• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০১৯, ০৫:১৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২২, ২০১৯, ০৭:২০ পিএম

সন্ধ্যার আগেই অলআউট বাংলাদেশ

সন্ধ্যার আগেই অলআউট বাংলাদেশ
গোলাপি বলে ৫ বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন ইশান্ত শর্মা।

কাল রাতেও মনে হচ্ছিল এই অল্প সময়ে প্রস্তুতি শেষ করবেন কীভাবে আয়োজকেরা? তখনো কত কাজ বাকি। সকালে ইডেনে এসে চক্ষু ছানাবড়া! ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) প্রধান ফটকে দাঁড়াতেই বোঝা গেল, ইডেন প্রস্তুত বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক দিবারাত্রির টেস্ট আয়োজনে। স্টেডিয়ামের যেদিকেই চোখ যায় সব গোলাপি। খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমে ঢোকার পথটা গোলাপি, অতিথিদের বসার জায়গা গোলাপি, ঘণ্টার ব্যাকগ্রাউন্ড গোলাপি, স্কোরবোর্ড গোলাপি, গ্যালারিতে গোলাপি—ইডেনে আজ দুপুরটাই গোলাপি! 

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাঠে পরিচিত হলেন খেলোয়াড়দের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী, ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান। পরিচিতি পর্বে ছিলেন ২০০০ সালের নভেম্বরে অভিষেক টেস্ট খেলা বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরাও। পরিচিতি পর্ব শেষে ব্যান্ডে বেজে উঠল দুই দলের জাতীয় সঙ্গীত যেখানে বাংলাদেশ-ভারতের আশ্চর্য মেলবন্ধন। মেলবন্ধনের নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! জাতীয় সংগীতের পর ঘণ্টা বাজিয়ে টেস্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী ঘোষণা করলেন শেখ হাসিনা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

যে বলের খেলা নিয়ে এত আলোচনা, এত আয়োজন সেটির টস জিতেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। ইন্দোরে টস জিতে বাংলাদেশের ব্যাটিং করা নিয়ে অনেক কথা হলেও ইডেনে মুমিনুলের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কথা নয়। ভর দুপুরে শক্ত উইকেটে ফিল্ডিং নেওয়াটা কিছুতেই যৌক্তিক হতো না। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করার দায়িত্বটা ছিল ব্যাটসম্যানদের। সেই সিদ্ধান্তকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। দ্বিতীয় সেশনে সন্ধ্যা নামার আগেই মাত্র ১০৬ রানে অলআউট বাংলাদেশ। অলআউট হওয়ার আগে অবশ্য দিবারাত্রির টেস্টে সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জার হাত থেকে বেঁচে গেছে টাইগাররা। ২০১৮ সালের ২২ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ইডেন পার্কে দিবারাত্রির টেস্টে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৫৮ রানে অলআউট হয়েছিল ইংল্যান্ড। তাই রেকর্ডটা তাদের দখলেই থেকে যাচ্ছে।


টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নামা সফরকারীদের শুরুটা অবশ্য একেবারে খারাপ হয়নি। দুই চার হাঁকিয়ে তরুণ সাদমান ইসলাম অভয় দিয়েছিলেন যত গর্জে গোলাপি বল আসলে তত বর্ষে না। তবে খানিক বাদেই তা ভুল প্রমাণ করে ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার মিছিলটা শুরু করেন ধারবাহিকভাবে ব্যর্থ হওয়া ইমরুল কায়েস। দলের সংগ্রহটা যখন ১৫ রান, তখন ইশান্ত শর্মার বল এসে লাগে ইমরুলের পায়ে। শুরুতে আঙ্গুল তোলেননি আম্পায়ার, তবে ভারত রিভিউ নিলে সিদ্ধান্ত বদলে আউট হন তিনি। 

এরপর উইকেটে এসেই যেন ফিরে যাওয়ার তাড়া পেয়ে বসে অধিনায়ক মুমিনুল হককে। উমেশ যাদবের বলে রোহিত শর্মার বলে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর অধিনায়কের মতোই তিনিও ফেরেন কোনো রান না করে আউট হন মোহাম্মদ মিঠুন। ব্যাটসম্যানদের গোল্ডেন ডাকের হ্যাটট্রিক করে আউট হয়ে গেছেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। ২৯ রানের ইনিংস খেলে একা যেই প্রতিরোধটা গড়ছিলেন সাদমান, তাও শেষ হয়েছে উমেশ যাদবের বলে ক্যাচ দিয়ে তার সাজঘরে ফেরায়। 

সাদমানের পর মাত্র ৬ রান করে ঋদ্ধিমান সাহার গ্লাভসে ধরা পড়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামির বাউন্সারে মাথায় আঘাত পাওয়ার পর ‘সাপার ব্রেক’ এর আগে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন ২৪ রান করা লিটন দাস। মাথায় আঘাতের পরে ব্যাটিং চালিয়ে গেলেও মাঝে একবার লিটনকে ফিজিও মাঠে এসে তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যান। তবে প্রথম সেশন শেষের আগ মুহূর্তে লিটন শারীরিকভাবে আবারো সমস্যা অনুভব করলে তিনি বিষয়টি আম্পায়ারকে অবহিত করেন। এরপর আবারো ফিজিও মাঠে নামার পর তাকে পর্যবেক্ষণ করেন। তবে এবার আর লিটন খেলা চালিয়ে যেতে নিজের অক্ষমতার কথা জানান। 

সাপার ব্রেকের পর তাই নাঈম হাসানের সঙ্গে ব্যাট করতে নামেন এবাদত হোসেন। তার আউটের পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ক্রিজে আসেন মিরাজ, যিনি আসলে কনকাশন সাব হিসেবে এই টেস্টে মাঠে নামলেন। যদিও তাতে খুব একটা কাজের কাজ হয়নি। কারণ মিরাজ মাত্র ৮ রান করে ইশান্ত শর্মার শিকারে পরিণত হন। 

এরপর বাংলাদেশের হয়ে তৃতীয় ব্যক্তিগত সর্বাধিক ১৯ রান করা নাঈম হাসান ও আবু জায়েদ রাহী দ্রুত আউট হলে মাত্র ১০৬ রানেই বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়। ভারতের পক্ষে গোলাপি বলে বিধ্বংসী হয়ে ওঠা ইশান্ত শর্মা মাত্র ২২ রান দিয়ে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন। এছাড়া উমেশ যাদব ৩টি ও মোহাম্মদ শামি ২টি উইকেট লাভ করেন।

আরআইএস/এমএইউ