেতরে রিয়াক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের পারমাণবিক যন্ত্রাংশ স্থাপন সম্পন্ন হবে। এর ফলে এই ইউনিটের রিয়াক্টর ভবনের ভেতরের কাজ প্রায় শেষ হবে।

রিয়াক্টর প্রেসার ভেসেল

এটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এই যন্ত্রের মধ্যে জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম লোড করা হয় এবং বিশেষভাবে ইউরেনিয়ামের ফিশন বা চেইন রিয়াকশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। 

কি কি বসবে রিয়াক্টর ভবনে

প্রকল্প এলাকায় গোলাকৃতি যে দুটি ভবন দেখা যায় সেগুলোই রিয়াক্টর ভবন। এদের মধ্যে একটিতে ১০ অক্টোবর বসানো হবে রিয়াক্টর প্রেসার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র। এটিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের হার্ট বা হৃদপিণ্ড বলা যেতে পারে। এই ভবনের বিভিন্ন ধাপে বসানো হয়েছে নিউক্লিয়ার যন্ত্রপাতি। পাঁচ ধরনের যন্ত্রের মধ্যে ইতিমধ্যে প্রেসারাইজার, কুল্যান্ট পাম্প এবং হাইড্রো এক্যুমুলেটর বসানো সম্পন্ন হয়েছে। রিয়াক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের পরপরই আগামী নভেম্বরে স্থাপন করা হবে স্টিম জেনারেটর। এর মাধ্যমে প্রথম ইউনিটে সব ধরনের নিউক্লিয়ার যন্ত্রপাতি বসানো শেষ হবে। প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রতিটি যন্ত্র সর্বোচ্চ পরীক্ষা নিরীক্ষার ধাপ পেরিয়ে নকশা অনুযায়ী বসানো হচ্ছে। এজন্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সনদ নিতে হয়েছে এবং কাজের মান দেখে তারা সন্তোষ প্রকাশও করেছে।

সময়মতো প্রকল্প শেষ হওয়ার আশা 

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছরের মধ্যে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হবে রূপপুরে। ইউনিট-২ এর কাজও চলছে জোরেশোরে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে, বিভিন্ন প্রস্তুতি পর্ব শেষে প্রথমত ভৌত অবকাঠামো তৈরি করা হয়। এরপর সেইসব অবকাঠামোর মধ্যে পারমাণবিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়। ভৌত কাঠামোর নির্মাণের পর খুব দ্রুত গতিতে চলে যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ। ভৌত কাঠামো নির্মাণ গতির সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করা হচ্ছে রাশিয়ায়। ইতিমধ্যে প্রথম ইউনিট তো বটেই, দ্বিতীয় ইউনিটেরও প্রায় সব ধরনের পারমাণবিক যন্ত্র প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছেছে।

প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর জানান, করোনার মধ্যে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চলেছে রূপপুরে। বন্ধ থাকেনি এক দিনের জন্যও। ওই সময়ে কিছুটা গতি কমলেও নতুন বাস্তবতায় লোকবল বাড়িয়ে এগিয়ে চলছে প্রকল্প। ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানান তিনি। 

এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচের এই প্রকল্পে ৯০ ভাগ টাকা ঋণ দিয়েছে রাশিয়া। একই সাথে আন্তঃরাষ্ট্রীয় কয়েকটি চুক্তির মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে রুশ ঠিকাদার এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি এটি পরিচালনার জন্য জনবলও তৈরি করে দিচ্ছে রাশিয়া।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৩ এ প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট এবং একই পরিমাণ বিদ্যুৎ দ্বিতীয় ইউনিট থেকে পাওয়া যাবে ২০২৪ সাল থেকে। একাত্তর।

জাগরণ/এসএসকে/এমএ