• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯, ০১:০৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯, ০২:০৬ পিএম

অস্ত্রের মুখে ইয়ংমেন্স ক্লাব দখল করেছিল খালেদ

অস্ত্রের মুখে ইয়ংমেন্স ক্লাব দখল করেছিল খালেদ
ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স ক্লাবের সভাপতি ও যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আদালতে তোলা হয়। ফটো : সংগৃহীত

অস্ত্রসহ গুলশানের বাসা থেকে র‌্যাবের হাতে আটক হওয়া  যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া সম্পর্কে জানা যাচ্ছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। এবার জানা গেল, রাজধানীর ব্যস্ততম ফকিরাপুলের ইয়াংমেন্স ক্লাবের মালিক হতে খালেদ নাকি তার সহযোগীদের নিয়ে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা দখল করেছিল।

ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মল্লিক পিন্টু যমুনা টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতা দখলের পর থেকেই খালেদের আধিপত্যে ক্লাবে চলতে থাকে ক্যাসিনো ব্যবসা। 

কীভাবে এই ক্লাবের অধঃপতন হয়েছিল- জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন মল্লিক পিন্টু বলেন, খালেদ একদিন এসে আমাকে চাপ প্রয়োগ করে বলে সাইন করে আমাকে ক্লাবের কাউন্সিলর করতে হবে। আমাকে অস্ত্র দেখিয়ে বের সে আমাকে বের করে দেবে, সেদিন আমি তা মানতে পারিনি। মনে অনেক কষ্ট নিয়ে কাউকে কিছু না বলে আমি ক্লাব থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, আমরা টাকার অভাবে খেলতে পারিনি। কিন্তু আজ কী দেখলাম?ক্লাবে কোটি কোটি টাকা পাওয়া যায়। আমার খেলোয়াড় টাকা পায় না, ৩ বেলা ঠিকমতো খাবার পায় না। যা দরকার প্রতিদিন দিতে পারিনি। অথচ কোটি কোটি টাকা সেই ক্লাব থেকে বের হচ্ছে। 

প্রয়োজনে আবারো ক্লাবের হাল ধরে অতীতের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আসন্ন মৌসুমে দল গোছাতে চান পিন্টু। তিনি বলেন, এখানে ক্যাসিনো লাগে না। এখানে লাগে বিশ্বাস, শ্রম আর আন্তরিকতা। এগুলো থাকলেই আগামীতে একটি সুন্দর সংগঠন করা যায়।  

ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির অবক্ষয়ের পেছনে নৈতিকতার ঘাটতি ছিল বলে দাবি করেছেন ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স ক্লাবের আরেক সাবেক সভাপতি মেজর (অব.) এনাম। তিনি বলেন, হকি, ফুটবল, ক্রিকেট যেটাই বলেন ক্লাবগুলো ছিল খেলার জন্য। আমি জানি না এবং বলতেও পারবো না কীভাবে এগুলো বেহাত হয়ে গেল। সরকার প্রধান যদি সরাসরি ব্যবস্থা নেন তাহলে ক্লাবের সুদিন ফিরে আসবে। 

২০১৭ সালে সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং আর্থিক অসচ্ছলতার কারণ দেখিয়ে প্রিমিয়ার লীগে অংশ নেয়নি ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স ক্লাব। মূলত সবার সন্দেহের বাইরে থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল বলেই মনে করেন সাবেক দুই সভাপতি। 

প্রায় ৬০ বছরের পুরনো ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স ক্লাব। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির পর ক্লাবটি এখন বন্ধ আছে। কিন্তু আগামী মাস খানেকের মধ্যে শুরু হচ্ছে দল বদলের মৌসুম। যেখানে এই ক্লাবের অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া এখনই জরুরি। 

স্বাধীনতার আগে ১৯৬০ সালে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স ক্লাব। একসময় খেলোয়াড় তৈরির আতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত অনেক নাম করা ফুটবলার অতীতে এই ক্লাব থেকে উঠে আসলেও ক্যাসিনোর কালো থাবায় আজ তারা দিশেহারা। 

এই ক্লাবে একসময় ছিল না কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বা অর্থের লালসা, নিছক বিনোদনের খোঁজে এখানে আসতেন সংগঠক সদস্যরা। সময়ের বিবর্তনে ক্লাবের সেই আদর্শ আর নৈতিকতা এখন আর খুঁজেই পাওয়া যায় না। যার মূল হোতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।

উল্লেখ্য, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ওরফে খালেদকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশানস্থ বাসভবন থেকে আটক করে র‌্যাব। পরে তার বিরুদ্ধে র‌্যাব-৩-এর ওয়ারেন্ট অফিসার গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে গুলশান থানায় অস্ত্র, মাদক ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তিনটি মামলা দায়ের করেন। 

গুলশান বিভাগের ডিসি জানান, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে ১টি শটগান, দু’টি পিস্তল, শটগানের ৫৭ রাউন্ড গুলি ও ৭.৬৫ এমএম-এর ৫৩ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়। এছাড়াও ৫৮৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ১০ লাখেরও বেশি দেশি নগদ টাকা ও ৭ লাখের বেশি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়। তিনটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের মেয়াদ ২০১৭ সালে শেষ হয়ে গেছে।

আরআইএস 

আরও পড়ুন