• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯, ০১:১২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯, ০১:১২ পিএম

ডনকে ছোঁয়া স্মিথের জন্য কঠিন নয়, অসম্ভব! 

ডনকে ছোঁয়া স্মিথের জন্য কঠিন নয়, অসম্ভব! 
ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে স্টিভেন স্মিথের তুলনা করতে হলে ঘাটতে হবে পরিসংখ্যান, জানতে হবে ইতিহাস। ফটো : সংগৃহীত

বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দীর্ঘ ১৬ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে চলতি মৌসুমে অস্ট্রেলিয়াকে অ্যাশেজ ধরে রাখার নায়ক স্টিভেন স্মিথ ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা দেখিয়ে ঘৃণাকে ভালবাসায় রূপান্তরিত করা রাজপুত্র হয়ে উঠেছেন। অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া তো স্মিথকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিয়ে ‘আধুনিক যুগের ব্র্যাডম্যান’ খেতাবেই ভূষিত করে ফেলেছে।

মেলবোর্নের হেরাল্ড সান পত্রিকায় রাসেল গুল্ড লিখেছেন, যেসব বইগুলোতে ব্র্যাডম্যানের মহত্বের বর্ণনা দেয়া হয়েছে এবং যে যাদুঘরে তার কীর্তি চিত্রিত হয়েছে সেখানে তার (স্মিথ) নামটিও রাখা যায়। তাকে নিয়ে রচনা করা যায় নতুন গান। 

সাবেক অজি অধিনায়ক রিকি পন্টিং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইটকে দেয়া সাক্ষাৎকারে স্মিথকে ‘জিনিয়াস’ খেতাব দিলেও এটাও সাফ বলে দিয়েছেন, ব্র্যাডম্যান কতটা ভাল ছিল তা ভেবে দেখার জন্য স্টিভ স্মিথ এখন যা করছেন তা দেখতে হবে। পন্টিংয়ের কথা মতো তা দেখতে হলে ঘাটতে হবে পরিসংখ্যান, জানতে হবে ব্র্যাডম্যান যে আমলে খেলেছেন, সেই সময়কার ইতিহাস। 

মূলত সদ্য শেষ হওয়া অ্যাশেজ সিরিজে ৪ টেস্ট খেলা স্মিথ ৭ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ৩ হাফ সেঞ্চুরিসহ ১১০.৫৭ গড়ে ৭৭৪ রান করাতেই তাকে ‘আধুনিক যুগের ব্র্যাডম্যান’ বলে অভিহিত করা শুরু করেছেন। লর্ডস টেস্টে জোফরা আর্চারের ছোড়া ঘণ্টায় ১৪৮.৭ কিলোমিটার গতিবেগসম্পন্ন বাউন্সার সরাসরি স্টিভেন স্মিথের বাঁ কানের নিচে আঘাত হানার পর তিনি আহত হয়ে মাঠ ছাড়লেও আবার ব্যাট করতে নামেন এবং ৯২ রান করে আউট হন। ইনজুরির কারণে ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে স্মিথের আর ব্যাট করা হয়নি, খেলতে পারেননি হেডিংলি টেস্ট। 

সর্বকালের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে যাকে মেনে নেন প্রায় সবাই, সেই ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে স্মিথের তুলনা করাটা কতটা বাস্তবসম্মত, কতটা যৌক্তিক, কতটা প্রাসঙ্গিক তা অবশ্যই আলোচনার দাবি রাখে। তবে পাঠকদের জন্য এমন কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো, যা জানার পর এমন তুলনাকে অনেকেই হাস্যকর বলেও আখ্যায়িত করতে পারেন। 

# অনেকেই জোরালোভাবে দাবি করছেন যে, লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে এবং হেডিংলি টেস্টের দুই ইনিংসে ব্যাট করতে পারলে নাকি স্মিথ ১৯৩০ সালের অ্যাশেজে ব্র্যাডম্যানের করা রেকর্ড ৯৭৪ রানের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যেতেন। আসলেই এমনটি হতো? ৩ ইনিংসে ব্যাট করতে পারা স্মিথ ২০১ রান করে ব্র্যাডম্যানকে ছাড়িয়ে যেতেনই- এমন দাবি অনেকে করলেও ব্র্যাডম্যান পাঁচ টেস্টে ৯৭৪ রান করেছিলেন ১৩৯.১৪ গড়ে আর স্মিথের চলতি অ্যাশেজের গড় ১১০.৫৭। অন্তত গড়ের বিচারে স্মিথ সর্বকালের সেরা টেস্ট ক্রিকেটারকে এবার পেছনে ফেলতে পারেননি, এটা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়েছে। 

# কুখ্যাত বডিলাইন সিরিজে ইংলিশ পেসারদের শরীর লক্ষ্য করে ছোঁড়া বলের বিপক্ষে ব্র্যাডম্যান ৮ ইনিংসে ৫৬.৫৭ গড়ে ৭৪.৮৫ স্ট্রাইক রেটে ৩৯৬ রান করেছিলেন ব্র্যাডম্যান। স্মিথসহ এখনকার ব্যাটসম্যানদের আর যাই হোক, বডিলাইন বোলিং সামলাতে হয় না। হেলমেট পরিধান না করে ব্যাট করতে নামা খাটো গড়নের  ব্র্যাডম্যান ব্যাটসম্যানদের জন্য মাইনফিল্ড থাকা উইকেটে কত ভয়ঙ্কর ডেলেভারি সামলে ৯৯.৯৪ গড় নিয়ে ৬ হাজার ৯৯৬ রান করে ক্যারিয়ারে শেষ করেছেন, তা এ যুগের অনেকের পক্ষেই আসলে উপলব্ধি করাটাই সম্ভব নয়।

# এবারের অ্যাশেজে স্মিথের ১১০.৫৭ গড়ে রান তোলাতে তার প্রশংসা করতে করতে যারা ফেনা তুলে ফেলেছেন, তাদের অবগতির জন্য এটুকু পরিসংখ্যান তুলে ধরাই যথেষ্ট, ১৯৩১-৩২ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচ টেস্ট সিরিজে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের গড় ছিল ২০১.৫০! এখানেই শেষ নয়, ওই সিরিজে তিনি ৪ সেঞ্চুরিসহ করেছিলেন ৮০৬ রান। তাও আবার ৫ ইনিংস ব্যাট করে! অথচ সদ্য শেষ হওয়া অ্যাশেজে ৭ ইনিংসে ৭৭৪ রান করা স্মিথের সঙ্গে চলছে ব্র্যাডম্যানের তুলনা! 

# ডন ব্র্যাডম্যান টেস্ট ইতিহাসে দুইবার ৩০০ রানের ইনিংস খেলেছেন। তার সেরা ইনিংস ৩৩৪ রান, যা টেস্ট ইতিহাসে মার্ক টেলরের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বাধিক দশম সর্বাধিক টেস্ট ইনিংসের তালিকায় রয়েছে। স্টিভেন স্মিথের সর্বাধিক টেস্ট ইনিংসটি ২৩৯ রানের।

# কোনো একটি টেস্ট দলের বিপক্ষে সর্বাধিক সেঞ্চুরির রেকর্ড আজও ডনের দখলে রয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার ১৯টি সেঞ্চুরি রয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণযুগের সেই দলের বিপক্ষে ১৩টি সেঞ্চুরি করে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছেন সুনীল গাভাস্কার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১২টি সেঞ্চুরি করে তৃতীয় স্থানে আছেন জ্যাক হবস। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১টি শতক তোলা স্মিথ আছেন চতুর্থ স্থানে। তাই বলাই যায় ব্র্যাডম্যানের ধারের কাছে যেতে স্মিথকে এখনো বিশাল পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হবে।

# টেস্ট ইতিহাসে সর্বাধিক ১২টি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক ব্র্যাডম্যানের এই রেকর্ড স্মিথ কেন, আর কোনো ব্যাটসম্যানের পক্ষেই ভাঙা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। তার খুব কাছে চলে যাওয়া কুমার সাঙ্গাকারা ১১টি ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেলেও ব্র্যাডম্যানকে স্পর্শ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ক্রিকেটের বরপুত্র নামে খ্যাত ব্রায়ান লারা ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ৯টি, বিরাট কোহলি করেছেন ৬টি। আর সেখানে স্টিভেন স্মিথ করেছেন ৩টি।

# সাদা পোশাকের ক্রিকেটে সর্বাধিক গড় এবং ডাবল সেঞ্চুরির মালিক ব্র্যাডম্যান একটি সেশনের ভেতরেই সেঞ্চুরি করেছেন ৬ বার। তার এই রেকর্ড আজও অক্ষত রয়েছে। কেউ ভাঙতে পারবে বলেও আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে না! 

আরআইএস  
 

আরও পড়ুন