• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০, ০৭:৫৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০, ০৮:৪৮ পিএম

এক ইনিংস, অনেক মুকুট ও মুশফিকের মাহাত্ম্য

এক ইনিংস, অনেক মুকুট ও মুশফিকের মাহাত্ম্য

উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। একহারা গড়ন। হালকা ফর্সা গায়ের রঙ। অনুশীলনে আসেন সবার আগে, যান সবার শেষে। খানিকটা আবেগপ্রবণ, অগ্রীম উদযাপনে তাই সইতে হয় ভর্ৎসনা। তাতে তার থোড়াই কেয়ার! জবাব দেন ব্যাটে আর মাঠে। রানের ফোয়ারা ছোটান, তার ব্যাটে ভর করে জিতে যায় বাংলাদেশ, উদযাপনেও মানেন না কোনো বাধা। 

কার কথা বলছি, পাঠক এতক্ষণে আঁচ করার কথা। মুশফিকুর রহিম। দুরন্ত তার ব্যাট, দুর্দান্ত সব শট। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান কে? এমন প্রশ্নের জবাবে মুশফিকুর রহিমের নাম বলতে যেটুকু দ্বিধা, তামিম ইকবালের জন্যই। তবে জার্সির রঙটা যখন সাদা হবে, তাতে মুশফিকের দিকেই ভারী হবে পাল্লাটা। 

কেন তার দিকে ভারী হবে? তামিম কি কম যান? যান না হয়তো। তবুও কিন্তু একটা জায়গায় ঠিকই তাকে ছাড়িয়েছেন মুশফিকুর রহিম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টের তৃতীয় দিনে মাথায় পরেছেন দেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ রানের মুকুট। শুধু কি তাই? কেবল ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে এই প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন মুশফিক, তাতেই থামেননি। ইনিংস লম্বা করেছেন, ছিলেন একেবারে শেষ বল পর্যন্ত। 

সবচেয়ে বড় যেটা করেছেন, ডাবল সেঞ্চুরি। জিম্বাবুইয়ান বাঁহাতি স্পিনার দলুভুর বলে স্কয়ার কাট করে সীমানা ছাড়া করে পূর্ণ করলেন তা। তাতে পূর্ণ হলো তৃতীয় দ্বিশতক। অথচ তার স্বদেশি কেউ এখনো করতে পারেননি দুটোও। তামিম ইকবাল আর সাকিব আল হাসান আটকে আছেন একটা ডাবল সেঞ্চুরিতে। আরও বেশ কয়েকটি রেকর্ডও এদিন নিজের করেছেন মুশফিক। 

তবে সেসব ছেড়ে আগে তার মাহাত্ম্য বোঝানোর প্রসঙ্গে আসি। যারা গত কিছুদিনের ক্রিকেটীয় ঘটনা নিয়ে তেমন একটা খোঁজ-খবর রাখেননি, তারা হয়তো শিরোনামে ‘মাহাত্ম’ শব্দটি দেখে খানিক অবাক হতে পারেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক যুগেরও বেশি সময় পার করার পর, দারুন সব ম্যাচ জেতানোর ইনিংস খেলার পর, সবচেয়ে বড় কথা সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যানের কেন এতদিন পর মাহাত্ম বোঝানোর প্রশ্ন আসবে। 

এসেছে, কারণ, ভারসাম্যের দোহাই দিয়ে খোদ প্রধান নির্বাচক ও কোচই প্রকাশ্য বলেছেন- এই টেস্টটা তার খেলার দরকার নেই। তাতে হয়তো মুশফিকের মনে খানিক জেদ চাপতে পারে, সেটা স্বাভাবিকও। কিন্তু মুখে কিছু বলতে হয়নি তাকে। তার পক্ষে ব্যাটই জানান দিয়েছে, দেশের ক্রিকেটে তার গুরুত্ব। 

দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যানটা যে তিনিই- সেটা আরও আরও একবার যেন কথা না বলেও শুনিয়ে দিলেন ‘ভারসম্য রক্ষাকারী’দের। ডাবল সেঞ্চুরি করে দিলেন ডায়নোসরের হুঙ্কার, অনেকেই বাঘ ভেবে ভুল করেছিলেন তা। সংবাদ সম্মেলনে এসে সেই ভুল ভেঙেছেন মুশফিক, বলেছেন এমন উদযাপন কেবল ছেলের জন্যই। 

সঙ্গে এ-ও বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত বছর কাটিয়ে আসার পর এখন তো ধারাবাহিক হতেই হয়। তিনি তা হনও। ভারসম্যের দোহাই দিয়ে তাকে আবার প্রমাণ করে আসতে বলা হয়। ৪৩৪ মিনিট উইকেটে থেকে ৩১৫ বলে ২৮ বাউন্ডারিতে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় আর শের-ই বাংলায় পরপর দুই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তো সেই প্রমাণ মুশফিক করেনও। সঙ্গে মুমিনুলকে সঙ্গী করে গড়েন ২২২ রানের জুটি, বাংলাদেশের পক্ষে যা ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রানের জুটি। এ নিয়ে সেরা দশ জুটির পাঁচটিতেই নাম লেখান মুশফিক। 

এমন টুকরো টুকরো অনেক রেকর্ড তো তার অসংখ্য। সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানের জাতীয় দলে খেলার আগে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দেয়ায় খানিক দুশ্চিন্তাও তৈরি হয় দেশের ক্রিকেট নিয়ে। মুশফিকরাই তার অবসান ঘটান, পারফর্ম করে। মুখ নয়, তাদের ভরসা তো ওই ব্যাটে। কেবল একটা সিরিজে না যাওয়ায়, ‌‘ভারসম্য রক্ষাকারীরা’ নিশ্চয়ই আর প্রমাণ চাইবেন না মুশফিকের কাছে! 

এমএইচবি

আরও পড়ুন