• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০১৯, ১১:৫৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৩, ২০১৯, ১২:০১ পিএম

কোন পথে দেশের ক্রিকেট?

কোন পথে দেশের ক্রিকেট?

‘ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল/ গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল’। অনেকে ভাবছেন ক্রিকেটের সঙ্গে এই প্রবাদের সম্পর্ক কী? সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট তো একটা সময় ছোট বালুকণাই ছিল। এরপর ধীরে ধীরে অসংখ্য মানুষের বিন্দু বিন্দু ঘামে সেই ক্রিকেটের এখন বৃহৎ পরিসর, সঙ্গে টাকার ঝনঝনানি। সিংহভাগ ঘামই ঝরেছে ক্রিকেটারদের গা থেকে।

কেউ মনে করছেন- বিনা মেঘেই বজ্রপাত নেমে এসেছে দেশের ক্রিকেটে। ব্যাপারটা কি আসলেই তাই? খেলোয়াড়দের যে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, সেটা আস্তে আস্তে জমা পড়েছে অভিমানের ভাণ্ডারে। এরপরই তো এমন বিষ্ফোরণ।

১১ দফা দাবিতে এই ধর্মঘটের ডাক। তা-ও এমন এক সময়ে, যখন সামনেই বহু আকাঙ্ক্ষিত ভারত সফর। ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যার মাহাত্ম্য বুঝাতে একটি লাইনই যথেষ্ট, টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার প্রায় ১৭ বছর পর ভারতে একটিমাত্র টেস্ট খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এই সিরিজেই শুরু হবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, হবে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজও।

ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণের বাইরেও এই সিরিজের গুরুত্ব অনেক। কলকাতা টেস্টে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে এরইমধ্যে সম্মতি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, উপস্থিত থাকার কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের।

এমন গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের আগে যদি অনুশীলন থমকে যায়...। যদি সেটা না-ও হয়, তবুও এই যে দুদিন ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে প্রস্ততি নিচ্ছেন না, এর প্রভাবও তো পড়তে পারে ভারত সফরে।

কেবল জাতীয় দলই নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটে একমাত্র যে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট হয়, সেই এনসিএলও রয়েছে মাঠে না গড়ানোর শঙ্কায়। মোদ্দাকথা, একেবারেই স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের ক্রিকেট।

এ অবস্থায় সংবাদ সম্মেলনে এলেন দেশের শীর্ষ বোর্ড কর্মকর্তা। এসেই উগড়ে দিলেন নিজের মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা ক্ষোভ, অভিমান, আর রাগ। তার প্রথম আপত্তি ‘ক্রিকেটাররা কেন আমাদের কাছে না বলে মিডিয়াতে বললো?’

হ্যাঁ, তিনি সঠিক। ক্রিকেটারদের উচিত ছিল তাদের কাছেই যাওয়া। কিন্তু তিনিও তো একই ভুল করলেন। ক্রিকেটারদের মতো তিনিও মিডিয়াতেই বললেন। খেলোয়াড়দের ডাকলেন না, তাদের সঙ্গে বসলেন না, সেখানে উগড়ে দিলেন না নিজের অভিমান।

এরপর বললেন ‘ষড়যন্ত্র’। এই শব্দটি উচ্চারণের আগে তার ভাবনায় কী ছিল? সাকিব-তামিম-মুশফিকরা দেশের ক্রিকেট নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন? তাহলে প্রবাদ বাক্য মনে করাই শ্রেয় ‘মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি’।

পুরো সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমনভাবে কথা বললেন, যেভাবে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত সমস্যা, টাকা-পয়সা আর দাবি-দাওয়াগুলোর ব্যাখ্যা উপস্থাপন করলেন, তাতে মনে হলো ক্রিকেটারদের সব টাকাই কোনো ব্যক্তিগত কোষাগার থেকে এসেছে।

অথচ মনে রাখা জরুরি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) কর্মকর্তা কিংবা সভাপতির পেছনে এত এত মিডিয়া- এর সবকিছুই ক্রিকেটারদের কারণে। বিসিবির ব্যাংক একাউন্টে যেই কাড়ি কাড়ি টাকা, এর সবগুলোর উৎসই এই ক্রিকেটাররা। 

সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, একটা টেস্ট খেলুড়ে দেশের ক্রিকেটাররা প্রায় দুই দশক সাদা পোশাকে খেলার পর যেসব দাবি উপস্থাপন করেছেন, তা অনেক আগেই বোর্ডের পক্ষ থেকে বাস্তবায়ন করা উচিত ছিল। এর সবগুলোই ক্রিকেটারদের মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে।

বোর্ড সভাপতি সবচেয়ে মারাত্মক কথাটা বললেন সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে এসে। তা হলো- ‘ক্রিকেটাররা ক্যাম্পে গেলে যাবে, না গেলে নাই।’ এই কথার ভয়ংকর দিকটা অনুধাবন করা কঠিন কিছু নয়। তার এই কথার মানে হলো, ক্রিকেট স্থবির হয়ে থাকুক তাতে সভাপতির কিছু আসে-যায় না। এর মানে- সমাধান তো তিনি দিতে পারলেনই না, বরং বিষয়টিকে করে দিলেন আরও ঘোলাটে। নাম উল্লেখ না করে, যেভাবে ক্রিকেটারদের আক্রমণ করেছেন, তাতে ক্রিকেটাররাও নিশ্চয়ই আরেক দফা অভিমানী হওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

আর তা যদি হয়, তাহলে দেশের ক্রিকেট পড়ে যাবে শঙ্কায়। এই প্রতিবেদনের শিরোনামেই রয়েছে- কোন পথে দেশের ক্রিকেট? আসলেই কি এ প্রশ্নের জবাব আছে? বোর্ড ও ক্রিকেটারদের এমন বিপরীতমুখী অবস্থান এবং বোর্ড সভাপতির পক্ষ থেকে তা সমাধান না করে এমন উত্তপ্ত বাক্যবাণের পর সবার মনেই প্রশ্ন জাগছে ‘কোন পথে দেশের ক্রিকেট?’

 এমএইচবি / এফসি

আরও পড়ুন