• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২০, ০২:৩৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১৩, ২০২০, ০২:৩৫ পিএম

আত্মনিবেদনের নিদর্শনে অনন্য মাশরাফী  

আত্মনিবেদনের নিদর্শনে অনন্য মাশরাফী  
বিপিএলের এলিমিনেটর ম্যাচে হাতে ১৪ সেলাই নিয়েই খেলছেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। ফটো : গাজী টিভি

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে বিপিএলের এলিমিনেটর ম্যাচে ঢাকা প্লাটুনের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা যখন টস করতে নামার পর মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন আমি ঠিক আছি, এমনটি শোনার পর সবার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাওয়ার মতোই অবস্থা হয়েছিল। হবেই না না কেন? তার বাঁ হাতে ১৪ সেলাইয়ের পর ব্যান্ডেজ করা হাতে এমন কথা তো কেউই তার মুখ থেকে আশাই করেননি।

মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার ডাক নাম যে কৌশিক, তা অনেকেই জানেন। কৌশিক শব্দের অর্থ যুদ্ধক্ষেত্রের যোদ্ধা। ক্রিকেট খেলাটাকে যেন নিজের জীবনের চরম এক যুদ্ধই মনে করেন নড়াইলের চিত্রা পাড়ে জন্ম নেয়া দুরন্তপনায় শৈশব কাটানো এই বীর সেনানী। দুই পায়ের হাঁটুতে ৭ বার অপারেশনের পরও তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে বলে ওঠেন, পা দুটো বেঈমানী করলেও ঘাড়ের রগটা বাঁকা করতে চ্যালেঞ্জ করবো নিজেকেই। 

যে মানুষটি নিজের শারীরিক ঝুঁকি পরোয়া না করে বল হাতে ছুটে চলেন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান; তিনি তো থামার পাত্র নন। হোক সেটা হাঁটুর ইনজুরি কিংবা হাতে থাকা ক্ষতে ডাক্তারের করে দেয়া ১৪ সেলাই। 

গত ১১ জানুয়ারি খুলনা টাইগার্সের ইনিংসের ১১তম ওভারে মেহেদী হাসানের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে সজোরে ব্যাট হাঁকিয়েছিলেন রাইলি রুশো। ৩০ গজ বৃত্তের ভেতর এক্সট্রা কভারে দাঁড়িয়ে থাকা মাশরাফী তার বাঁ দিকে ঝাপিয়ে পড়েন ক্যাচটি লুফে নিতে। কিন্তু বিধিবাম। বলের গতি রোধ করতে পারলেও বাঁ হাত থেকে ঝরতে থাকে রক্ত, ত্যাগ করেন মাঠ। 

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে এলিমিনেটরের ম্যাচটা মাশরাফী খেলতে চাইছেন- এমনটি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে সবাইকে স্তম্ভিতই করে দেন এনামুল হক বিজয়। যদিও বিসিবির চিকিৎসক ডাক্তার দেবাশিষ চৌধুরী জানান, মাশরাফীর হাতে সেলাই পড়েছে ১৪টি। পরের ম্যাচের আগে সময়ও খুব কম। তাই খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।  
 
মাশরাফীর হাতে ১৪ সেলাই করার পর ঢাকা প্লাটুনের টিম ম্যানেজমেন্ট গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, এই অবস্থায় তার পক্ষে কোনোভাবে ম্যাচ খেলা সম্ভব নয়। হাতের ইনজুরি সেরে উঠতে তার ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু মানুষটা যে মাশরাফী। 

হাস্যজ্জ্বল ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক টসের পর বলে ওঠেন, ‘আপনি যখন খেলতে নামবেন, তখন কি অবস্থা তা নিয়ে অভিযোগ করতে পারেন না এবং আজ আমি খেলতে নেমেছি, এটাই হলো শেষ কথা। সুতরাং আমি ঠিক আছি!’ এমন কথা তো একজন নেতার মুখেই মানায়। 

গতকালই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সংবাদ সম্মেলনে জানালেন, মাশরাফী নিজেই আর বোর্ডের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকতে চাইছেন না। তিনি চান নতুন কাউকে সুযোগ করে দিতে। এমন নিঃস্বার্থ মানসিকতাই যেন তাকে আরও মহিমান্বিত করে তুলেছে। 

২০১৫ বিশ্বকাপে ছেলের অসুস্থতার কথা জেনেও ছুটে আসেননি দেশে শুধুই লাল-সবুজের জার্সি গায়ে নিজের দায়িত্বের প্রতি সুবিচার করার জন্য। একই বছর ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েও প্রথম ম্যাচেই নেমেছিলেন মাঠে; হাত থেকে ঝরেছিল রক্ত। সে বছরের সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হলেন হাসপাতালে; ডাক্তার বলেছিলেন বিশ্রামে থাকতে। কিন্তু নড়াইল এক্সপ্রেস ডাক্তারকে প্রশ্ন করে বসলেন- জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেললে কি আমি মারা যাব? ডাক্তার উত্তর দিলেন না, আর তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে জানালেন তাহলে আমি খেলবো।

এমন অসংখ্য উদাহরণ মাশরাফীকে নিয়ে দেয়া যাবে। দলের প্রতি নিজের আত্মনিবেদনের নিদর্শনে তিনি যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাবেন বলেই জন্ম নিয়েছেন, তা আবারো তিনি প্রমাণ করলেন। পরিণতির পরোয়া না করে বিপিএলের এলিমিনেটর ম্যাচে নিজের খেলার জন্য ঢাকা প্লাটুনের টিম ম্যানেজমেন্টকে জোর করে রাজি করিয়েছেন যুদ্ধক্ষেত্রের সাহসী যোদ্ধা। যিনি নিজের বিদায় বেলায় ফুলের তোড়া নিতে চান না। তার কাছে যুদ্ধ তো উপভোগের মঞ্চ।

আরআইএস