• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২১, ২০১৯, ০৩:৫৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২১, ২০১৯, ০৪:৫৬ পিএম

নিউজিল্যান্ডকে আর ডার্কহর্স বলার সুযোগ নেই

নিউজিল্যান্ডকে আর ডার্কহর্স বলার সুযোগ নেই

২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠে সাড়া ফেলে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ঘরের মাঠে কিউইরা তখন সমীহ করার মতো একটি দল হলেও ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হটিয়ে তারা ফাইনালে উঠে যাবে এই প্রত্যাশা হয়তো অনেকেই করেন নি। সেবার প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে যাওয়া নিউজিল্যান্ড এবারও কিন্তু রয়েছে দারুণ ছন্দে। বিশ্বকাপের মঞ্চে বরাবর ডার্কহর্স হিসেবে খেলতে নামা কিউইরা এবার যদি চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফেরে ইংল্যান্ড থেকে, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। 

২০১৫ বিশ্বকাপের আগে মোট ৬ বার বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলেছিলো নিউজিল্যান্ড। তবে সেমির ফাঁড়া কাটাতে পারেনি একবারও। ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারিয়ে 'সেমিফাইনালিস্ট' ট্যাগটা ঝেরে ফেলেছে তারা। যদিও আটকে গিয়েছে ফাইনালে পৌঁছে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে হেরে বঞ্চিত হয়েছে ট্রফি জয়ের স্বাদ থেকে। 

এই চার বছরে কিউদের নেতৃত্বে এসেছে পরিবর্তন। ব্রেন্ডন ম্যাককলামের অবসরে অধিনায়কত্বের ভার এখন কেন উইলিয়ামসনের কাঁধে। তবে গতবারের দলটার সব মূল খেলোয়াড়দের প্রায় সবাই এবারও দলে আছেন। ৮ দিন পর থেকে শুরু হতে যাওয়া মহারণে তারাই দলকে অনুপ্রেরণা জোগাবেন সামনে থেকে।  

কিউইদের ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তাদের শক্তিশালী ফাস্ট বোলিং লাইন-আপ ইংল্যান্ডের মাটিতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এমন প্রত্যাশা সবার। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ভারসাম্যপূর্ণ একটি দল নিয়েই তাই বিশ্বকাপে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড।  

কিউই দলের প্রধান কোচ গ্যারি স্টিড এর মতে, 'আমরা যদি আমাদের সামর্থ্যের কাছাকাছি পর্যায়েও খেলতে পারি, তবুও দেশকে গর্বিত করতে পারবো।' 

২০১৭ সালের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের ওয়ানডে পারফরম্যান্সও কথা বলছে তাদের হয়েই। এই সময়ের মধ্যে তারা হোয়াইট ওয়াশ করেছে পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মতো দলকে। বিশ্বকাপের হট ফেবারিট ইংল্যান্ডের কাছে হারলেও ব্যবধানটা ছিলো ৩-২। 

তবে এবছরের শুরুতে ঘরের মাঠে ভারতের সাথে ৪-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হারায় প্রশ্ন উঠেছিলো- আসলেই কি বিশ্বকাপ জয়ের সামর্থ্য রয়েছে নিউজিল্যান্ডের? ভারতকে টি-টুয়েন্টি সিরিজে হারিয়ে তার কিছুটা হলেও জবাব দিয়েছিলো নিউজিল্যান্ড। 

ইংল্যান্ড, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার পেছনে থেকে ওয়ানডে র‍্যাংকিংয়ে চার নম্বর দল হিসেবে বিশ্বকাপ মিশনে নামবে নিউজিল্যান্ড।  

সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইক গ্যাটিংয়ের কণ্ঠেও মিলল কিউই-বন্দনা। নিজ দেশ ইংল্যান্ডের পরেই বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার হিসেবে নিউজিল্যান্ডকে রাখছেন গ্যাটিং। দ্য ক্রিকেটার ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা এখন অনেক অভিজ্ঞ, তাদের আর ডার্কহর্স বলার সুযোগ নেই। তারা অনন্য ক্রিকেট খেলছে, সবসময় তারা একটি দল হয়ে খেলে। কেন উইলিয়ামসনের যোগ্য নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। রস টেইলর দারুণ একজন ব্যাটসম্যান, ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদির মতো ম্যাচ জেতানো বোলারও রয়েছে তাদের দলে।' 

সাউদি, বোল্ট এবং টেইলরের পাশাপাশি ওপেনার মার্টিন গাপটিলেরও সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে এটি। তাই এ চারজন খেলোয়াড় দলের জন্য অতিরিক্ত অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবেন, বলাই যায়।   

বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিক মার্টিন গাপটিলও জানেন, এই বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে ব্যাটসম্যানদের। এ ব্যাপারটি নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিতই মনে হলো এ কিউই ব্যাটিং স্তম্ভকে। গাপটিল বলেন, 'ইংলিশ কর্তৃপক্ষ বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেট বানাতে যাচ্ছে, এতে আমি বেশ খুশি। আমার মুখের হাসি আরও চওড়া হয়েছে।' 

কিউই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রস টেইলর এবার নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপে মাঠে নামতে যাচ্ছেন। চার বছর আগে ৭ উইকেটে ফাইনাল হারার দুঃখ এখনো পোড়ায় তাকে। সেই দুঃসহ স্মৃতি থেকেই অনুপ্রেরণা খুঁজছেন টেইলর, 'বিশ্বকাপে আমাদের দলের মূল খেলোয়াড়দের ভালো খেলতে হবে। ভাগ্যও বেশ বড় ভূমিকা পালন করবে। চার বছর আগে আমরা যে জায়গায় পৌঁছেছিলাম, তার থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকার ব্যাপারে আশাবাদী আমরা। গতবার ভাগ্য আমাদের হাতে ছিলো না, আশা করি এবার আমরা সে অভিজ্ঞতাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজে লাগাতে পারবো। '  

সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককলামের সাহসী সিদ্ধান্তে গত বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠতে পারলেও শেষ ম্যাচে কাজে আসেনি ম্যাককলামের সদম্ভ চাল। তিন বলে শূন্য রান করে ম্যাককলাম আউট হয়ে গেলে আর কেউই হাল ধরতে পারেনি ফাইনালে। এবার কেন উইলিয়ামসন তাই অনেক সাবধান। স্বভাবজাত কৌশলী মনোভাব তাকে ম্যাককলামের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে বলা যায়। সব কিছুর পরে নিউজিল্যান্ড শেষ পর্যন্ত পরম আরাধ্য ট্রফিটা ছুঁতে পারবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। 

এমএইচএস