• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০১৯, ০৩:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২১, ২০১৯, ০৩:৫০ পিএম

জেনে নিন গোলাপি বলের আদ্যোপান্ত 

জেনে নিন গোলাপি বলের আদ্যোপান্ত 
ইডেন টেস্টের আগে গোলাপি বল নিয়ে আলোচনা আর কৌতূহল যেন বেড়েই চলেছে। ফটো : সংগৃহীত

ইডেন গার্ডেনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দিবারাত্রির টেস্টে নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের উৎসাহ এখন তুঙ্গে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে টেস্টের প্রথম ৪ দিনের টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। 

ম্যাচের সময় যত ঘনিয়ে আসছে দিবারাত্রির টেস্টের জন্য ব্যবহৃত হওয়া গোলাপি বল নিয়ে আলোচনা আর কৌতূহল যেন বেড়েই চলেছে। কারণ বাংলাদেশ ও ভারত এই দুই দলের কেউই যে গোলাপি বলে এখনো খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেনি।

সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন- ম্যাচ চলাকালীন সময়ে কেমন হবে গোলাপি বলের আচরণ? নানা জনে নানা মত দিচ্ছেন বটে; যদিও আসলে কী ঘটতে ছলেছেশেই বিষয়ে কেউ এখনো নিশ্চিত হতে পারছে না।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, লাল ও কমলা বল দিনের বেলায় দেখার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক। কিন্তু রাতের বেলায় লাল ও কমলা বলের রং পাল্টে যায়। ফলে ব্যাটসম্যান বল দেখতে সমস্যায় পড়েন। সাদা বল আবার রাতে দেখার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক হলেও পরের দিকে সুইং করে না। সেই কারণে এখন একদিনের ক্রিকেটে দুই প্রান্ত থেকেই নতুন সাদা বল ব্যবহার করা হয়।  

গোলাপি বল এই দুই সমস্যারই সমাধান হয়ে উঠেছে। এটি রাতে দেখার ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। আবার টিকেও থাকে দীর্ঘক্ষণ। গোলাপি বল যাতে ঝকঝক করে তার জন্য হাতে বোনার পর এতে বিশেষ ধাতুর স্তর বা ‘ল্যাকার’ দেয়া হয়। বল শুকিয়ে যাওয়ার পর করা হয় পালিশ। তার জন্য যুক্ত হয় আলাদা স্তর।

পালিশের ফলে গোলাপি বলে আসা উজ্জলতা সুইংয়ে সাহায্য করে। আবার বিশেষ ধাতুর স্তর বা ‘ল্যাকার’ থাকার জন্য লাল বলের তুলনায় এটা বেশি সময় টিকে থাকে। অনেক দেরিতে পুরনো হয়। লাল ও সাদা বলের তুলনায় গোলাপি বলে এই বিশেষ ধাতুর স্তর বা ‘ল্যাকার’ মোটা। লাল ও সাদা বলের সঙ্গে গোলাপি বলের এখানেই পার্থক্য। 

বিশেষ ধাতুর স্তর বা ‘ল্যাকার’ কম বলে লাল বলের উজ্জলতা স্থায়ী হয় এক ঘণ্টা বা তার সামান্য বেশি। কিন্তু গোলাপি বলে তা ৩০ ওভার বা একটা পুরো সেশন স্থায়ী হয়। যার ফলে পেস বোলারদের সুবিধা হয়।

গোলাপি বলের গ্রাফিকস। ফটো : আনন্দবাজার পত্রিকা 

গোলাপি বল তৈরি করতে লাল বলের থেকে দ্বিগুণ সময় লাগে। একটা গোলাপি বল তৈরি করতে প্রয়োজন হয় ৭-৮ দিন। গোলাপি বল অন্য রঙয়ের চামড়া শুকিয়ে তার উপর রঙ করে তৈরি হয়। বিশেষ ধাতুর স্তর বা ‘ল্যাকার’ দিয়েও গোলাপি করা হয়। যেহেতু গোলাপি চামড়া পাওয়া যায় না, তাই বলে এইভাবে আনা হয় গোলাপি রঙ। বলের চূড়ান্ত সেলাইয়ের আগে একবার রঙ করা হয়। আবার একই রঙ করা হয় সেলাইয়ের পর। বাড়তি রঙ করার ফলে কখনো কখনো গোলাপি বলকে কমলার মতো লাগে। ইন্দোরে ভারতীয় দলের অনুশীলনে অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন বলের রঙ বুঝতে সমস্যায় পড়েছিলেন।

লাল বলের চেয়ে গোলাপি বলের সিম বা সেলাই আবার বেশি চওড়া। ফলে বাড়তি বাউন্স হয়। সুইংও পান পেসাররা। সিম ও অতিরিক্ত রঙয়ের স্তর থাকার ফলে লাল বলের চেয়ে গতি-বাউন্সে সমস্যায় পড়েন ব্যাটসম্যানরা। 

তবে গোলাপি বল পুরোটাই যে বোলারদের জন্য সহায়ক, এমনটা নয়। কারণ এই বলে রিভার্স সুইং করানো মুশকিল। ভারতীয় বোলাররা ১৫-২০ ওভারের পরই লাল বলে রিভার্স করাতে থাকেন। রিভার্স সুইং করার জন্য বলের একটা দিক ভারি রেখে অন্য দিকেটা রাফ করার চেষ্টা চলে। মোহাম্মদ শামি সেই বলেই বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। কিন্তু গোলাপি বলে তা করা কঠিন।

এখনও পর্যন্ত হওয়া ১১ দিবারাত্রির টেস্টে গোলাপি বলে পেসাররা নিয়েছেন ২৫৭ উইকেট এবং স্পিনাররা নিয়েছেন ৯৫ উইকেট। তবে ইডেনে খেলা হবে এসজির বানানো গোলাপি বলে। কোকাবুরা ও ডিউক বলের তুলনায় যার সিম একটু বেশি উঠে থাকা। ফলে ইডেনে স্পিনারদের জন্যেও বাড়তি সাহায্য থাকতে পারে। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম গোলাপি বলে টেস্ট তিনদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেই টেস্টে কোনো দলই তাদের দলীয় আড়াইশো রান পার করতে পারেনি। ইডেনে কী হবে, তা দেখার জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

সূত্র : আনন্দবাজার  

আরআইএস 

আরও পড়ুন