• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ২০, ২০১৯, ১১:৫৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২১, ২০১৯, ০২:২৯ পিএম

ম্যাচ জিতলো অস্ট্রেলিয়া, ইতিহাস গড়ে হৃদয় জিতলো বাংলাদেশ  

ম্যাচ জিতলো অস্ট্রেলিয়া, ইতিহাস গড়ে হৃদয় জিতলো বাংলাদেশ  

১৪ বছরের আক্ষেপ হয়তো ঘোচানো গেলো না। হয়তো হাসা হলো না বিজয়ের হাসি। ট্রেন্ট ব্রিজে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আজ হেরে গেল বাংলাদেশ। তবে খেলার পরিসংখ্যানে অজিরা ম্যাচ জিতে নিলেও বিশ্বের লাখ-কোটি ক্রিকেট অনুরাগীদের হৃদয় জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।

কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে ২০০৫ সালে হাবিবুল বাশারের দল যা করেছিল মাশরাফীর দলও সেই অসাধ্যই সাধন করতেই আজ নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে নেমেছিল। হয়তো শেষ হাসিও হাসতে পারতো সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। কিন্তু বোলারদের খরুচে বোলিং আর এক সাব্বির রহমানের বাজে ফিল্ডিং আর ব্যাটিংয়েই যেন জয় ফাঁকি দিয়ে চলে যায় টাইগার সমর্থকদের।

অজিদের ছুড়ে দেয়া ৩৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৮ উইকেটে, নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ৩৩৩-এ গিয়ে থামে টাইগারদের লড়াই। ফলাফল, অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৪৮ রানের হার। আর তাতে তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিটি তাই বৃথাই গেল বলা যায়। এ ছাড়াও বৃথা গেছে ব্যাটসম্যানদের কৃতিত্বে স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের ৩৩৩ রান! কেননা এটিই যে ওয়ানডে ইতিহাসে টাইগারদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।

কিন্তু একেবারে খালি হাতে ফেরেনি টাইগাররা। তারা জানান দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে লড়তে নামার আগে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের প্রস্তুতি নিতে হবে যে কোন দলকে, মাঠে খেলতে হবে সেরাটুকু উজাড় করে দিয়ে। একমাত্র তাহলেই সম্ভব আজকের বাংলাদেশকে হারানো। আজ ঠিক সেটাই করেছে অস্ট্রেলীয়ানরা সেই সাথে নিয়ামক হয়েছে তুলোনামূলক বাজে ফিল্ডিং আর বোলিংয়ে প্রতিপক্ষের সমীহ আদায় করে নিতে না পারাটা। তবে, নিজেদের এমন লড়াকু মানসিকতা আর বড় চ্যালেঞ্জের সামনে কোমর ভেঙে না পড়ার প্রবনতা দিয়ে ঠিকই সমীহ আদায় করে নিয়েছে তারা।

সুবিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে যেমন শুরু করা প্রয়োজন ছিলো, বাংলাদেশ দল তেমনটা পায়নি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউটের শিকার হন ওপেনার সৌম্য সরকার। সঙ্গী তামিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে অ্যারন ফিঞ্চের দারুণ এক থ্রোতে রানআউটের শিকার হন তিনি।       

তবুও দারুণ ছন্দে থাকা সাকিব আল হাসানকে নিয়ে লড়াই করা শুরু করেন তামিম। ধীরস্থির ব্যাটিং করে এবারের আসরে প্রথম ফিফটিও তুলে নেন। কিন্তু যখনই মারমুখী হতে গেলেন তখনই মিচেল স্টার্কের বলে হলেন বোল্ড। বল তার ব্যাটের কানায় লেগে ভেঙে দেয় স্ট্যাম্প। ফলে ৬২ রানে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। 

তামিমের আগে ৪১ রান করে সাজঘরে ফেরেন সাকিবও। বিশ্বকাপে রানের ফুলঝুরি ছুটিয়ে চলা সাকিব হাঁটছিলেন এবারের আসরে টানা পঞ্চম ফিফটির দিকে। তবে  ইনজুরি কাটিয়ে অজি দলে ফেরা মার্কোস স্টোইনিসে স্লোয়ারে ভুল করে বসেন তিনি। ক্যাচ তুলে দেন ওয়ার্নারের হাতে। 

সাজঘরে ফেরার আগে অবশ্য প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ৪০০'র বেশি রান করার কৃতিত্ব দেখান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচ ইনিংস খেলেই ১০৬.২৫ গড়ে ৪২৫ রান সংগ্রহ করে ফেলেছেন তিনি।

এদিকে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি লিটন কুমার দাসও। প্রথম বলেই স্টার্কের মরণঘাতী বাউন্সার হেলমেটে লাগলে খানিকটা যেন চাপে পড়ে যান লিটন। প্রাথমিক সেবা নিয়ে খেলা করলেও তাই বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। ৩ চারের মারে ১৬ বলে মাত্র ২০ রান করেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পা দেন লিটন।  

দল যখন হার মেনে চলেছিল তখন আশার আলো হয়ে জ্বলে উঠলেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পঞ্চম উইকেটে দলের স্কোরবোর্ডে তারা দুজনে যোগ করেন মোট ১২৭ রান। কিন্তু ইনিংসের শেষের দিকে বড় লক্ষ্য ছুঁতে অনর্গল মারতে গিয়ে আউট হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সেই সঙ্গে বেঁচে থাকা সমস্ত স্বপ্ন ভেঙে যায় টাইগার ভক্তদের। ৫০ বলে ৬৯ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে নাথান কুল্টার-নাইলের শিকার হন মাহমুদউল্লাহ। 

তবে শেষ পর্যন্ত একাই লড়ে যান মুশফিকুর রহিম। মাহমুদউল্লাহ-সাকিবের পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে পেয়ে যান বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির দেখাও। যদিও তার সমস্ত চেষ্টাটুকুই শেষ পর্যন্ত আক্ষেপে বিলিন হয়ে যায়। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৯২ বলে ১০২ রান করে। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ম্যাচে ২টি করে উইকেট পেয়েছেন স্টার্ক, স্টোইনিস ও কুল্টার-নাইল। 

বাংলাদেশের হারটি আজ লজ্জাজনক ছিলো না। এই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আজ জয় তুলে নিতে ঠিক কতটা ভার বইতে হলো, সেটা জানতে হলে ঐ অজিদের মনের ভেতর একবার ঢুঁ মেরে আসতে হবে। প্রেস বক্স বা টিভির সামনে বসে সেটা করা সম্ভব নয়। আর আজ যারা হৃদয় জিতে নিয়েছে, কাল যে তাদের এই জিতে নেয়ার সামর্থ্য আরো বলবান হবে তা বলাই যায়। এদেশের ক্রিকেট ভক্তরাও গর্বের সাথেই বলতে পারে, প্রতিপক্ষ যেই হোক, লড়বে টাইগার।

এসএইচএস/এসকে 
 

আরও পড়ুন