• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১১, ২০২১, ০২:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১১, ২০২১, ০২:০২ পিএম

এবার ক্রিকেটেও ‘বাঁশ’

এবার ক্রিকেটেও ‘বাঁশ’

‘ক্রিকেটে বাঁশ’ শিরোনামটি দেখে অনেকের চোখ কপালে উঠবে। বাঙালি এই ‘বাঁশ’ শব্দটির সঙ্গে জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। জন্মের পর বাঁশের চাঁছি দিয়ে নাড়ি কাটা হয়। তারপর বাঁশের তৈরি দোলনায় দোল খায় বাঙালি শিশুরা। মৃত্যুর পর বাঁশের খাটিয়ায় তুলে বাঙালি শেষযাত্রা করে। কবরে বাঁশ বিছিয়ে তারপর মাটি দেওয়া হয়। বাঙালির দোলনাও বাঁশের, সমাধিও বাঁশের। আর হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বেলায় শ্মশানে শবসমূহ দাহ করার কালেও বাঁশের ব্যবহার অপরিহার্য।

অপর দিকে বাঁশ নিয়ে রয়েছে বাঙালির নেতিবাচকতা। নানা বিষয়-আশয়ে বাঙালি ‘বাঁশ’ শব্দটিকে ব্যবহার করে। কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কাউকে তাচ্ছিল্য বা হেয় করতে কথায় কথায় বাঁশ ব্যবহার করে। লোকজন বলাবলি করে, ‘বাঁশ যা দেওয়ার  দিয়েছেন, মেহেরবানি করে আর বাঁশ দিয়েন না।’

বাংলাদেশের কুটিরশিল্পেও বাঁশের অবদান অনস্বীকার্য। গরুর গাড়ি, ঠেলাগাড়ি, গরিবের বাড়ি ও তাঁতের শাড়ি বানাতে বাঁশ ব্যতিরেকে উপায় নেই। নায়ের মাঝি যে নৌকাটা চালায়, সেটার অধিকাংশ উপকরণ—দাঁড়, বইঠা, মাস্তুল ও পাটাতন; আর কৃষক যে কৃষিকাজ করে, সেটারও অধিকাংশ উপকরণ—ফসল রক্ষার্থে বাঁশের বেড়া, কৃষকের মাথার মাথাল, বলদের ঘাড়ের জোয়াল, মই ও হাতের পাঁচন ইত্যাদি, সবই তো বাঁশের তৈরি। গ্রামের ঝগড়াঝাঁটি ও মারামারিতে বাঁশের লাঠিই তো প্রধান অবলম্বন। গ্রামাঞ্চলের খাল-নালা ও ছোট নদী অদ্যাবধি পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়ার প্রধান উপায় হচ্ছে বাঁশের সাঁকো। আর শহীদ তিতুমীর তো বাঁশের কেল্লা বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।

তবে এবার কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা জানাচ্ছে, উইলোর ব্যাট নয়, বরং বাঁশের তৈরি ব্যাটই ব্যাটসম্যানদের জন্য বেশি উপকারে আসবে। কেন? কারণ পরীক্ষায় দেখা গেছে বাঁশের তৈরি ব্যাট বেশি শক্ত, কাঠের ব্যাটের চেয়ে ভালো ‘সুইট স্পট’ দেয়, আর বলে বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে সাহায্য করে। সহজ ভাষায়, বল পেটাতে বেশি উপযোগী এই বাঁশের ব্যাট।

পরীক্ষাতে দেখা গেছে, বাঁশের তৈরি এই বিশেষ ব্যাট তুলনামূলকভাবে বেশি শক্ত। উইলোর চেয়ে তিন গুণ বেশি ধকল নেয় এবং অনেক বেশি ওজন নিতে পারে। তার মানে উইলোর মতো সমান শক্তিশালী ব্যাট বাঁশের ক্ষেত্রে আরও সরু হবে। এর ফলে ব্যাটসম্যানরা আরও জোরে ব্যাট ঘোরাতে পারবেন এবং আগের চেয়ে বেশি শক্তি বলে প্রয়োগ করতে পারবেন। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, উইলোর চেয়ে বাঁশের ব্যাট ২২ ভাগ বেশি দৃঢ়। ফলে ব্যাটের ছোঁয়া লাগার পর বল আরও দ্রুতগতিতে ছুটবে।

সে তুলনায় বাঁশ ভালো একটি উপাদান। সহজলভ্য, বিশ্বের সব প্রান্তেই পাওয়া যায়। কাঠের তুলনায় অনেক সস্তা, দ্রুত বাড়ে। বাঁশ কাটার পর আগের শিকড় থেকেই নতুন করে জন্মায় এবং মাত্র সাত বছরেই উপযুক্ত হয়। শাহের চোখে বিশ্বের সব প্রান্তে পাওয়া যায়, এটাই বাঁশের সবচেয়ে বড় গুণ, ‘চীন জাপান বা দক্ষিণ আমেরিকা—নতুন করে যারা ক্রিকেট খেলছে, সেখানেও বাঁশের প্রাচুর্য।’

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ব্যাটে বল লাগার পর ব্যাটসম্যানের হাতে যে ঝাঁকুনি লাগে, সেটা দুই ধরনের ব্যাটের ক্ষেত্রেই একই। ফলে বাঁশের ব্যাট দিয়ে খেলার কারণে বাড়তি ক্লান্তিতে ভুগতে হবে না ব্যাটসম্যানকে।